ভারত পথিক/বংশ পরিচয়

বংশ পরিচয়

আমাদের পরিবারের ইতিহাস প্রায় সাতাশ পুর‍ুষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। বোসেরা জাতে কায়স্থ। এই বোসদের দক্ষিণ রাঢ়ী শাখার প্রতিষ্ঠাতা দশরথ বোসের দুটি ছেলে, কৃষ্ণ ও পরমা। এঁদের মধ্যে পরমা পূর্ববঙ্গে বসবাস করতেন, আর কৃষ্ণ পশ্চিমবঙ্গে। দশরথ বোসের একজন প্র-প্রপৌত্র মুক্তি বোস কলকাতা থেকে ১৪ মাইল দূরে মহিনগরে বাস করতেন, সেই থেকেই এঁরা মহিনগরের বসুপরিবার নামে বিখ্যাত। দশরথের দশ পুর‍ুষ নিচে মহিপতি—ইনি অসাধারণ জ্ঞানী ও গুণী ছিলেন। বাঙলার তৎকালীন রাজা তাঁকে অর্থ ও সমর সচিব নিযুক্ত করেন এবং তাঁর কাজে সন্ত‌ুষ্ট হয়ে তাঁকে সুবুদ্ধি খাঁ উপাধি দেন। সে সময়কার প্রথা অনুসারে মহিপতি পুরস্কার স্বর‍ূপ রাজার কাছ থেকে জায়গীরও পেয়েছিলেন— মহিনগরের কাছে সুবুদ্ধিপুরই বোধ হয় সেই জায়গীর। মহিপতির দশ ছেলের মধ্যে চতুর্থ ঈশান খাঁ-ই বিখ্যাত। রাজদরবারে মহিপতির স্থান ঈশান খাঁ-ই দখল করেছিলেন। ঈশান খাঁর তিন ছেলে— তিনজনই রাজার কাছ থেকে উপাধি পেয়েছিলেন। মধ্যম ছেলে গোপীনাথ অসাধারণ বীর ও ক্ষমতাশালী ছিলেন। তাঁকে তৎকালীন সুলতান হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) অর্থসচিব ও নৌসেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন এবং পুরন্দর খাঁ উপাধি দেন। এ ছাড়া পুরস্কার স্বরুপ তাঁকে মহিনগরের কাছে একটি জায়গীর দেন—পুরন্দর খাঁর নাম অনুসারে এখন ঐ জায়গার নাম পুরন্দরপুর। পুরন্দরপুরে ‘খাঁ পুকুর” নামে এক মাইল দীর্ঘ একটি পুষ্করিণীর ভগ্নাবশেষ এখনো আছে। মহিনগরের কাছে মালঞ্চ নামে যে গ্রামটি আছে সেটি পুরন্দনের বাগানের উপর গড়ে উঠেছিল। সে সময়ে হগলি নদী মহিনগরের খুব কাছ দিয়ে বয়ে যেত। শোনা যায় পুরন্দর নাকি নৌকায় হুগলি দিয়ে বাঙলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে যাতায়াড় করতেন। তাঁরই চেষ্টায় একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে উঠেছিল। সমাজসংস্কারক হিসেবেও পুরন্দরের দান কম নয়। তাঁর আমলের আগে বল্লাল্লী রীতি অনুসারে কায়স্থদের দুটি বিভাগ কুলীন (ঘোষ, বোস, মিত্র) ও মৌলিকের (দত্ত, দে, রায় ইত্যাদি) মধ্যে বিবাহ চলত। পুরন্দর নতুন নিয়ম করলেন যে কুলীন পরিবারের শ‍ুধু জ্যেষ্ঠ সন্তানকেই কুলীন পরিবারে বিয়ে করতে হবে, আর সকলে মৌলিক পরিবারে বিয়ে করতে পারবে। এই রীতি আজ পর্যন্ত চলে আসছে। এর ফলে অতিরিক্ত অন্তর্বিবাহের কুফল থেকে কায়স্থরা রক্ষা পেয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবেও পুরন্দরের নাম আছে। তিনি অনেক বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছিলেন।

