ভারতে অলিকসন্দর/প্রথম ভাগ/চতুর্থ অধ্যায়
চতুর্থ অধ্যায়।
ফিলিপের পঞ্চত্ব প্রাপ্তির পর, সকলের দৃষ্টি অলিকসন্দরের উপর পতিত হইল। মাসিদুনিয়ার সিংহাসন লাভের আশা, দুই একজন হৃদয়ে পোষণ করিলেও, অলিকসন্দরের কমনীয় মুখশ্রী ও অসাধারণ শক্তির কাছে, তাহাদের আশা ফলবতী হয় নাই। প্রাচীন লেখকেরা বলেন, অলিকসন্দরের মুখশ্রী অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ছিল—চক্ষুদ্বয় বৃহৎ ও উজ্জ্বল, ইহাতেই যেন তাঁহার সমস্ত শক্তি নিহিত ছিল। মুখ ও চিবুক, লক্ষ্য করিবার বিষয়। সে কালের লেখকেরা অলিকসন্দরকে পশুভাব বিবর্জ্জিত বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন, কিন্তু মুখ ও চিবুক একটু ভাল করিয়া দেখিলে সে কথার উপর সন্দেহ উপস্থিত হইয়া থাকে। সত্য বটে জীবনের প্রথম অবস্থায় অলিকসন্দর, ইন্দ্রিয় জয় করিয়াছিলেন, এবং ইহারই ফলে তিনি অসাধারণ বিজয় লাভে সমর্থ হইয়াছিলেন, তার পর কিন্তু অজিতেন্দ্রিয়তার সহিত তাঁহার অধঃপতনের আরম্ভ হইয়াছিল। অলিকসন্দর স্বভাবতঃ একটু বাম দিকে মাতা হেলাইয়া রথিতেন—তাঁহার শরীর ও নিশ্বাস হইতে একটু সুমধুর গন্ধ বাহির হইত।
অলিকসন্দরের চরিত্রে একটি বিষয় বিশেষরূপে বিকাশপ্রাপ্ত হইয়াছে, তাহা তাঁহার “আমিত্ব” এই আমিত্বের প্রসার তাঁহাতে এরূপ বৃদ্ধি পাইয়াছিল যে, তাহা সাধারণতঃ মনুষ্য মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায় না। প্রথম, ফিলিপের ন্যায় অসাধারণ ব্যক্তির পুত্ত্র হওয়াতেও তাঁহার এই আমিত্বের বৃদ্ধির পক্ষে অনেকটা সাহায্য করিরাছে, দ্বিতীয় এরিষ্টটেলের ন্যায় ব্যক্তির কাছে শিক্ষা লাভে ও তাঁহার আমিত্ব পরিববর্দ্ধিত হইয়াছে। তৃতীয় অল্প বয়সে স্বাধীনভাবে কার্য্য করিয়া সফলতার সহিত তাঁহার আমিত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইয়াছে, চতুর্থ মোসাহেবের দল ইহারা ধনবানদের যেরূপ মাথা বিগড়াইয়া দেয়, সেরূপ আর কেহ দিতে পারে না। অলিকসন্দরের কাছে এইরূপ মোসাহেবের দল বড় কম যোটে নাই। এই সকল কারণে অলিকসন্দরের আমিত্বের প্রসার ও অদ্ভুতভাবে বর্দ্ধিত হইয়াছিল। আমিত্বের প্রসারের সহিত তাঁহার পারস্যজয়ের বাসনা হৃদয়ে বদ্ধ মূল হয়, পারস্যপতিকে জয় করিয়া তাঁহার ভারত জয়ের আশা অঙ্কুরিত হয়। এইরূপে তাঁহার আমিত্বের সম্প্রসারণ হইয়াছিল।
