ভানুসিংহের পত্রাবলী/১৫
১৫
কাল রাত্রি থেকে আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন—মাঝে মাঝে প্রবল জোরে বর্ষণ নেমে আস্চে—অম নি দেখ্তে দেখ্তে সমস্ত মাঠ জলে ছল্ ছল্ ক’রে উঠ্চে—থেকে থেকে অশান্ত বাতাস সোঁ সোঁ ক’রে হূহু ক’রে আমাদের শালবনের ডালপালাগুলোর মধ্যে আছ্ড়ে আছ্ড়ে লুটিয়ে প’ড়্চে—ঠিক যেন আকাশের অনেক দিনের একটা চাপা বেদনা কিছুতেই আর চাপা থাক্চে না। ওদিকে দিগন্তের কোণে কোণে রাগীরকমের ভ্রূকুটি দেখা দিয়েচে—আর তা’র মধ্য দিয়ে একটা ফ্যাকাশে আলো দারুণ হাসির মতো। সবশুদ্ধ জলে-স্থলে একটা ক্ষ্যাপাটে রকমের ভাব। মনে হচ্চে যেন ছুটন্ত উচ্চৈশ্রবার উপরে চ’ড়ে ইন্দ্রদেব একটা ঘুর্ণীঝড়ের চক্র পৃথিবীর দিকে ছুঁড়ে মেরেচেন। বাতাসের আর্ত্তনাদ আর তা’র বেগ ক্রমেই বেড়ে উঠ্চে—একটা রীতিমতো ঝড়ের আয়োজন ব’লেই বোধ হ’চ্চে। আমার এই দোতালার কোণটি ঝড়ের পক্ষে খুব-যে ভালো আশ্রয়—তা নয়। আধুনিক কালের যুদ্ধক্ষেত্রের trench-এর মতো যথেষ্ট প্রকাশ্যও নয়, যথেষ্ট প্রচ্ছন্নও নয়— ভালো ক’রে ঝড়টা দেখতে পাচ্চিনে, অথচ ঝড়ের ঝাপট থেকে ভালো ক’রে রক্ষাও পাচ্চিনে। সিঁড়ির সাম্নের দরজাটা বন্ধ ক’র্তে হ’য়েচে, ঘরের দরজাও সব বন্ধ—অন্ধকার, কোথা থাকে বেঁকেচুরে একটু বৃষ্টির ঝাপটও আস্চে। রুদ্রদেবের তাণ্ডবনৃত্যের এই ডমরু-ধ্বনির মধ্যে ব’সে তোমাকে চিঠি লিখ্চি।
সেদিন তুমি আমাকে লিখেছিলে-যে, তুমি আমার অনেক নতুন নতুন নাম ঠিক ক’রে রেখেচো। ক্রমে একে একে বোধ হয় শুন্তে পাবো, কিন্তু আমার আসল নামটা যেন একেবারে চাপা না প’ড়ে যায়,—কেন না,ঐ নামটা নিয়ে এতদিন এক রকম কাজ চালিয়ে এসেচি। তা ছাড়া ওর একটা মস্ত সুবিধা এই-যে, কবির সঙ্গে রবির একটা মিল আছে;—এর পরে যারা আমার নামে কবিতা লিখ্বে, তাদের অনেকটা কষ্ট বাঁচ্বে। ইতি—২০শে ভাদ্র, ১৩২৫।