কবিরামের ‘রায়মঙ্গল’ ও আরো কয়েকটি বাংলা কাব্য থেকে জানা যায় যে দুশো বছর আগে হগলি নদী (যাকে বাঙলায় সাধারণত বলা হয় ‘গঙ্গা’) মহিনগর ও তার আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হত। তারপর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধারা নেয়। আজও ও অঞ্চলের অনেক পুষ্করিণীকে ‘গঙ্গা' বলা হয়—যেমন ‘বোসের গঙ্গা’। গঙ্গার এই পথপরিবর্তনে এইসব গ্রামের স্বাস্থ্যসম্পদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে অনেকেই এই অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এদের মধ্যে পুরন্দর খাঁর বংশধরও কয়েকজন ছিলেন। তাঁরা কোদালিয়া নামে পাশেই একটি গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন।

কিছুদিন নির্জীব থাকার পর কোদালিয়া, চিংড়িপোতা, হরিনাভি, মালঞ্চ, রাজপুর ইত্যাদি গ্রামগ‍ুলি আবার কর্মকোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে এই অঞ্চল শিল্প ও সংস্কৃতিতে আশ্চর্য উন্নতি লাভ করেছিল—যে উন্নতি বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। কিন্তু তার পরেই ম্যালেরিয়া মহামারীতে দেশ একেবারে উজাড় হয়ে যায়। আজ এইসব অঞ্চলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে জনমানবশূন্য গ্রামগলির জায়গায় আগাছায় ঢাকা বিরাট বিরাট দালানের ভগ্নাবশেষ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

এইসব ভগ্নাবশেষ থেকেই ধারণা করা যায় কিছুদিন আগে এখানকার অবস্থা কতখানি উন্নত ও সমদ্ধিশালী ছিল। একশো বছর আগে এখানে যেসব পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাকেই বহন করে এনেছিলেন, কিন্তু তাই বলে তাঁরা মোটেই প্রগতিবিরোধী ছিলেন না। এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রচারক—যে ব্রাহ্মসমাজকে তখনকার সমাজ ও সংস্কৃতির দিক থেকে বিচার করলে দস্তুরমতো বৈপ্লবিক বলা চলত। আর কয়েকঞ্জন ছিলেন পত্রিকা সম্পাদক। বাঙলা সাহিত্যে তাঁদের দান অপরিমেয়। পণ্ডিত আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ ছিলেন তখনকার দিনের বিশেষ প্রতিপত্তিশালী পত্রিকা “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা”র সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের একজন প্রচারক। পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ছিলেন প্রথম বাঙলা সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সোমপ্রকাশে’র সম্পাদক। এঁর ভ্রাতুষ্পুত্র পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের নেতৃস্থানীয়দের অন্যতম। ভারতচন্দ্র শিরোমণি হিন্দশাস্ত্রের, বিশেষ করে “দায়ভাগ” মতের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চিত্রশিল্পে কালীকুমার চক্রবর্তী এবং সঙ্গীতে অঘোর চক্রবর্তী ও কালীপ্রসন্ন বসু বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। গত ৪০/৫০ বছর যাবৎ স্বাধীনতা আন্দোলনেও এ অঞ্চল অত্যন্ত গ‍ুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করে এসেছে। বিখ্যাত কংগ্রেসকর্মী হরিকুমার চক্রবর্তী এবং সাতকড়ি ব্যানার্জি (ইনি ১৯৩৬ সালে দেওলি ডিটেনশন ক্যাম্পে মারা যান) এবং বিশ্ববিখ্যাত কমরেড এম্. এন্. রায় এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বোসেদের যে শাখা কোদালিয়া গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল তারা যে অন্তত দশপুর‍ুষ পর্যন্ত সেখানে ছিল প্রাপ্ত বংশাবলী থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমার পিতা ছিলেন পুরন্দর খাঁর থেকে তেরো পুরুষ এবং দশরথ বসুর থেকে ছাব্বিশ পুরুষ নীচে। আমার পিতামহ হরনাথ বসুর চার ছেলে, যদুনাথ, কেদারনাথ, দেবেন্দ্রনাথ এবং জানকীনাথ-আমার পিতা।

হরনাথের আগে পর্যন্ত আমাদের পরিবার ছিল শাক্ত ধর্মাবলম্বী। কিন্তু হরনাথ ছিলেন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। বৈষ্ণবধর্ম একান্ত জীবহিংসাবিরোধী—কাজেই হরনাথ বাৎসরিক দূর্গাপূজায় ছাগবলি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রতি বছর অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে দূর্গাপূজা হত, এখনো হয়, কিন্তু হরনাথের আমল থেকে ছাগবলি আর কখনো হয়নি, যদিও একই গ্রামে বোসেদের আর একটি পরিবারে আজও ছাগবলি হয়।

