মহাভারতীয় স্বপ্নপর্ব্ব
শ্রীশ্রীদুর্গা।
শরণং
→₴←
মহাভারতীয়
স্বপ্নপর্ব্ব।
মহামুনি বেদব্যাস কৃত প্রকাশিত।
বিজ্ঞবর ৺কাশীরাম দাস কর্ত্তৃক নানাবিধ
ছন্দে বিরচিত হইয়া।
→₴←
শ্রীযুত বটকৃষ্ণ সেনের
অনুমত্যনুসারে।
≈≈≈≈≈≈≈
কলিকাতা।
সুধানিধি যন্ত্রে যন্ত্রিত।
শকাব্দাঃ ১৭৭৮।
শ্রীশ্রীহরি জীউ।
⇒♦⇐
স্বপ্নপর্ব্ব।
পয়ার। বেদে আর অনেক বৈষ্ণব পুরাণেতে।
মাদ্য অন্ত মধ্যে হরি সর্ব্বত্র গায়তে॥
বেদে রামায়ণে আর পুরাণ ভারতে।
নানা মত শাস্ত্র যত আছয়ে জগতে॥
শাস্ত্র যত বিবরিয়া বুঝিহ উত্তম।
আদ্য অন্ত মধ্যে পরে সার হরিনাম॥
সর্ব্বশাস্ত্র বিজয়ী হরি নাম সুবিস্তার।
প্রণমহ পুস্তক ভারত পাপহর॥
যার নাম করিলে নিস্পাপ হয় নর।
প্রকাশ করিল তাহা ব্যাস মুনিবর॥
অমল কোমল দ্রব্য ত্রৈলেক্য দুল্লর্ভ।
গীত অর্থে কৈল তাহা সুগন্ধ সুলর্ভ॥
প্রফুল্ল পঙ্কজ রূপে করিল নির্ম্মাণ।
কে সব বঞ্চিল হইয়া বিবিধ আখ্যান॥
হরিতে ভকতি বড় প্রকাণ্ড তপোন।
ভারত পঙ্কজ ফুটি যার দর শন॥
উত্তম সুগন্ধি পাত্র হইয়া সুবুদ্ধি।
ভারত পঙ্কজ মধু পিয়ে নিরবধি॥
বিপুল বৈভব ধর্ম্মধ্যানেতে প্রকাশ।
ভারত শ্রবণে কলির কাল সবিনাশ॥
সাটিলক্ষ তন্ত্র ব্যাস ভারত রচিল।
এক লক্ষ শ্লোক তার দেবলোকে কৈল॥
সুরলোকে শুনিয়া নারদ তপো ধন।
ইন্দ্র আদি দেবগণে করিল শ্রবণ॥
দশলক্ষ শ্লোক পশুগণে শুনে।
দেবলোক অমৃতকথা করিল পঠনে॥
দেবলোক পাঠ করেন গন্ধর্ব্ব যক্ষ রক্ষ।
মহাভারতের শ্লোক চতুর্দ্দশ লক্ষ॥
এক লক্ষ শ্লোক প্রচারিল মর্ত্যপুরে।
সংসার সাগর হৈতে উদ্ধারিতে নরে॥
এক মন হৈয়া সবে দিল অনুমতি।
তবে জন্মেজয় রাজা বলে মুনি প্রতি॥
জন্মেজয় রাজা বলে শুন মহামুনি।
কি রূপে হইল শ্লোক কহ দেখি শুনি॥
মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের-নন্দন।
সংসারের সার দেখ আপনি নারায়ণ॥
বৈশম্পায়ন বলে জন্মেজয় শুনে।
পরম পবিত্র কথা ব্যাসের রচনে॥
চারি বেদ সর্ব্বশাস্ত্র এক ভিত কৈল।
ভারত সহিত মুনি তুলিতে তুলিল॥
ভয়েতে অধিক তেঞি হইল ভারত।
ভারত শ্রবণে হয় তারণের পথ॥
বিবিধ পুরাণ তন্ত্র হইল প্রাচারে।
ভক্তি তন্ত্র নানা গীত হইল সংসারে॥
হইল যতেক তন্ত্র পুরাণ হইতে।
পদাবলি কৈল কেহ চরিতামৃতে॥
সুরাসুর নাগলোক এতিন ভুবন।
সংসারের মধ্যে যত হইল সৃজন॥
শক্তি শাস্ত্র গ্রন্থ হইল ভারত ভিতরে।
ভারথ শ্রবণেতে নিষ্পাপ হয় নরে॥
সর্ব্বশাস্ত্র মধ্যে হয় অভীষ্ঠ পুরাণ।
দেবগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠ দেব ত্রিলোচন॥
ত্রিলোচন মধ্যে শ্রেষ্ঠ পশু ভগবান।
সকল শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ ভারত আখ্যান॥
