ভারতে অলিকসন্দর/প্রথম ভাগ/প্রথম অধ্যায়
ভারতে অলিকসন্দর
প্রথম ভাগ
প্রথম অধ্যায়।
প্রায় ২৩ শত বৎসর অতীত হইতে চলিল, ইয়ুরোপের একটি ক্ষুদ্র জনপদের একজন লোকোত্তর পুরুষ অতি অল্প অর্থ ও লোকবল সংগ্রহ করিয়া সে সময়ের তাঁহাদের পরিজ্ঞাত পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ প্রদেশ করতলগত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাঁহার ভারতের সীমান্ত প্রদেশে আগমন ও তথা কথিত জয়ের কথা, সেই সময় হইতে আরম্ভ করিয়া, বর্ত্তমানকালেও ইয়ুরোপীয়েরা গর্ব্বের সহিত আলোচনা করিয়া থাকেন। এ সম্বন্ধে ইয়ুরোপ খণ্ডের নানাদেশের মনীষিগণ, নানা ভাষায় অবিশ্রান্তভাবে গবেষণা করিলে ও, আমাদের দেশের কোনও প্রাচীন লেখক তাঁহার ধূমকেতুর ন্যায় অকস্মাৎ উদয়ের কোন কথা লিপিবদ্ধ করেন নাই। কোন্ সুদুর অজ্ঞাত প্রদেশের অধিবাসী, আমাদের ভারতবর্ষের দুই চারিদিন শান্তিভঙ্গ করিতে বা পর্য্যাপ্ত ধন সম্পদের কিয়দংশ অপহরণ করিয়া লইয়া যাইতে সমর্থ হইয়াছিল, সেই সকল অশান্তিপূর্ণ ঘটনা লিপিবদ্ধ করা আমাদের পূর্ব্বজেরা যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করেন নাই। এই কাল সমুদ্রের অনন্ত তরঙ্গ প্রতি মুহূর্ত্তে উৎপন্ন হইয়াই কিয়ৎক্ষণ পরেই তাহা বিলীন হইয়া যাইতেছে। এইরূপ তরঙ্গের ঘাতপ্রতিঘাত গণনা, হিন্দুর স্বভাব বিরুদ্ধ, তাই তাঁহারা ইহ সংসারের ঘটনা পরম্পরা লিপিবদ্ধ করিবার ব্যর্থ চেষ্টা না করিয়া, পারলৌলিক উন্নতিকল্পে মনোনিবেশ করিতেন। স্বাধীন হিন্দুর এরূপ চেষ্টা প্রশংসাজনক হইতে পারে। কোন দস্যু বা তস্কর, সম্পন্ন গৃহস্থের যৎসামান্য বিষয় লুণ্ঠন করিয়া লইয়া গেলে, সেই সমৃদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি যেরূপ অতি অল্পকাল মধ্যেই সেই দস্যুর অত্যাচারের কথা বিস্মৃত হইয়া থাকে, সেইরূপ অলিকসন্দর আদির ভারত আক্রমণ কথা, অতি অল্পকাল মধ্যেই আমাদের দেশের লোক ভুলিয়া গিয়াছিলেন। এই জন্যই আমাদের কোন গ্রন্থে অলিকসন্দরের কোনরূপ নামোল্লেখ নাই। এরূপ দস্যুর নাম কীর্ত্তণ করাও বোধ হয় তাঁহারা পাপজনক বলিয়া বিবেচনা করিতেন। মনুষ্যপরমায়ু অল্পকালস্থায়ী, এই সঙ্ক্ষেপ সময়ে দস্যুকাহিনী চর্চ্চা না করিয়া, তাঁহারা পুণ্যচরিত্র আলোচনা করিয়া সময় অতিবাহিত করিতেন। তাঁহাদিগের নামোল্লেখ না করিবার যে কোন কারণ থাকুক না কেন, তাহা জানিবার আমাদের বিশেষ আবশ্যক নাই। কিন্তু অলিকসন্দরের আক্রমণ রোধ করিবার জন্য—প্রতি পদে তাঁহাকে বাঁধা দিবার জন্য, তাঁহার প্রদত্ত সম্মান ও অপমানের প্রতি কিঞ্চিন্মাত্র ভ্রুক্ষেপ না করিয়া স্বদেশের কল্যাণের জন্য, ভারতবাসীরা কিরূপে আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন—তাহা আলোচনা করিলে শরীর কণ্টকিত হইয় উঠে—ভাবিলে মাথা ঘুরিয়া যায়। আমাদের দেশের ব্রাহ্মণাদি বর্ণ চতুষ্টয় একপ্রাণে যেরূপ ভাবে কার্য্য