ষোড়শ সর্গ।

ললিতা।

কে জানে নাথের কেন হোল গো এমন?
জানিনা কি ভাবিয়ে যান বিপাশার ধারে,
ললিতার চেয়ে ভাল বাসেন বিজন!
কভুবা আছেন যবে বিরলে বসিয়া,
আমি যদি যাই কাছে হাসিয়া হাসিয়া,
বিরক্তিতে ভুরু কেন আকুঞ্চিয়া উঠে যেন,
বিরক্তি জাগিয়া উঠে অধর খানিতে,
আপনি যেন গো তাহা নারেন জানিতে!
সহসা চমকি উঠি কি যেন হোয়েছে ত্রুটি
আমারে কাছেতে এনে ডাকিয়া বসান্,
কি কথা ভাবিতেছেন বুঝাইতে চান্,
না পারেন বুঝাইতে—সরমে আকুল চিতে
কি কথা বলিতে হবে ভাবিয়া না পান্!
কেন ত্যজি ললিতারে এলেন বিপাশা পারে
শতেক সহস্র তার কারণ দেখান্,
তা’ লাগি কোরেছি যেন কত অভিমান!
আপনি বলেন আসি, ভালবাসি, ভালবাসি,
সন্দেহ কোরেছি যেন প্রণয়ে তাঁহার,

তা’ লাগি ক’রেছি যেন কত তিরস্কার!
সহসা কাননে এলে আমারে দেখিতে পেলে
লুকাইয়া দ্রুত পদে পালান চকিতে,
মনে ভাবি আমি তাঁরে পাইনি দেখিতে!
কি করি! কি হবে মোর! বড় হয় ভয়!
লজ্জা কোরে ললিতারে হারালি প্রণয়!
লজ্জা কই, ললিতার লজ্জা কোথা আজ?
ভেঙ্গেছেও ললিত সে ভেঙ্গেছেত লাজ!
(ক্রুদ্ধ হইয়া) ধিক্ রে! এই কি লজ্জা ভাঙ্গিবার কাল? 
ভেঙ্গেছে সরম যবে ভেঙ্গেছে কপাল!
আর কিছু দিন আগে ঘটে নাই ভ্রম?
আর কিছু দিন আগে ভাঙ্গেনি শরম?
কাঁদিতে বসিলি আজ শিশুটির মত!
কিছু দিন আগে কেন ভাবিলিনে এত?
মিছা কি মনেরে তুই দিস্‌রে প্রবোধ?
দেখিনি তো হতে আর অধম অবোধ!
তুই যদি কষ্ট পাস্ দোষ দিব কার?
তোর মত অবোধের কষ্ট পুরস্কার!
যত কষ্ট আছে তুই সব কর ভোগ,
অশ্রুজলে তোর দিন অবসান হোক্!
নিজের চরণ দিয়া নিজ হৃদি বিদলিয়া
হৃদয়ের রক্তবিন্দু গোন্ দিন রাত!
হায়ায়ে সর্ব্বস্ব ধন কর্ অশ্রুপাত!
আগে কেন বুঝিলিনে, আগে কেন ভাবিলিনে,

কিছু দিন আগে লজ্জা নারিলি ভাঙ্গিতে!
মিছা হৃদয়েরে আজ চাস্ প্রবোধিতে!
যেমন করিলি কাজ, ফল ভোগ কর্ আজ,
পর হোক্ যেই জন ছিল আপনার,
তুই যদি কষ্ট পাস্ দোষ দিব কার?