নদ নদীগণ কৈল প্রসব সাগরে।
সকল শাস্ত্রের কথা ভারত ভিতরে॥
অনেক কাল তপ করি ব্যাস মুনিবর।
রচিলেন বিচিত্র শাস্ত্র ভারত অক্ষর॥
শ্লোকছন্দ রচিলেক মহামুনি ব্যাস।
পয়ার ছন্দ কহি আমি শুনিতে উল্লাস॥
সনকাদি মুনিবর নৈমিষ কাননে।
দ্বাদশ বৎসর তপ করে তপোবনে॥
নমইসরের পুত্র মুনি মান ধর।
ব্যাস উপদেশে সর্ব্ব শাস্ত্রতে তৎপর॥
ভ্রমিতে২ গেল নৈমিষ কাননে।
সাটিসহশ্র মুনিগণ থাকে যেই বনে॥
মুনিগণে প্রণমিল নৈমিষ কাননে।
আশীর্ব্বাদ করি দিল বসিতে আসনে॥
সৌতি দেখে কৌতুকে বলেন মুনিগণ।
কহ বাছা মানধর আছহ কেমন॥
তোর পিতা ছিল সৌতি চিরকাল ধ্যানে।
নানা শাস্ত্র বিবিধ প্রকার জ্ঞানবানে॥
শুনিয়া তাহার মুখে বহু শাস্ত্র জ্ঞানে।
তার পুত্র বলিয়া জিজ্ঞাসি তেকারণে॥
কহ সৌতি কি কি শাস্ত্র করিবে শ্রবণ।
কি শাস্ত্র পড়িলে হবে কৃষ্ণ দরশন॥
যাগ যজ্ঞ তপ জপ করিলে বিস্তর।
কৃষ্ণপ্রাপ্তি হবে কিসে কহ মুনিবর॥
তঙ্গর করি সে কাল আসিয়া ধরয়।
দেখিলে স্বপন সবে নিদ্রা ভঙ্গ হয়॥
তাহার বৃত্তান্ত সৌতি জান কিছু তুমি।
কহ২ ইহার শুনিব সে কাহিনী॥
স্বপ্ন বলি সংসারেতে হইল কেমতে।
সবার কহিতে শ্রদ্ধা কহত সভাতে॥
সৌতি বলে শুন তবে সনকাদি মুনি।
পিতৃ মুখে অল্প কিছু শুনিয়াছি কাহিনী॥
এবড় রহস্য কথা হয় মুনি গণ।
অতপর বলে সৌতি করাই শ্রবণ॥
নোমল সকল কহে বাচ্ছ দিয়া আমি।
কহি আমি সভা অন্তে জ্ঞাত হও তুমি॥
সৌতি বলে শুন সভে যত মুনিগণ।
জন্মেজয় আগে কহে ব্যাসের নন্দন॥
স্বপ্ন কথা শুনি মুনি জন্মেজয় কয়।
ষোলসাটী সহশ্র মুনি কহিয়ে তোমায়॥
প্রণমিয়া কাশীদাস সবার চরণে।
স্বপ্ন বলি সংসারে আপনি ভগবানে॥
স্বপ্নেতে হয় সেই কৃষ্ণ দরশন।
সেই দিন ভাগ্য মুনি শুন মুনি গণ॥
ষোলসাটী সহশ্র মুনি সৌতি প্রসংশিয়া।
কহ সৌতি অতপর আর বুঝাইয়া॥
সৌতি বলে শুন সাটী সহশ্রেক মুনি।
শুনেছি পিতার মুখে কহি শুন আমি॥
জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল শুন মুনিবরে।
পুণ্য কথা শুন মুনি পাপ যাকু দূরে॥
ভারত ভাগবত হয় শাস্ত্রের প্রধান।
সংপূর্ণ করিয়া পিতা গেল স্বর্গস্থান॥
উনিশ পর্ব্ব ভারত রচিল কাশীদাস।
স্বপ্নপর্ব্ব সংসারেতে করিল প্রকাশ॥
ডেড় অর্ধ ভাগবত শ্রবণ করিল।
রাধা কৃষ্ণ বিবরণ শুনিতে না পাইল॥
সেই ডেড় অর্দ্ধ মুনি করিল শ্রবণ।
ভারত শ্রবণ লিখে বৈকুণ্ঠে গমন॥
পিতার কাল হৈতে আমি অসুচি হইল।
উনিশ পর্ব্ব ভারত শুনিতে না পাইল॥
উনিশের আঠারো সেই হইয়াছে পুরাণ।
সেই বাকি এক পর্ব্ব কহ তপোধন॥
উনিসের এক পর্ব্ব অশুচিতে গেল।
সংসারেতে উনিশ পর্ব্ব খ্যাত না হইল॥
মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
স্বপ্নপর্ব্ব, জন্মেজয় হয়ত গোপন॥
স্বপ্নপর্ব্ব প্রকাশিতে কৃষ্ণ মানা কৈল।
কাশীদাস তেকারণে গুপ্তেতে রাখিল॥
আঠারো পুরাণ ব্যাস শাস্ত্র করিলেক।
চারি লক্ষ বত্রিশ হাজার কৈল শ্লোক॥
জগন্নাথ দাস কৈল বার ভাগবত।
ব্যাস পুরাণ ভাঙ্গিয়া রচিলেক গীত॥
তার পর কাশীদাস রচিল ভাগবত।
রচিল ভারত কাশী পয়ারের মত॥
এই দুই ভক্ত ব্যাস পুরাণ ভাঙ্গিল।
ভারত ভাগবত তবে সংসারে হইল॥
ভারত ভাগবত ভাঙ্গি করিল আখ্যান।
কে কোথা কৈল সংসারে গীত রামায়ণ॥
ভারত ভাগবত ভাঙ্গিয়া কৃষ্ণ জানে।
ভক্তি শাস্ত্র কৈল দেখি গোসাঞী সুজনে॥
কাশীদাস উনিশ পর্ব্ব ভারত রচিল।
হেনকালে আসি কৃষ্ণ উপনীত হইল॥
শুন কাশীদাস আমি বলি হে তোমারে।
আঠারো পর্ব্ব খ্যাত তুমি করিলে সংসারে॥
সংসারে আঠারো পর্ব্ব খ্যাত কর সর্ব্ব।
স্বপ্নপর্ব্ব খ্যাত কৈলে চূর্ণ তোর গর্ব্ব॥
নানা লীলা কাশীদাস বর্ণনে২।
ব্যাস কৃপা শক্তি তেজে বর্ণন করণে॥
যদিবা বর্ণিলে স্বপ্ন রাখ এ কায়া।
স্বপ্ন লীলা শুনি সবে যাবে মুক্ত হয়্যা॥
স্বপ্ন লীলা যে শুনিরে শুনিয়া পলায়।
শুনিলে স্বপ্নের কথা রোগ দূরে যায়॥
যেমত সে হরিনাম রাধা কৃষ্ণ সে মত।
শুন কাশী স্বপ্ন মোর হয়তো তেমত॥
একাদশী সমান মোর স্বপ্ন লীলা হয়।
যে সবে শুনিবে তার পরমায়ু বাড়য়॥
বিশাসয় দুর হয় মনুষ্যের ভোগ।
যদি শুনে স্বপ্নলীলা না জন্মাইবে রোগ॥
মনুষ্য উপরে দিল যম অধিকার।
করিতে নরের পাপ পূণ্যের বিচার॥
স্বপ্নলীলা মোর যদি সকলে শুনিবে।
নরে পরে কেন যম অধিকার হবে॥
সবে যদি স্বপ্ন লীলা করিবে শ্রবণ।
কেমনে চিনিবে কাশী ধ্যানের কারণ॥
বনপর্ব্ব স্বপ্নপর্ব্ব করিলে বর্ণন।
স্বপ্ন পর্ব্ব কৈলে খ্যাতি তোমার কারণ॥
কাশীদাসে নিষেধিয়া দেবকী নন্দন।
নিষেধিয়া দ্বারিকায় করিলা গমন॥
সৌতি বলে শুন সাটী সহশ্রেক মুনি।
স্বপ্ন বলি সংসারে আপনি চক্রপাণি॥
রাধা কৃষ্ণ করে যেন লীলা রসখেলা।
তেমত সংসারে কৃষ্ণকরে স্বপ্ন লীলা॥
শুকবলে জন্মেজয় না কব তোমায়।
গুপ্ত কথা খ্যাত না কহিতে জুয়ায়॥
তবে জন্মেজয় বলে শুন ব্যাস সুত।
শুনিলে আঠারো পর্ব্ব সে হইল ব্যক্ত॥
দেউল তুলিয়া যেবা প্রতিষ্ঠা না করে।
সর্ব্ব বিনাশতি তার সংসার ভিতরে॥
শুনিলে যতেক ব্রত হয় তপোধন।
গুরু শিষ্য অধ গতি বেদের বচন॥
সৌতি বলে শুন সাটী সহশ্রেক মুনি।
ইতিহাস পুরাণ ব্যাস লিখিছে আপনি॥
জন্মেজয় বাক্য শুনি ব্যাসের নন্দন।
বচন না সরে মুনি ভাবে মনে মন॥
বৈশম্পায়ন বলে জন্মে জয় পাশ।
কাশী কহে না কহিলে হয় সর্ব্বনাশ॥
সৌতি মুখে শুনি সাটী সহশ্রেক মুনি।
কহ সৌতি আগেআর পুরাণ কাহিনী॥