করিয়াছিলেন, বাস্তবিকই তাহা বিস্ময়ের বিষয়। ব্রাহ্মণগণ নিঃস্বার্থ ভাবে কার্য্য করিয়াছিলেন বলিয়াই বিপুল সেনাদল সহ অলিকসন্দরকে যৎপরোনাস্তি কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। কিরূপে তিনি, কোনরূপে প্রাণ লইয়া প্রত্যাগমন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, সংসারে বীতরাগ ব্রাহ্মণের কাছে, কিরূপে তিনি পরাজিত হইয়াছিলেন, নিঃস্ব ব্রাহ্মণকে সম্মান না করিয়া কিরূপে তিনি নিজের সম্মান বৃদ্ধি করিয়াছিলেন—আর কিরূপ বীরত্বের সহিত যুদ্ধ করিয়া তিনি সমরে শত্রুর অজেয় হইয়াছিলেন ইত্যাদি প্রাচীন কাহিনী সুপ্রাচীন হইলেও ইহা চির নূতন—ইহার আলোচনা আমাদের পক্ষে পুণ্যজনক। একজন যুবক ১২।১৩ বৎসরের চেষ্টায় এবং প্রায় ৩৩ বৎসর বয়ঃক্রমের ভিতর যে সকল অসাধারণ কার্য্য করিয়াছিলেন তাহা ইয়ুরোপের ইতিহাসে খুবই অদ্ভুত ব্যাপার।[১] এরূপ কার্য্য তৎপরতা, এরূপ অধ্যাবসায়, এরূপ সাহস, জনসাধারণের উপর অসাধারণ ক্ষমতা বিস্তার শক্তি, অতি অল্প লোকেরই মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়। নেপোলিয়ন প্রভৃতি পাশ্চাত্য বীরবৃন্দ, অলিকসন্দরের যুদ্ধ প্রণালী প্রভৃতি অনুশীলন করিয়া কর্ত্তব্য পথে অগ্রসর হইতেন, এরূপ লোকাত্তর পুরুষের জীবনী, বিশেষতঃ তাঁহার সহিত আমাদের ভারতবর্ষের কথার সহিত মিলিত আছে বলিয়া আমাদেরও আলোচনার বিষয় হইয়াছে। স্বাধীন হিন্দু যে কারণে অলিকসন্দরের কার্য্যকলাপ আলোচনা করেন নাই, বর্ত্তমানকালে আমাদের সেরূপ কোন কারণই বিদ্যমান নাই, সুতরাং সর্ব্বপ্রথম ও সর্ব্বপ্রধান ইয়ুরোপীয় বীরের ভারত আক্রমণ, এবং ভারতবাসীর কাছে তিনি কিরূপ অভ্যর্থনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তাহা আমাদের অবশ্য জ্ঞাতব্য।
সঙ্ক্ষেপে আমরা সে সময়ের গ্রীসের অবস্থা বর্ণনা করিয়া প্রস্তাবিত বিষয় বলিতে প্রবৃত্ত হইব। সমগ্র গ্রীসের ভূমির পরিমাণ, আমাদের সুবৃহৎ বাঙ্গলার সহিত তুলনা হইতে পারেনা। ইহা আমাদের বর্ত্তমান ময়মনসিংহজেলার তিন গুণ অপেক্ষা কিছু বড় হইতে পারে, কিন্তু এই ক্ষুদ্র গ্রীসের অতিক্ষুদ্রতম প্রদেশ শৌর্য্যে, বীর্য্যে, পরাক্রমে, পাণ্ডিত্যে, শিল্পনিপুণতায়, সকল বিষয়েই ইয়ুরোপ খণ্ডে উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছিল। যে গ্রীসের স্বভাব সংস্থান, প্রাচীন গ্রীসবাসীর চরিত্র গঠনের অকুকল হইয়াছিল—প্রাতঃকালের বায়ু যাহা দিগের নৌকা বহন করিয়া এসিয়ামাইনর অভিমুখে লইয়া যাইত, আবার স্বায়ংকালে তাহা আত্মীয়ের ন্যায় বহন করিয়া গৃহে পৌঁছাইয়া দিত সেই বায়ু তো এখনও রহিয়াছে, কৈ জলপথে গ্রীসের সে প্রাধান্য নাই কেন? ভালদিনে গ্রীসের তট হইতে আমাদের এসিয়ার স্বর্ণপ্রসবিনী মৃত্তিকা দেখিতে পাওয়া যায়—ইহা অধিকার করিবার জন্য, সে সময় গ্রীসবাসী সতৃষ্ণনয়নে দেখিয়া, দলে দলে আগমন করিত, এখন গ্রীকদের সে তৃষ্ণা, দরিদ্রের