ডাগ্যান্বেষণ করতে হরনাখের চারটি ছেলে এক একজন এক এক জায়গায় গিয়ে বসবাস করেন। সকলের বড় যদুনাথ চাকরি করতেন ইম্পিরিয়াল সেক্রেটারিয়েটে। জীবনের একটি বড় অংশই তাঁর কেটেছিল সিমলায়। দ্বিতীয় কেদারনাথ চিরকাল কলকাতাতেই কাটিয়েছেন। তৃতীয় দেবেন্দ্রনাখ শিক্ষাবিভাগে সরকারী চাকরি করতেন এবং কার্যকুশলতার গ‍ুণে তিনি শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষের পদে উন্নতি লাভ করেন। কার্যোপলক্ষে তাঁকে প্রায়ই এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বদলি হতে হয়েছে। চাকুরি থেকে অবসর নেবার পর তিনি কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করেন।

আমার বাবার জন্ম হয় ১৮৬০ সালের ২৮শে মে, আর মা ১৮৬৯ সালে (বাঙলা ১২৭৫ সালের ১০ই ফাল্গ‌ুন)। কলকাতার অ্যালবার্ট স্কুল থেকে এনট্রান্স পাশ করে বাবা কিছুকাল সেণ্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং জেনাৱেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে (বর্তমান নাম স্কটিশ চার্চ কলেজ) পড়েন; পরে কটকে গিয়ে র‍্যাভেনশ কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। এরপর আইন পড়তে তিনি যখন কলকাতায় ফিরে আসেন তখন ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁর ভ্রাতা কৃষ্ণবিহারী সেন এবং সিটি কলেজের অধ্যক্ষ উমেশচন্দ্র দত্ত প্রমুখ ব্রাহ্মসমাজের নেতৃবর্গের সংস্পর্শে আসেন। এই সময়ে কিছুকাল তিনি অ্যালবার্ট কলেজে অধ্যাপনা করেন। অ্যালবার্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তখন কৃষ্ণবিহারী সেন। ১৮৮৫ সালে তিনি কটকে গিয়ে আইনব্যবসায়ে যোগ দেন। ১৯০১ সালে তিনি কটক মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম বেসরকারী সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১২ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন এবং রায় বাহাদুর খেতাব পান। তারপর ১৯১৭ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে মতানৈক্যের ফলে তিনি সরকারী উকিল এবং পাবলিক প্রোসিকিউটরের পদে ইস্তফা দেন এবং তেরো বছর পরে ১৯৩০ সালে সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে রায়বাহাদুর খেতাব বর্জন করেন।

মিউনিসিপ্যালিটি এবং ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড ছাড়াও ভিক্টোরিয়া স্কুল, কটক য়ুনিয়ন ক্লাব ইত্যাদি বহু শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। দানে তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। দুঃস্থ ছাত্ররা সর্বদাই তার কাছে সাহায্যের জন্য আসত। তাঁর দান শ‍ুধু যে উড়িষ্যাতেই নিবদ্ধ ছিল তা নয়, পৈতৃক গ্রামের কথা তিনি ভোলেননি—সেখানে তাঁর পিতামাতার নামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশনগুলিতে তিনি নিয়মিতভাবে যোগ দিতেন। তাছাড়া স্বদেশী জিনিস ব্যবহারের তিনি বিশেষ পক্ষপাতী ছিলেন। অবশ্য তিনি কখনো প্রকাশ্যভাবে রাজনীতিতে যোগ দেননি। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি কংগ্রেসের গঠনমূলক কাজে—খাদি ও স্বদেশী শিক্ষার প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। বরাবরই তিনি অত্যন্ত ধর্মভীরু ছিলেন এবং দু’বার দীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর প্রথম গ‍ুর‍ু ছিলেন শাক্ত এবং দ্বিতীয় গ‍ুর‍ু বৈষ্ণব। বহুদিন পর্যন্ত তিনি স্থানীয় থিয়োসফিক্যাল লজ‍্-এর সভাপতি ছিলেন। দরিদ্র নিঃস্বদের সম্বন্ধে তাঁর মনে গভীর সমবেদনা ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি বৃদ্ধ ভৃত্যদের ও অন্যান্য আশ্রিতদের সম্বন্ধে যথাযোগ্য সংস্থান করে গিয়েছিলেন।