অলিকসন্দর কুড়ি বৎসর বয়ক্রমের সময় পৈত্রিক সিংহাসনে উপবেশন করেন। তিনি তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ হৃদয়গ্রাহী বাগ্মীতায় এসিয়া বিজয়ের জন্য বদ্ধপরিকর সৈন্যমণ্ডলী ও উপস্থিত সম্ভ্রান্ত জনগণকে তাঁহার পক্ষপাতী করেন। সকলে বুঝিল মাসিদন রাজ্যে কেবল নামেই রাজ পরিবর্ত্তণ হইয়াছে, কোনরূপ নীতির পরিবর্ত্তণ হয় নাই—চ্যারোনিয়া বিজয়ী সৈন্যের মধ্যে কেবল মাত্র একজন লোকের অভাব হইয়াছে, সে অভাব তাঁহা অপেক্ষা যোগ্যতর ব্যক্তি দ্বারা পরিপুরিত হইয়াছে, সুতরাং ফিলিপের অভাবজনিত উদ্বেগ কাহাকেও অবসাদ গ্রস্ত করিতে সমর্থ হয় নাই।
অলিকসন্দর, নিরুপদ্রবে সিংহাসন অধিকার করিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার রাজ্যের চতুঃপার্শ্বে ঘোরতর অশান্তির চিহ্ণ সকল লক্ষিত হইতে লাগিল। ফিলিপ যে সকল অসভ্যজাতি পরাজয় করিয়াছিলেন, তাহারা আলিকসন্দরের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিল। থেবপ্রমুখ গ্রীসবাসীরা ও ফিলিপের সন্ধি বন্ধন ছিন্ন করিয়া স্বতন্ত্রতা অবলম্বন করিবার উদ্যাগ করিতে লাগিল। এই সঙ্কট সময়ে অনেকে অলিকসন্দরকে মৃদুতা অবলম্বন করিতে পরামর্শ প্রদান করেন। তাঁহারা, পার্বত্য অসভ্যবাসীকে মিষ্ট কথায় তুষ্ট, এবং পরাধীনতায় অনভ্যস্ত গ্রীক—বাসীর প্রতি দণ্ড প্রয়োগ না করিয়া তাহাদিগকে সাম বা দানের দ্বারা বশীভূত করিতে অনুরোধ করেন। অলিকসন্দর বুঝিলেন, এসময় মৃদুতা অবলম্বন করিলে শত্রুগণ প্রবল হইবে এবং তিনিও মিত্রগণ মধ্যে অকর্ম্মণ্য বলিয়া খ্যাতি লাভ করিবেন। তাই তিনি মৃদুতা পরিত্যাগ করিয়া বজ্রের ন্যায়, শব্দ শ্রুতিগোচর হইবার পূর্ব্বেই তিনি শত্রুগণ মধ্যে আপতিত হইয়া তাহাদিগকে সমূলে ধ্বংস করিয়া ছিলেন। অলিকসন্দর যে সময় ড্যানুবের তটে অসাধারণ শূরতা ও ধীরতা দেখাইয়া শত্রু ও মিত্র উভয়কে মোহিত করিতে ছিলেন, সে সময় থেবনগরে এরূপ জনরব প্রচারিত হয় যে, অলিকসন্দর শত্রুর সহিত যুদ্ধকালে মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছেন। এই জনরবের সহিত মাসিদনের শত্রুগণ, অলিকসন্দরের অধীনতা পাশ ছিন্ন করিয়া স্বাতন্ত্রতা লাভের জন্য অস্ত্রধারণ করে।
থেবের অস্ত্রধারণের কথা অবগত হইলে, অলিকসন্দর ড্যানুব প্রদেশে অবস্থান করা যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করিলেন না। তিনি জানিতেন, যুদ্ধকালে গ্রীসের কোন রাজশক্তি তাঁহার পক্ষ অবলম্বন করিবেনা—স্পার্টান্রা প্রকাশ্যভাবেই তাঁহার প্রতিকূল আচরণ করিয়া থাকে—এথেনীয়দের মনের ভাব ও বড় ভাল নহে, তাহাদের প্রধান বক্তা তাঁহাকে “বালক” ছোঁড়া” ইত্যাদি অবজ্ঞাসূচক শব্দে অভিহিত করিতেছে। এরূপ অবস্থায় তিনি আর ড্যানুব প্রদেশে অবস্থান করা যুক্তি যুক্ত বিবেচনা করিলেন না। যাহাতে গ্রীকগণ একত্র মিলিত হইয়া তাঁহার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিতে না পারে, সেই জন্য তিনি দ্রুতগতিতে পার্ব্বত্য পথ অবলম্বন করিয়া ৬।