আকাঙ্ক্ষার ন্যায় হৃদয়ে উঠিয়াই লীন হইয়া যাইতেছে কেন? সেকালে এক মুঠা জলপাই ও একটা সার্ডিন (Sardine) মাছে, তাহাদের ক্ষুন্নিবৃত্তি হইলেও, তাহারা বিশ্বসংসার গ্রাস করিবার জন্য মুখব্যাদন করিয়াছিল—তাহাদের এখন সে ক্ষুধা কোথায়? খালি মাথায় ও খালি পা, অথবা কাষ্ঠপাদুকা পরিধান করিয়া, যাহারা গমনাগমন করিত, একখানি কটিবস্ত্র ও উত্তরীয় হইলেই যাহাদের কাপড়ের অভাব পূর্ণ হইত, সেই তথাকথিত অসভ্যদের যে সৌন্দর্য্য জ্ঞান ছিল, সে জ্ঞান এখন সে দেশ হইতে কেন অন্তহৃত হইয়াছে? বায়ু ও আলোক বহুল পর্ণকুটীর হইতে সেকালের গ্রীসে যে সকল দেবপ্রকৃতির ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিয়া দেশকে ধন্য করিয়াছিল, এখন তাহা অপেক্ষা উত্তম গৃহ হইতে ভাল লোক জন্মগ্রহণ করে না কেন? এ সকল প্রশ্নের এক মাত্র উত্তর ভগবদ্ ইচ্ছা হইলেও, আমরা বলিব সেকালের প্রত্যেক গ্রীসবাসীর হৃদয়ে স্বদেশের গৌরব বৃদ্ধি করিবার প্রবল বাসনা প্রবাহিত হইত, প্রত্যেকে নিজের নিজের শক্তি অনুসারে নিন্দা বা প্রশংসার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করিয়া কার্য্য সকল কর্ত্তব্যবোধে সম্পাদান করিত। কাযেই গ্রীসের উন্নতি অনিবার্য্য হইয়াছিল। দেশের জনসাধারণের চিন্তা ও কার্য্য যদি স্বদেশের উন্নতি কল্পে চালিত হয়,তাহা হইলে তাহার গতিরোধ করা বড় সাধারণ কথা নহে। বরং বাধাপ্রাপ্ত হইলে পার্ব্বত্য নদীর ন্যায় বেগবতী হইয়া থাকে।
মেসিডোনিয়া, গ্রীসের উত্তর, ইহার পশ্চিমে ইলিরিয়া, পূর্ব্বে থ্রেস, এবং ইজিয়ান সাগর। সেকালে ইহার অধিশ্বরের বাহুবলের হ্রাসবৃদ্ধির সহিত, ইহার আয়তনেরও হ্রাসবৃদ্ধি হইয়াছে। অনেক সময় ইহার আয়তন ও লোক সংখ্যা আমাদের ২৪ পরগণার আয়তন বা লোক সংখ্যাকে অতিক্রমণ করিতে সমর্থ হয় নাই। ধনবল বা জনবলেও ইহা অপেক্ষা বেশী ছিল বলিয়া বোধ হয় না। সমুদ্রের নিকটবর্ত্তী ভূভাগ সমতল ও সজল—অধিকাংশ প্রদেশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্ব্বতমালায় পরিবেষ্টিত। এদেশবাসীকে গ্রীকরা, বর্ব্বর বলিয়া ঘৃণা করিত। ইহাদের ভাষাও গ্রীক ভাষা হইতে অনেকটা স্বতন্ত্র। সেকালের মাসিদনেরা উল্কী পরিয়া শরীর চিত্রিত করিত—যে পর্য্যন্ত না কোন শত্রুকে হত্যা করিতে পারিত, সে পর্য্যন্ত শরীরে কোন ঘৃণিত চিহ্ন ধারণ করিয়া লোক সমাজে নিজের অক্ষমতা ব্যক্ত করিত। জাল ব্যতীত স্বহস্তে বন্যবরাহ হত্যা করিতে না পারিলে তক্তপোষে শয়নের অধিকার হইত না। অল্প সংখ্যক থেসিলিয়ানকে বাহুবলে পরাস্ত করিয়া তাহারা আনন্দ লাভ করিত। অলিকসন্দরের পিতা ফিলিপের পূর্ব্বেও ইহারা কর্ম্মঠ ও সুদক্ষ অশ্বারোহী বলিয়া বিশেষ খ্যাতিলাভ করিয়াছিল। সৈনিক বৃত্তি তাহারা প্রীতির সহিত গ্রহণ করিত—অতি সাহস, বিপদে অবিমুঢ়তা প্রভৃতি তাহাদের জাতীয় গুণ। ফিলিপ এই সকল সমরনিপুণ মাসিদনকে সুশিক্ষিত করিয়া যুদ্ধে শত্রুগণের