প্রথম পরিচ্ছেদেই বলেছি আমার মা ছিলেন হাটখোলার দত্ত পরিবার মেয়ে। হাটখোলা উত্তর কলকাতার একটি অংশ। বৃটিশ শাসনের প্রথম যুগে ঐশ্বর্যে এবং নতুন রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলার গ‍ুণে যে ক’টি পরিবার বিশেষ প্রাধান্য, লাভ করেছিল দত্তরা তাদের অন্যতম। তখনকার সেই নব্য-অভিজাত সমাজে দত্তরা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছিল। আমার মায়ের পিতামহ কাশীনাথ দত্ত পরিবার থেকে ভিন্ন হয়ে যান এবং কলকাতার উত্তরে প্রায় ছ’মাইল দূরে বরানগরে বিরাট এক দালাল তৈরি করে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তিনি অত্যন্ত পণ্ডিত লোক ছিলেন—দিনরাত বই নিয়েই থাকতেন। ছাত্ররা নানাভাবে তাঁর কাছে সাহায্য পেত। তিনি কলকাতার জার্ডিন, স্কিনার অ্যাণ্ড কোম্পানি নামে একটি বৃটিশ সওদাগরী অফিসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। আমার মায়ের পিতা এবং পিতামহ দুজনেই তাঁদের জামাতা নির্বাচনে বিশেষ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তখনকার দিনে কলকাতার বিশিষ্ট অভিজাত পরিবার ক’টির সঙ্গে এইভাবে তাঁরা বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছিলেন। কাশীনাথ দত্তের এক জামাতা স্যার রমেশচন্দ্র মিত্র ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম ভারতীয় চীফ্ জাস্টিস্। আর এক জামাতা রায় বাহাদুর হরিবল্লভ বসু আইনজীবী হিসেবে উড়িষ্যায় অসাধারণ প্রতিপত্তি লাভ করেন। তিনি আমার পিতার বহু আগেই কটকে গিয়ে বসবাস করছিলেন।

আমার মাতামহ গঙ্গানারায়ণ দত্ত নাকি আমার পিতাকে জামাতা হিসেবে গ্রহণ করবার আগে তাঁর বুদ্ধিবিবেচনা ভালো করে পরীক্ষা করে নিয়েছিলেন। আমার মা ছিলেন তাঁর বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। মায়ের অন্য বোনদের স্বামীদের নাম বরদাচন্দ্র মিত্র, সি. এস., ডিস্ট্রিক্ট ও সেসানস্জ জ্ বেনারসের উপেন্দ্রনাথ বসু, চন্দ্রনাথ ঘোষ, সাবর্ডিনেট জজ্, এবং কলকাতার রায়বাহাদুর চুণীলাল বসুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ডাক্তার জে. এন্. বসু। ইউজেনিকস-এর দিক থেকে বিচার করে দেখলে একটা জিনিস একটু অদ্ভ‌ুত ঠেকবে। বাবার দিকে আমাদের বংশে বড় পরিবার খুবই কম। মায়ের দিকে আবার এর ঠিক উল্টো। আমার মাতামহের নয় ছেলে ও ছয় মেয়ে। এদের মধ্যে ছেলেদের সন্তানসন্ততি বেশি নয়, কিন্তু মেয়েদের প্রায় সকলেরই সন্তানসংখ্যা অনেক—আমরাই তো ছিলাম আট ভাই, ছয় বোন, এখন বেঁচে আছে সাত ভাই, দুবোন। আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে কার‍ুর কার‍ুর আটনয়টি সন্তান। অবশ্য ভাইদের চাইতে বোনদের সন্তানসংখ্যা বেশি না বোনদের চাইতে ভাইদের সন্তানসংখ্যাই বেশি তা বলা মুশকিল। এসব ক্ষেত্রে এক একটি পরিবারে সন্তানের সংখ্যা মেয়েদের দিকেই বেশি হয়, না ছেলেদের দিকে, তার জবাব হয়তো ইউজেনিস্টরাই দিতে পারবেন।