ভানুসিংহের পত্রাবলী

শান্তিনিকেতন

 তোমার চিঠির জবাব দেবো ব’লে চিঠিখানি যত্নসহকারে রেখেছিলুম, কিন্তু কোথায় রেখেছিলুম সে কথা ভুলে যাওয়াতে এতদিন দেরি হ’য়ে গেল। আজ হঠাৎ খুঁজ্‌তেই ডেস্কের ভিতর হ’তে আপনিই বেরিয়ে পড়্‌লো।

 কবি-শেখরের কথা আমাকে জিজ্ঞাসা ক’রেচো। রাজকন্যার সঙ্গে নিশ্চয় তার বিয়ে হ’তো, কিন্তু তা’র পূর্ব্বেই সে মরে গিয়েছিলো। মরাটা তার অত্যন্ত ভুল হয়েছিলো, কিন্তু সে আর এখন শোধরাবার উপায় নেই। যে-খরচে রাজা তার বিয়ে দিত সেই খরচে খুব ধুম ক’রে তার অন্ত্যেষ্টি সৎকার হয়েছিলো।

 ক্ষুধিত পাষাণে ইরাণী বাঁদির কথা জান্‌বার জন্যে আমারও খুব ইচ্ছে আছে কিন্তু যে-লোকটা বল্‌তে পারতো আজ পর্যন্ত তা’র ঠিকানা পাওয়া গেল না।

 তোমার নিমন্ত্রণ আমি ভুল্‌ব না—হয়তো তোমাদের বাড়িতে একদিন যাবো, কিন্তু তা’র আগে তুমি যদি আর-কোনো বাড়িতে চলে যাও? সংসারে এই রকম ক’রেই গল্প ঠিক জায়গায় সম্পূর্ণ হয় না।

 এই দেখে না কেন, খুব শীঘ্রই তোমার চিঠির জবাব দেবো ব’লে ইচ্ছা ক’রেছিলুম, কিন্তু এমন হ’তে পার্‌তো তোমার চিঠি আমার ডেস্কের কোণেই লুকিয়ে থাক্‌তো, এবং কোনোদিনই তোমার ঠিকানা খুঁজে পেতুম না।

 যেদিন বড়ো হ’য়ে তুমি আমার সব বই প’ড়ে বুঝ্‌তে পার্‌বে তা’র আগেই তোমার নিমন্ত্রণ সেরে আস্‌তে চাই। কেননা যখন সব বুঝ্‌বে তখন হয়তো সব ভালো লাগ্‌বে না—তখন যে-ঘরে তোমার ভাঙা পুতুল থাকে সেই ঘরে রবিবাবুকে স্থান দেবে।

 ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। ইতি—৩রা ভাদ্র ১৩২৪।