অজেয় করিয়াছিলেন। সর্ব্বত্রই উপাদান প্রচুর পরিমাণে বর্ত্তমান থাকিতে পারে, কিন্তু যে মহাপুরুষ নিজের বুদ্ধিবলে অশিক্ষিতকে সুশিক্ষিত—ভীরুকে সাহসী, অলসকে কর্ম্মঠ, জনগণ ভিন্ন ভিন্ন মতাববন্ধী হইলেও যিনি জাতীয়ভাবে সকলকে একত্র করিতে সমর্থ হন, সেই পুরুষপ্রবর জননায়ক পদে আরূঢ় হইয়া থাকেন। ফিলিপ বা অলিকসন্দরের পূর্ব্বেও মাসিদনদের পূর্ব্বোক্ত গুণ সকল যথেষ্টরূপে বর্ত্তমান ছিল বা আছে, কিন্তু সে দেশে তাঁহাদের মতন কারুকর না থাকায়, এই সকল উপাদানের ফলভোগ করিতে সমর্থ হন নাই। তাই তাহা উৎপন্ন হইয়াই আপনা আপনি বিনষ্ট হইয়াছে ও হইতেছে। এই জন্যই ফিলিপ বা অলিকসন্দর অদ্ভুতকর্ম্মা বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকেন। বর্ত্তমান কালেও সেই মাসিদনরা বর্ত্তমান রহিয়াছে—ইহার লোক সংখ্যা বরং পূর্ব্বাপেক্ষা অধিক হইলেও হইতে পারে, কিন্তু ইহার আর সে গৌরব নাই—এখন ইহা এসিয়াবাসীর অধীনতায় অবস্থান করিতেছে। যে দেশের অল্প সংখ্যক লোক বীরদর্পে জগৎকে মুগ্ধ করিয়াছিল, বর্ত্তমান কালে সেই দেশের অধিবাসী পরাধীনতার দুর্ব্বিসহ দুঃখ ভোগ করিতেছে।
তাহারা এখন নিজেদের দুঃখ দূর করিবার জন্য অন্যের কৃপাকটাক্ষপ্রার্থী হইয়াছে। হায় ভগবান! পৃথিবীতে যেন কোন জাতিকে পরাধীনতার নিদারুণ দুঃখ ভোগ করিতে না হয়। তাহাদের বর্ত্তমান দুঃখের কথা পাঠ করিলে আমরা পরাধীন আমাদেরও হৃদয় বিচলিত হইয়া থাকে।
আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি সে সময় গ্রীস অনেক গুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ইহাদিগের মধ্যে কোনটি রাজতন্ত্রের, কোনটি প্রজাতন্ত্রের, কোনটি বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ কর্ত্তৃক পরিচালিত হইত। ইহাদের মধ্যে পরস্পর বিদ্বেষ, বিবাদ, বিসম্বাদ সর্ব্বদাই উপস্থিত থাকিত। এই সকল রাজ্যের মধ্যে সে সময়ে এথেনীয় সাধারণ-তন্ত্র দুর্ব্বল হইলেও মাসিদনদিগের বিশেষ চিন্তার বিষয় হইয়াছিল। একজন বাগ্ব্যবসায়ী কর্ম্মকার পুত্ত্র—রাজপুত্ত্র ও রাজার সহিত কিরূপ বাগ্যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন—এবং সেকালে লেখনী, তলবারের উপর কিরূপ প্রাধান্য সংস্থাপন করিয়াছিল তাহা বিস্ময়জনক ব্যাপার। কেবলমাত্র বক্তৃতায় দেশ উদ্ধার বা রক্ষা হয় না একথা ইয়ুরোপের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বক্তা ডিমস্থিনিসের বাগ্যুদ্ধে সপ্রমাণ হইয়াছে। বাক্যুদ্ধে যদি জাতি বড় হইত, তাহা হইলে সে সময় এথিনীয় নৌশক্তি সামান্য রোডসের নৌশক্তি অপেক্ষা উৎকর্ষলাভ করিতে পারিত, কিন্তু তাহা হয় নাই বরং অনেকের অপেক্ষা এথিনীয় নৌশক্তি দুর্ব্বলই ছিল। সেই রূপ সৈন্যবলে এথেনস্, সে সময়ের থেবস্ বা স্পার্টা অপেক্ষা হীনবলই ছিলেন। যুদ্ধবিগ্রহের আবশ্যক হইলে এথিনীয় প্রজাতন্ত্র সৈন্য ভাড়া করিয়া যুদ্ধবিগ্রহ করিত। সে সময় ইহার