ভগ্নহৃদয়/ত্রয়োবিংশ সর্গ

ত্রয়োবিংশ সর্গ।

কবি।

মুরলা কোথায়?
সে বালা কোথায় গেল? কোথায়? কোথায়?
সন্ধ্যা হয়ে এল ওই, কিন্তুরে মুরলা কই?
খুঁজে খুঁজে ভ্রমি তারে হেথায় হোথায়?
সে মোর সন্ধ্যার দীপ, কোথা গেল বল্!
একটি আঁধার ঘরে একাকী সে জ্বলিত রে
সন্ধ্যার দীপের মত বিষণ্ন উজ্জ্বল।
সন্ধ্যা হোলে ধীরে ধীরে আসিতাম ঘরে ফিরে
শান্ত পদক্ষেপে অতি মৃদু গান গেয়ে,
সুদূর প্রান্তর হ’তে দেখিতাম চেয়ে—
মোর সে বিজন ঘরে শূন্য বাতায়ন পরে
একটি সন্ধ্যার দীপ আলো কোরে আছে,
আমারি—আমার তরে পথ চেয়ে আছে—
আমারেই স্নেহ ভরে ডাকিতেছে কাছে।
হা মুরলা, কোথা গেলি, মুরলা আমার?
ওই দেখ্ ক্রমশই বাড়িছে আঁধাব!
সমস্ত দিনের পরে কবি তোর এল ঘরে—
প্রশান্ত মুখানি কেন দেখিনা তোমার!

ওই ঘরের কাছে দীপটি জ্বালানো আছে,
আসন আমার ওই রেখেছিস্ পেতে—
আমি ভালবাসি বোলে যতনে আনিয়া তুলে
রজনীগন্ধার মালা দিয়েছিস্ গেঁথে!
কিন্তুরে দেখিনা কেন তোর মুখ খানি?
শত শত বার ক’রে ভ্রমিতেছি ঘরে ঘরে—
কোথাও বসিতে নারি—শান্তি নাহি মানি!
হুহু করি উঠিতেছে সন্ধ্যার বাতাস,
প্রতি ঘরে ভ্রমিতেছে করি হাহুতাশ!
কাঁপে দীপ শিখা তাহে, নিভিয়া যাইতে চাহে,
প্রাচীরে চমকি উঠে ছায়ার আঁধার।
সে মুখ দেখিনে কেন? সে স্বর শুনিনে কেন,
প্রাণের ভিতরে কেন করে হাহাকার?
জানি না হৃদয় খানা ফাটিয়া কেনরে
আঁখি হ’তে শতধারে অশ্রুবারি ঝরে?
কে যেন প্রাণের কাছে কি-জানি-কি বলিতেছে,
কি জানি কি ভাবিতেছি ভাবিয়া না পাই!
কোথা যাই—কোথা যাই—বল্ কোথা যাই!
মুরলারে—মুরলা, কোথায়?
কোথায় গেলিরে বালা? কোথায়? কোথায়?

চপলার প্রবেশ।


চপলা।—কবিগো, কোথায় গেল মুরলা আমায়? 
দারুণ মনের জ্বালা আর সহিল না বালা

বুঝি চ’লে গেল তাই ফিরিবে না আর!
বুঝি সে মুরলা মোর, সমস্ত হৃদয়
তোমারে সঁপিয়াছিল, আর কারে নয়,
বুঝিবা সে ভাল করে পেলে না আদর,
কঁদিয়া চলিয়া গেল দূর দেশান্তর।
চল কবি, মুরলারে খুঁজিবারে যাই,
আরেকটি বার যদি তার দেখা পাই,
ভাল ক’রে তারে তুমি করিও যতন,
কবি গো কহিও তারে স্নেহের বচন।
করুণ মুখানি তার বুকে তুলে নিও,
অশ্রুজল ধারা তার মুছাইয়া দিও!