৭ দিনের মধ্যে থেবের ৩।৩॥০ ক্রোশ দূরে বায়ুকোনে একটি নগরে সমস্ত সৈন্য সহ উপস্থিত হন। থেরবাসীরা সৈন্যসহ অলিকসন্দরের আগমন কথা অবগত হইলে, কেহ ইহা বিশ্বাস করিল না, কেহ মনে করিল এণ্টিপিটার আসিয়াছে, কেহ বলিল আলিকসন্দর বটে কিন্তু এ স্বতন্ত্র আলিকসন্দর বলিয়া উপেক্ষা করিতে লাগিল। আলিকসন্দর পর দিবস থেবের উপকণ্ঠে সৈন্য সহ উপস্থিত হইলেন। বিদ্রোহের প্রধান নায়ক ফোনিক্স ও প্রোথাইটিস নামক ব্যক্তিদ্বয়কে তাঁহার হস্তে অর্পণ করিলে পর সমস্ত বিষয় মিটমাট হইবে, ইহা তিনি থেববাসীকে অবগত করাইলেন। প্রত্যুত্তরে থেববাসী এণ্টিপিটার ও ফিলটকে, তাঁহাদের হস্তে প্রদান করিতে কহিয়া, গ্রীসের স্বাধীনতা সংরক্ষণ জন্য ঢাক বাজাইয়া সকলকে অহ্বান করেন। এই রূপে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছিল। কেহ কেহ কহেন অলিকসন্দর কূটনীতির অনুসরণ করিয়া, ছলনা করিয়া থেব আক্রমণ করেন।
থেরবাসী প্রাণের আশা পরিত্যাগ করিয়া ঘোরতর বিক্রমে যুদ্ধ করিল, কিন্তু অলিকসন্দরের যুদ্ধনিপুণ সৈন্যগণের কাছে তাহাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হইল। থেব সমূলে ধ্বংস প্রাপ্ত হইল, ইহার বাড়ি ঘরের আর কোন চিহ্ণ রহিল না। অলিকসন্দরের ক্রোধ বহ্ণিতে ছয় হাজার, কেহ বলেন দশ হাঁজার, যোদ্ধা ভস্মীভূত এবং তিরিশ হাজার বন্দী হইল। পরের অধীনতা স্বীকার করে নাই বলিয়া থেববাসী বন্দী ও নিগৃহীত হইল, এবং এই সকল নর হত্যা করিয়া অলিকসন্দর মহাবীর বলিয়া জগতে পরিচিত হইলেন। অলিকসন্দরের সৈন্যগণের অত্যাচার ও অবিচারের সীমা ছিলনা। একজন বীরাঙ্গনার কাছে অলিকসন্দরের সৈনিক কিরূপ ভাবে লাঞ্ছিত হইয়াছিল তাহা আমরা এখানে উল্লেখ করিব। অলিকসন্দারের সৈন্যগণ একজন থেবের ধনবতী রমণীর যথা সর্ব্বস্ব ধন রত্ন লুণ্ঠন করে, অবশেষে সেই সেনাদলের সেনানায়ক তাহার সতীত্ব রত্ন নষ্ট করিয়া, তাহার পার্থিব ধনরত্ন কোথায় আছে তাহা অবগত হইবার জন্য পীড়ন করে। নগর অধিকারের পূর্ব্বে বাগানের কূপের ভিতর তিনি তাঁহার বহুমূল্য ধন রত্ন নিক্ষেপ করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া সেনানী তাঁহাকে কূপ দেখাইবার জন্য আদেশ করেন। কূপ দেখাইলে সেনানী স্বয়ং তাহার ভিতর অবতরণ করিলে রমনী প্রস্তর নিক্ষেপ করিরা তাহাকে হত্যা করে। এই দৃশ্য সৈন্যগণ দূর হইতে দেখিতে পাইলে, সেই রমনীকে দৃঢ়রূপে বন্ধন করিয়া অলিকসন্দরের কাছে লইয়া যায়। অলিকসন্দর রমণীর আকার