প্রজামণ্ডলীর অধিকাংশ কৃষিকার্য্যের দ্বারা জীবিকা অর্জ্জন করিত। এথেনস্বাসীরা ব্যবসা বাণিজ্য করিয়া কোনরূপে দিন গুজরাণ করিত। রাজ্যের আয় অত্যন্ত হীন অবস্থাকে প্রাপ্ত হইয়াছিল। অনেক সময় ৩৪৬ টালাণ্টাও সংগ্রহ হইত না। এই অর্থ রাজ্যের অভাব মোচন করিতেও পর্য্যাপ্ত হইত না। এথেন্সের করদ রাজ্য হইতে যে অর্থ সংগ্রহ হইত তাহাও যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস হইয়াছিল। ২০।৫০ টালাণ্ট যাহাও বা পাওয়া যাইত তাহাও সকল সময় সংগ্রহ করা কঠিন হইয়া উঠিত। জনবল বা অর্থবল উভয়েই এথেন্স হীনবল ছিলেন, কাযেই যুদ্ধের দ্রব্য সংগ্রহ, বা সৈন্যদিগের বেতন,বা উপযুক্তরূপ পরিচ্ছদাদি যথাসময়ে প্রদান করিতে সমর্থ হইত না। জ্ঞানচর্চ্চায় এথেন্সবাসী অদ্বিতীয় হইলেও এ জ্ঞান তাহাদিগের স্বাধীনতা রক্ষা করিতে সমর্থ হয় নাই। স্বদেশবাসী ফিলিপ বা তাহার পুত্রের হস্তে কোনরূপে নিষ্কৃতি পাইলেও রোমকদিগের নিকট হইতে কোনরূপে পরিত্রাণ লাভ করিতে পারে নাই। কেবলমাত্র জ্ঞানচর্চ্চা বা অর্থ উপার্জ্জন দ্বারা স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয় না—ইহার সহিত যদি ক্ষাত্রবলের অভাব হয় তাহা হইলে সে জ্ঞান অজ্ঞান এবং অর্থ অনর্থের কারণ স্বরূপ হইয়া থাকে।
দক্ষিণ গ্রীসে সুবিখ্যাত লিকোনিয়া প্রদেশ, এই প্রদেশে ইউরোতস নদীর তটে, বীরপ্রসবিনী স্পার্টা নগরী—স্পার্টার গৌরব বহুদিন হইল অন্তর্হৃত হইলে ও ইহার অদ্ভুত বীরত্ব কাহিনী স্পার্টাকে জগতের কাছে চিরকাল চির নূতন করিয়া পরিচিত করিবে। এখানে থেমিসটক্লিস, বা পেরিক্লিসের ন্যায় যোদ্ধা বা প্রখ্যাতনামা দার্শনিক জন্মগ্রহণ না করিলেও স্পার্টাবাসীর স্বাধীনতা সংরক্ষণ জন্য অদ্ভুত আত্মত্যাগ—পারসীক আক্রমণে গ্রীকবাসী বিপন্ন হইলে স্পার্টানরাই সেই বিপদে গ্রীসকে রক্ষা করিয়া খ্যাতি অর্জ্জন করিয়াছিল।
স্পার্টানদের শিক্ষা আমাদের সে কালের ক্ষত্রিয়দের শিক্ষার অনুরূপ—যুদ্ধই তাহাদের জীবিকা, এ জন্য সর্ব্বদা তাহারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকিতে শিক্ষিত হইত। স্পার্টান বালক ভূমিষ্ঠ হইলেই, তাহাকে পঞ্চায়ৎ সভায় লইয়া যাওয়া হইত। পরীক্ষায়, শিশু হীনাঙ্গ, বা রুগ্ন বলিয়া বিবেচিত হইলে তাহাকে পর্ব্বতের উপর রাখিয়া দেওয়া হইত, ইহাতেই সে ইহলীলা সম্বরণ করিত। বলা বাহুল্য যে, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দৃঢ়কায় ও নীরোগ বালক ভবিষ্যতে স্বদেশের কল্যাণকল্পে সুস্থমনে শরীর উৎসর্গ করিতে সমর্থ হইত। আমাদের দেশের সে কালের বালকেরা যেরূপ গুরুগৃহে অবস্থান করিয়া বিদ্যা শিক্ষা করিত, সেইরূপ সপ্তম বর্ষীয় স্পার্টান বালককে তাহার পিতা মাতার নিকট হইতে আনয়ন করিয়া শিক্ষা প্রদান করা হইত। অন্য শিক্ষা অপেক্ষা শারীরিক শিক্ষাই তাহাদের বিশেষ লক্ষ্যের বিষয় হইয়াছিল। আজ্ঞা প্রতিপালন, শারীরিক ক্লেশ সহিষ্ণুতা