কলিকাতা

 আমার একদিন ছিল যখন আমি ছোটো ছিলুম—তখন আমি ঘন ঘন এবং বড়ো বড়ো চিঠি লিখ্‌তুম। তুমি যদি তা’র আগে জন্মাতে, যদি অনর্থক এত দেরি না ক’র্‌তে, তা’হলে আমার চিঠির উত্তরের জন্য একদিনও সবুর ক’র্‌তে হতো না। আজ আর চিঠি লেখ্‌বার সময় পাই নে। তোমার বয়স আমার যখন ছিল তখন নিজের ইচ্ছেয় চিঠি লিখ্‌তুম, এখন অন্যের ইচ্ছেয় এত বেশি লিখ্‌তে হয় যে, নিজের ইচ্ছেটা মারাই গেল। তারপরে আবার ভয়ানক কুঁড়ে হ’য়ে গেছি। যত বেশি কাজ কর্‌তে হচ্চে ততই কুঁড়েমি আরো বেড়ে যাচ্চে। এখন লিখে যাওয়ার চেয়ে ব’কে যাওয়া ঢের বেশি সহজ মনে হয়। যদি তেমন সুবিধে হ’তো তো দেখিয়ে দিতুম বকুনিতে তুমি কখনো আমার সঙ্গে পেরে উঠ্‌তে না। সেটা তোমার ভালো লাগ্‌তো কিনা বল্‌তে পারিনে। কেননা তোমার যতগুলি পুতুল আছে তা’রা কেউ তোমার কথার জবাব করে না। তুমি যা বলো তাই তা’রা চুপ ক’রে শুনে যায়। আমার দ্বারা কিন্তু সেটা হবার জো নেই—অন্যের কথা শোনার চেয়ে অন্যকে কথা শোনানো আমার অভ্যেস হ’য়ে গেছে। আমার বড়ো মেয়ে যখন ছোটো ছিল তখন বকুনিতে তা’র সঙ্গে পারতুম না, কিন্তু এখন সে বড়ো হ’য়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। তারপর থেকে আমার সমকক্ষ কাউকে পাইনি। তোমাকে পরীক্ষা ক’রে দেখ্‌তে আমার খুব ইচ্ছে রইলো। একদিন হয়তো তোমাদের সহরে যাবো। তুমি লিখেচো আমাকে গাড়িতে ক’রে নিয়ে যাবে। কিন্তু আগে থাক্‌তে ব’লে রাখি আমাকে দেখ্‌তে নারদমুনির মতো—মস্ত বড়ো পাকা দাড়ি। ভয় ক’রো না, আমি তা’র মতোই ঝগড়াটেও বটে, কিন্তু ছোটো মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া করা আমার স্বভাব নয়। তোমার কাছে খুব ভালো মানুষটির মতো থাক্‌বার আমি খুব চেষ্টা কর্‌বো—এমন কি কবিশেখরের সঙ্গে রাজকন্যার বিয়েতে যদি তোমার মত থাকে আমি স্বয়ং তা’র ঘটকালি ক’রে দিতে রাজি আছি। ইতি—২১শে ভাদ্র, ১৩২৪।