দেখিয়া তাঁহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। প্রত্যুত্তরে রমনী বলিলেন “যিনি গ্রীসের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সৈন্যসকল পরিচালনা করিয়া চ্যারোনিয়া ক্ষেত্রে ফিলিপের সহিত যুদ্ধ করিয়া সমর শয্যা গ্রহণ করিয়াছেন, আমি সেই থিওজিনিসের ভগিনী”—অলিকসন্দর রমণীর ব্যবহারও প্রত্যুত্তরে প্রসন্ন হইয়া, প্রশংসা করিয়া পুত্রগণ সহ তাঁহাকে মুক্তি প্রদান করেন। এরূপ কথিত হয় অলিকসন্দর কবিবর পিণ্ডারের সন্ততিগণের প্রতি, আর যাহারা তাঁহার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁহাদের প্রতি অনুকম্পা দেখাইয়াছিলেন। যে নগরের তিরিশ হাজার অধিবাসী কৃতদাসরূপে বিক্রীত হইয়া, অলিকসন্দরের কোষাগারে ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা নীত হইয়াছিল, সে নগরের দু দশ জন লোক কেমন করিয়া বিজেতার নিকট সম্মান গ্রহণ করিতে অগ্রসর হইয়াছিল, তাহা বুঝা বুদ্ধির আগোচর। তাহাদিগের মধ্যে কাহারও যদি কিঞ্চিৎমাত্র মনুষ্যত্ব বর্ত্তমান থাকিত তাহা হইলে তিনি, অলিকসন্দরের সম্মান ঘৃণার সহিত পরিত্যাগ করিতেন। স্বার্থপর লোক সকল দেশে ও সকল সময়েই দেখিতে পাওয়া যায়। থেব,দিওদিনিস ও হারকিউলিসের জন্মভূমি হইলেও স্বার্থান্ধ কাপুরুষকেও প্রসব করিয়াছিল।
যাহারা থেবকে, অলিকসন্দরের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়াছিল, ইহার ধ্বংস সংবাদ শুনিয়া তাহাদের বুদ্ধি ভ্রংশ হইয়া পড়িল—তাহাদিগকে না পাছে থেবের গতি প্রাপ্ত হইতে হয় এই চিন্তায় তাহারা আকুলিত হইয়া পড়িল। ইহার সহিত তাহাদের মাসিদন বিদ্বেষ ও চাপা পড়িয়া গেল। রাজভক্ত দলের আবির্ভাব হইল যাহারা (আর্কেডিয়ানরা) ইতি পূর্ব্বে থেবের সাহায্যের জন্য সৈন্য পাঠাইতেছিল, তাহারাই এক্ষণে তাহাদের সাহায্যকারীদের উপর মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা প্রচার করিল! অপরদিকে এথেন্সবাসীরা অলিকসন্দরের কুশল কামনা করিয়া তাঁহার কাছে দূত প্রেরণ করিল। অলিকসন্দর, সকল গোলযোগের মূল কারণ, ডিমস্থিনিস আদি বক্তাগণকে তাঁহার হস্তে প্রদান করিবার জন্য আদেশ পত্র প্রেরণ করেন। এথিনিয়নদের অনেক অনুরোধে তিনি তাঁহাদিগকে ক্ষমা করিয়াছিলেন।