প্রভৃতি বিষয়ে তাহারা বিশেষরূপে শিক্ষিত হইত। শীত ও গ্রীষ্মকালে তাহাদিগকে নগ্নপদে থাকিতে হইত—গাত্রাবরণের জন্য একখানি মাত্র বস্ত্র পাইত, খড়ের উপর শয়ন করিতে হইত। স্নানের জন্য তাহাদিগকে শীতল জল ব্যবহার করিতে হইত। বালকগণকে খুব তাড়াতাড়ি—অল্প পরিমাণে কদন্ন ভোজন করিতে অভ্যস্থ করান হইত। তাহারা আপনা আপনি ঘুসো ঘুসি, লাতালাতি করিয়া ক্রিড়া করিত। বালকগণ কিরূপ ক্লেশ সহিষ্ণু হইয়াছে সময় সময় তাহার পরীক্ষা করা হইত। আর্ত্তিমিস উৎসবে, দেবীর প্রতিমার সমক্ষে বালককে প্রহার করা হইত—ইহাতে সময় সময় প্রহৃত বালক মৃত্যুমুখে পতিত হইত—এরূপ দারুণভাবে প্রহৃত হইয়াও বালক রোদন করিত না। বালকদিগকে প্রায়ই আহার প্রদান করা হইত না। তাহাদিগকে আহার সংগ্রহ করিয়া লইতে হইত। আহার সংগ্রহ কালে যদি কোন বালক ধৃত হইত, তাহা হইলে তাহাকে বিশেষরূপে নিগৃহীত হইতে হইত। এক সময় একটি বালক একটা শৃগাল শিশু অপহরণ করে, পাছে কেহ টের পায় এজন্য সে কাপড় ঢাকা দিয়া পেটের কাছে লুকাইয়া রাখে শৃগাল শিশু তীক্ষ্ণ নখরাঘাতে বালকের অন্ত্রবহির্গত করিলেও সে অবিকৃত বদনে যন্ত্রনা সহ্য করিয়াছিল! যুদ্ধের শঙ্কটজনক অবস্থায় কেমন করিয়া পলায়ন করিতে হয়, সে বিষয়ও তাহারা শিক্ষা পাইত। সকল বিষয়েই তাহারা কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকিত। গমনকালে তাহারা নিম্নে দৃষ্টি রাখিয়া প্রস্তর মূর্ত্তির ন্যায় নিস্তব্ধভাবে এদিক ওদিক না দেখিয়া গমন করিত। বয়ঃজ্যেষ্ঠের আজ্ঞা তাহাদের সর্ব্বথা পালণীয় ছিল। ভোজনকালে তাহাদের কথা কহা নিষিদ্ধ ছিল একজন শিক্ষকের অধীনতায় শত বালকও অবস্থান করিত—শত বালক থাকিলেও কোনরূপ বিশৃঙ্খলা লক্ষিত হইত না।
স্পার্টানদের ১৭ বৎসরের সময় সৈনিক জীবন আরম্ভ হইত, এবং ৬০ বৎসরের সময় ইহার অবসান হইত। এই সুদীর্ঘ সময়ের অধিকাংশ কাল তাহারা সেনানিবাসে সৈনিকগণের শয়ন ভোজন, ব্যায়াম প্রভৃতির অনুষ্ঠান করিত। প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে কর্ম্মঠ ও বলিষ্ঠ করিবার জন্য তাহারা যথেষ্ট চেষ্টা করিত। তাহারা নিজের ইচ্ছা অনুসারে গৃহের সুখ স্বচ্ছন্দতা ভোগ করিতে পারিত না। ব্যবসা, বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ও তাহাদের নিষিদ্ধ ছিল।
গ্রীসের অন্য প্রদেশের কন্যাগণকে, যেরূপ অন্দরের ভিতর চরকা কাটিয়া, কাপড় বুনিয়া, সময় যাপন করিতে হইত, স্পার্টায় সেরূপ করিতে হইত না। বলিষ্ঠ পুত্ত্রের জননী হইতে সমর্থা হইবে বলিয়া স্পার্টার কন্যাগণ বালকদের ন্যায় ব্যায়াম চর্চ্চা করিত, তাহারা দৌড়ান—লাফান—পাতর ছোঁড়া—লাটি খেলা প্রভৃতিতে সুনিপুণ হইত। সেকালের স্পার্টান রমণীগণ গ্রীসের মধ্যে বলিষ্ঠ ও সাহসী বলিয়া বিশেষ খ্যাতি লাভ করিয়াছিল। তাহারা ইচ্ছা অনুসারে স্বামীর সহিত মিলিত হইতে সমর্থ হইত না। সময় সময় স্ত্রীলোকেরা পুরুষের