ভানুসিংহের পত্রাবলী/৩৭
৩৭
আমার জ্যোতিষ্ক-মিতাটি আকাশ নইলে বিচরণ ক’র্তে পারেন না—তাঁরি নামধারী আমি অবকাশ নইলে টিক্তে পারিনে। আমার যদি কোনো আলো থাকে তবে সেই আলো প্রচুর অবকাশের মধ্যেই প্রকাশ পায়; সেই জন্যেই আমি ছুটির দরবার করি— কেন না, ছুটিতেই আমার যথার্থ কাজ। তাই লোকসমাগম দেখে আমি আশ্রম ছেড়ে দৌড় দিয়েচি। অথচ এই সময়ই উজ্জ্বল সূর্য্যের আলোয়, রঙীন মেঘের ঘটায়, ঘাসে ঘাসে মেঠো ফুলের প্রাচুর্য্যে, হাওয়ায় হাওয়ায় দিকে দিকে কাশ-মঞ্জরীর উল্লাস-হাস্য-হিল্লোলে আশ্রম খুব রমণীয় হ’য়ে উঠেছিলো। ষ্টেশনের দিকে যখন গাড়ি চ’লেছিলো তখন পিছনের দিকে মন টান্ছিলো। কিন্তু ষ্টেশনে ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজ্লো আর রেলগাড়িটা আমাদের আশ্রমকে যেন টিট্কারী দিয়ে পোঁ ক’রে বাঁশি বাজিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে চ’লে এলো। রাত এগারোটায় হাওড়ায় উপস্থিত। এসে শুনি, হাওড়ার ব্রিজ্ খুলে দিয়েছে। নৌকায় গঙ্গা পার হ’তে হবে। মালপত্র ঘাড়ে নিয়ে ঘাটে গেলেম। সবে জোয়ার এসেচে—ডিঙ্গি নৌকো ঘাট থেকে একটু তফাতে। একটা মাল্লা এসে আমাকে আড়কোলা ক’রে তুলে নিয়ে চ’ল্লো। নৌকোর কাছাকাছি এসে আমাকে সুদ্ধ ঝপাস্ ক’রে প’ড়ে গেল। আমার সেই ঝোলা-কাপড় নিয়ে সেইখানে জলে কাদায় লুটোপুটি ব্যাপার। গঙ্গামৃত্তিকায় লিপ্ত এবং গঙ্গাজলে অভিষিক্ত হ’য়ে নিশীথ রাত্রে বাড়ি এসে পৌঁচানো গেল। গঙ্গাতীরে বাস তবু ইচ্ছে ক’রে বহুকাল গঙ্গাস্নান করিনি—ভীষ্ম-জননী ভাগীরথী সেই রাত্রে তা’র শোধ তুল্লেন। আজ বিকেলের গাড়িতে শিলং-পাহাড় যাত্রা ক’র্বো; আশা করি এবারকার যাত্রাটা গতবারের গঙ্গাযাত্রার মতো হবে না। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হ’য়েচে আর ঘন মেঘের আবরণে দিগঙ্গনার মুখ অবগুণ্ঠিত। পূর্ণিমা আশ্বিন, ১৩২৬।