২১ বৎসরের এক জন বালকের প্রতাপে গ্রীসবাসী অস্থির হইয়াছিল। অযথা তাহার স্তব স্তুতি করিতে তাহারা কিছুমাত্র ইতস্ততঃ করিল না। অলিকসন্দর ক্ষিপ্রগতিতে শত্রু সকল আক্রমণ ও তাহাদিগকে বিপর্য্যস্ত করিয়াছিলেন বলিয়া, তিনি তাঁহার শত্রু ও মিত্র সকলের কাছেই অসাধারণ বলিয়া প্রতিভাত হইলেন। তিনি শত্রুকে বিচার করিবার সময় না দিয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়াছিলেন বলিয়াই এরূপ লোকোত্তর বিজয় লাভে সমর্থ হইয়াছিলেন। শীঘ্রগতি ও অকস্মাৎ আক্রমণ যুদ্ধে জয় লাভের মূলমন্ত্র। অলিকসন্দর এই মূল মন্ত্রে সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন, তাই বিজয় তাঁহাকে ভজনা করিয়াছিল।
অলিকসন্দারের বাসনা সফল হইল। থেবকে উগ্র দণ্ড প্রদান করায় সমস্ত গ্রীস ভয়ে তাঁহাকে ভজনা করিল। আবার করিন্থে মহাসভার অধিবেশন হইল, এ সভায়, একুশ বৎসরের অলিকসন্দর সমস্ত গ্রীসের সেনানী-প্রধান পদে বরিত হইয়া সকলকে পারস্য পতির বিরুদ্ধে লইয়া যাইতে প্রতিশ্রুত হইলেন। এই সভায় গ্রীসের প্রত্যেক রাজ্য হইতে প্রধান প্রধান ব্যক্তি ব্যতীত প্রসিদ্ধ দার্শনিক পণ্ডিত, এবং রাজনীতিকগণ ও আগমন করিয়া অলিকসন্দরকে সম্মাননা করেন। স্বার্থের তাড়নায় এই সকল ব্যক্তি, যে সময় অলিকসন্দরের কীর্ত্তি কথা মুক্তকণ্ঠে কীর্ত্তণ করিতে ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে আর একজন তত্ত্বদর্শী মহাপুরুষ করিন্থের উপকণ্ঠে অবস্থান করিয়া নিজের চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। এই সাধু পুরুষের নাম ডায়োজিনিস। অলিকসন্দার মনে করিয়া ছিলেন, ডায়োজিনিস ও তাঁহার কাছে উপস্থিত হইয়া তাঁহার সম্বর্দ্ধনা করিবেন। কিন্তু তাহা হইল না—গুণগ্রাহী অলিকসন্দরই তাঁহার কাছে গমন করিয়া নিজের সম্মান বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। অলিসন্দর যে সময় ডায়োজিনিসের কাছে উপস্থিত হন, সে সময় তিনি রোদ পোহাইতে ছিলেন। অলিকসন্দর বিশেষ শ্রদ্ধার সহিত আলাপ করিয়া, তাঁহার কোন অভাব দূর করিবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। নিস্পৃহ ডায়োজিনিস কেবল মাত্র সূর্য্যের আড়াল ছাড়াইয়া দাঁড়াইতে অনুরোধ করেন। সাধুর ব্যবহার দেখিয়া যে সময় অলিকসন্দরের মোসাহেবেরা তাঁহাকে নিতান্ত নির্ব্বোধ বিবেচনা করিতেছিলেন, সে সময় সাধুর ব্যবহারে সম্মোহিত অলিকসন্দর বলিয়াছিলেন। “অলিকসন্দর না হইলে আমার ডাওজিনিস হইতে সাধ হয়।” স্পৃহাশূন্যের কাছে জগতের ঐশ্বর্য্য তৃণের ন্যায় বিবেচিত হইয়া থাকে,সুতরাং ডায়োজিনিসের কাছে অলিকসন্দারের অনুগ্রহ অকিঞ্চিৎকর হইবে ইহা কিছু আশ্চর্য্যের কথা নহে। ভোগসর্ব্বস্ব ইয়ুরোপীয়দের কাছে এই ঘটনা আশ্চর্য্যজনক হইলেও অধঃপতিত ভারতবাসীর কাছে এরূপ ঘটনা বড় আশ্চর্য্যের কথা নহে, এখনও প্রকৃত ব্রাহ্মণ-সাধু-সন্ন্যাসীর কাছে রাজ সন্মান ঘৃণার সহিত উপেক্ষিত হইয়া থাকে।