ন্যায় পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া সেনানিবাসে স্বামীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইত। পুত্র বীর্য্যবান্ হইবে এই অভিপ্রায়ে পিতা ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদন করাইয়া লইতে লজ্জিত হইত না। স্ত্রীলোকেরা পুরুষগণকে যুদ্ধ কালে উৎসাহিত করিত। “কাপুরুষের জননী” এই দুইটি কথা অপেক্ষা স্ত্রীলোকদের পক্ষে অন্য কোন কঠোর গালি স্পার্টার অভিধানে কথিত হয় নাই। এক সময় একজন স্পার্টান যুদ্ধ হইতে কাপুরুষের ন্যায় পলায়ন করিয়া আইসে। এই অপরাধে তাহার স্নেহময়ী জননী তাহাকে হত্যা করিয়া বলেন “ইউরোতার জল গাধার পানের জন্য প্রবাহিত হয় না।” অপর এক সময় একটি বৃদ্ধের পাঁচটি পুত্র সমরক্ষেত্রে বীরশয্যা গ্রহণ করে। এই দুঃসংবাদ তাহার কোন পরিচিত প্রদান করিলে তিনি উৎকণ্ঠার সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন “স্পার্টার জয় হইয়াছে ত? প্রত্যুত্তরে “হাঁ” এই কথা শুনিয়া বৃদ্ধা বলিলেন “ভগবানকে তবে ধন্যবাদ দিন।”
সঙ্ক্ষেপে স্পার্টার অভিজাতদিগের কথা কথিত হইল। ইহা ছাড়া তথায় পেরিইওসী ও হেলট নামক আরো দুই শ্রেণীর লোক ছিল। প্রথমোক্তেরা ব্যবসা বাণিজ্য লইয়া থাকিত। নিজেদের গ্রাম শাসন করিবার ও অধিকার প্রাপ্ত হইত এবং স্পার্টার শাসনকর্ত্তাকে কর প্রদান করিয়া জাতীয় ধনভাণ্ডার পরিপূরণ করিত। শেষোক্ত হেলট বা দাসেরা স্বীয় প্রভুর জন্য কৃষিকার্য্য আদি সমস্ত নির্ব্বাহ করিত—ইহাদের অবস্থা অত্যন্ত জঘন্য ছিল। ইহাদের প্রতি স্পার্টানদের বিভিষীকাপ্রদ দুর্ব্বব্যবহারের কথা পাঠ করা যায়। ইহাদের সংখ্যা স্পার্টানদের অপেক্ষা দশগুণ বেশী হইলেও মন্ত্রমোহিত সর্পের ন্যায় ইহারা নির্বীর্য্য প্রায় ছিল।
এথেন্স। এথিনীয় বালক জন্মগ্রহণ করিলে সে তাহার পিতার ইচ্ছা অনুসারে গৃহীত বা পরিত্যক্ত হইত। বর্জ্জনীয় শিশুকে দ্বারদেশের সম্মুখ ভাগে রাখা হইলে অনেক সময় অযত্নে মারা যাইত, কখন বা কেহ কৃপা করিয়া লইয়া গিয়া তাহাকে পুরুষানুক্রমে দাস করিয়া জীবিত রাখিত। পৃথিবীর এই দারুণ জীবন সংগ্রামে দেশে কোটী কোটী অকর্ম্মণ্য,জীর্ণ, শীর্ণ, গর্দ্দভের ন্যায় ভারবাহী, অথবা বিলাস পরায়ণ মেদ সর্ব্বস্ব কাপুরুষ থাকা অপেক্ষা মানুষের মতন মানুষ, তাহা অল্প সংখ্যক ও দেশের পক্ষে গৌরবজনক সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কন্যা সম্বন্ধে একজন গ্রীসীয় গ্রন্থকার লিখিয়াছেন, পিতা অত্যন্ত দরিদ্র হইলেও পুত্র রক্ষিত হয়, কিন্তু ধনবান পিতা ও কন্যাকে পরিত্যাগ করিয়া থাকে। বালক, সাত বৎসর পর্য্যন্ত মার কাছে অন্দরমহলে অবস্থান করে, তারপর কিছুদিন গুরুমহাশয়ের নিকট (ইহারা প্রায় কৃতদাসই হইয়া থাকে) আদব কায়দা শিক্ষা করিয়া থাকে। বালক দুষ্টুমি করিলে গুরু মহাশয় প্রহার করিবার অধিকারও প্রাপ্ত হইতেন। এইরূপ কিছুদিন শিক্ষার পর বালককে বিদ্যালয়ে