ভানুসিংহের পত্রাবলী/৪৮
৪৮
ক’ল্কাতা সহরটা আমি মোটেই পছন্দ করিনে—মনে হয় যেন ইঁট-কাঠের একটা মস্ত জন্তু আমাকে একেবারে গিলে ফেলেচে। তা’র উপরে আবার আকাশ মেঘে লেপা, রাত্তির থেকে টিপ্টিপ্ করে বৃষ্টি প’ড়্চে। শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন বৃষ্টি নামে তখন তা’র ছায়ায় আকাশের আলো করুণ হ’য়ে আসে, ঘাসে ঘাসে পুলক লাগে, গাছগুলি যেন কথা কইতে চায়, আমার মনের মধ্যে গান জেগে ওঠে আর তা’র সুর গিয়ে পৌঁছোয় দিনুর ঘরে। আর এখানে নববর্ষা বাড়ির ছাদে ঠোকর খেতে খেতে খোঁড়া হ’য়ে পড়ে,— কোথায় তা’র নৃত্য, কোথায় তা’র গান, কোথায় তা’র সবুজ রঙের উত্তরীয়, কোথায় তা’র পূবে বাতাসে উড়ে-পড়া জটাজাল।
কথা হ’চ্চে, এবার শ্রাবণ মাসে আর বছরের মতো ক’ল্কাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে। কিন্তু যে-গান শান্তিনিকেতনের মাঠে তৈরি সে-গান কি ক’ল্কাতা সহরের হাটে জ’ম্বে? এখানে অনুরোধে প’ড়ে কখনো কখনো আমার নতুন বর্ষার গান গাইতে হ’য়েচে। কিন্তু এখানকার বৈঠকখানায় সেই গানের সুর ঠিক মতো বাজে না। তোমাদের ওখানে এতদিনে বোধ হয় বর্ষা নেমেচে, অতএব তোমার নতুন শেখা বর্ষার গান কখনো কখনো গুন গুন্ স্বরে গাইতে পার্বে, কখনো বা এস্রাজে বাজিয়ে তুল্বে। তুমি যাওয়ার পর আরো কিছু কিছু নতুন গান আমার সেই খাতায় জ’মে উঠেচে, ক’ল্কাতায় না এলে আরো জ’ম্তো। এদিকে দিনুবাবুও দাঁত তোলাবার জন্যে দু-তিন দিন হ’লো ক’ল্কাতায় এসেচেন;—আষাঢ় মাসের বর্ষাকে এ সহরে যেমন মানায় না, দিনুবাবুকেও তেমনি। আজ সকালেই সে পালাবে স্থির ক’রেচে।—ইতি ২৯ আষাঢ়, ১৩২৯।