পাঠান হইত। সে তথায় লিখিতে পড়িতে ও গান করিতে শিক্ষিত হইত। বালিকারা বাড়ীর ভিতর কাপড় বোনা, সূতা কাটা, গুরুজনের আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে শিক্ষিত হইত। প্রায় ১৫ বৎসরের সময় তাহারা বিবাহিত হইত। বিবাহ ব্যপারে তাহাদের কোন মতামত লওয়া হইত না। তাহার পিতার ইচ্ছা অনুসারে সমস্ত নির্ব্বাহ হইত। প্রায়ই পিতার বন্ধু বা প্রতিবেশীর পুত্রের সহিত বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হইত—এথেন্সবাসী ব্যতীত কোন বিদেশীকে তাহারা প্রায় কন্যা সম্প্রদান করিত না। বাড়ির ভিতরেই স্ত্রীলোকেরা অবস্থান করিত। ধর্ম্মকার্য্য ব্যতীত তাহারা ঘরের বাহিরে যাইত না, বা আত্মীয় ব্যতীত কেহ বাড়ির ভিতর যাইতে পারিত না। সেকালের কি স্পার্টান, কি এথেনিয়ন সকলে সম্ভব অনুসারে ব্রহ্মচর্য্য প্রতিপালন করিত। ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ইহার প্রতিকুল প্রমাণ পাওয়া গেলেও জনসাধারণ সংযতচিত্ত ছিল। এই জন্য তাহারা বীর্য্যসম্পন্ন বলবান ও দৃঢ়ব্রত হইয়াছিল।
সে কালের গ্রীসবাসীকে পিতৃ মাতৃ ভক্ত হইতে বিশেষরূপে শিক্ষিত করা হইত। পিতৃদ্রোহী পুত্র সমাজে যেরূপ নিন্দিত হইত, সেইরূপ স্বদেশের শাসন অধিকার হইতেও সে বঞ্চিত হইত। বিচার কার্য্যে নিযুক্ত হইবার পূর্ব্বে নির্ব্বাচিত ব্যক্তিকে, পিতা মাতার প্রতি অসদ্ব্যবহার করেন নাই, তাহাকে এরূপ প্রমাণ প্রদান করিতে হইত। যদি কোন ব্যক্তি পিতামাতাকে গ্রাসাচ্ছাদন না করিত, তাহা হইলে সে সাধারণে বক্তৃতা করিবার অধিকার প্রাপ্ত হইত না। এই সকল সদগুণসম্পন্ন ছিল বলিয়া গ্রীস সেকালে সবিশেষ শক্তিশালী হইয়াছিল -জগৎমধ্যে অভূতপূর্ব্ব প্রতিষ্ঠা সংস্থাপন করিতে সমর্থ হইয়াছিল। এই গ্রীস যখন বিলাসপরায়ণ হইয়া অকর্ম্মণ্য হইয়াছিল—ব্রহ্মচর্য্য বিমুখ হইয়া হীনবীর্য্য হইয়াছিল, তখন তাহাদিগকে এই দারুণ পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ পরাধীনতা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইতে হইয়াছিল—দুর্ভিক্ষে বিশেষরূপে জর্জ্জরিত হইতে হইয়াছিল কি না, জানি না, কিন্তু তাহাদিগকে “ম্যালেরিয়ায়” প্রপীড়িত হইতে হইয়াছিল, এ কথা আমরা অবগত আছি।
- ↑ অলিকসন্দর পাশববলে যেরূপ জগৎকে মুগ্ধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, সেইরূপ তাঁহা অপেক্ষা অল্পদিন ও অল্প বয়সের মধ্যে, আচার্য্য প্রবর শঙ্করাচার্য্য ধর্ম্ম জগতে যুগান্তর আনয়ন, এবং স্বীয় মত সংস্থাপন জন্য অসংখ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছিলেন। তাহাও জগতের ইতিহাসে বিস্ময়জনক ব্যাপার। প্রভুপাদের ভ্রমণ ও ক্রোশ হিসাবে অলিকসন্দর অপেক্ষা নিতান্ত কম হইবে না। নরহন্তা বলিয়া অলিকসন্দরের নাম কালে ঘৃণার সহিত উপেক্ষিত হইতে পারে, কিন্তু জ্ঞান রাজ্যের বৃদ্ধির সহিত শঙ্করের অনুশাসন সর্ব্বত্র গৃহীত হইবে।