শিশুকালে পিতৃ মুখে এসব শুনিয়া।
শুনিয়াছি এসব আমি ছাওয়াল হইয়া॥
জন্মেজয় রাজা তবে পুটাঞ্জলি হয়্যা।
করহ কৃতার্থ মোরে ভারত শুনিয়া॥
আঠারো পর্ব্ব শুনাইয়ে বৈশম্পায়ন।
নৈমিস কাননে গেল তপস্যা কারণ॥
তপস্যায় গেল মুনি কহিয়া আমায়।
স্বপ্নপর্ব্ব শুনাইলে ব্যাসের তনয়॥
এপর্য্যন্ত পুরাণ না হইল ডেড় অদ্ধা।
ভারত ভাগবত শুনিতে মোর শ্রদ্ধা॥
দেববাণী শুনাতে আছেন শুকদেব।
জন্মেজয় রাজা শুনি পুরাণ করিব॥
দেববাণী আকাশেতে শুনিয়াছি মুনি।
ভারত হইল পূর্ণ ভাগবত শুনি॥
কপট না কর মোরে ব্যাসের তনয়।
শুনিতে তোমার মুখে অমৃতের প্রায়॥
সংসারেতে স্বপ্নবলি হইলা কোন জন।
এহা না বলিলে মুনি ত্যজিব জীবন॥
মুনি বলে জিজ্ঞাসিলে পরীক্ষিত সুত।
সংসারেতে স্বপ্ন যে আপনি জগন্নাথ॥
ছাপান্ন কোটি জীব জন্তু দেখহ সংসারে।
জীব আত্মা রূপে আছে সভার শরীরে॥
বড় দেহ বড় মুক্তি ছোট দেহ ছোট।
সভার শরীরে গুপ্ত আছয়ে কপট॥
আহার মৈথুন নিদ্রা সর্ব্ব জীবে আছে।
জন্ম মৃত্যু জ্বরা ব্যাধি কার নাই আছে॥
খাইলে অনেক ব্যাধি না খাইলে মরি।
অল্প আহার অল্প নিদ্রা সাধু সঙ্গে তরি॥
নিদ্রাগত হৈলে সবে দেখে যে স্বপন।
কহি আমি জন্মে অয় ইতি হাস পুরাণ॥
হিংসা অহঙ্কার আছে সবার শরীরে।
হিংসাতে জন্ময়ে পাপ মরয়ে সংসারে॥
অহঙ্কারি তমগুণে বৈষ্ণব নিন্দা যথা।
পাপ মধ্যে পাপ হয় হইলে মিথ্যা কথা॥
মিথ্যা কথা শুনি যেবা হরে পরধন।
পাপ হয়্যা মহাপাপি সংসারে যেই জন॥
দেউল জাঙ্গাল দেই পুষ্কর্ণি খুলয়।
বিষ্ণু প্রতি রথ দিয়া উৎসর্গ করয়॥
আপনি প্রতিষ্ঠা করি করে আরোহণ।
পুষ্কর্ণি প্রতিষ্ঠা করি জল খায় পুন॥
অমর বলিয়া তারে করে অধিকার
সপ্তম পুরুষ তার নরক ভিতর॥
উহাগে রোপন তরু যেইত জন্মায়।
আনিয়াত তরু গুরু বৈষ্ণবে খায়ায়॥
উছিষ্ঠ দ্রব্য নয়্যা খায়ায় ব্রাহ্মণ।
অন্তকালে নরকেতে যায় সেই জন॥
পাপেতে পুর্ণিত হইয়া সম্পদ বাড়ায়।
বার বৎসরের ধর্ম্ম এক কালে যায়॥
এক গুগে পূণ্য হইল সই গুণে পাপ
অন্তকালে যমালয়ে আছেন কন্দপ॥
শুন রাজা জন্মেজয় পুরাণ কথন।
পাপে মতি চূর্ণ হইল রাজা দুর্য্যেধন॥
কপট সকলি ডাকি পাসা খেলাইল।
দুর্য্যোধন কর্ম্মেদৃষ্টি হতো হইল॥
লইল সকল ধন পাসাতে জিনিয়া।
সভা হইতে পার্থ ভাই দ্রোণেতে লইয়া।
পঞ্চালের কেসে ধরি খল বুদ্ধি মন্ত।
সভাতে দ্রোপদির লজ্জা রাখিল গোবিন্দ॥
পাণ্ডবের দুখ দিল গান্ধারি নন্দন।
পঞ্চ জন দুখ দেখি ভাবেন নারায়ণ॥
সহজে হইল তাহে অতি পরাধিন।
রাজ্য শ্বর পুত্র বলি বলে সর্ব্বজন॥
দুর্য্যোধনে কৃষ্ণ বৈল শুন বলি আমি।
পাসযুর্দ্ধে সকল যিনিয়া নিলে তুমি॥
পঞ্চজনে পঞ্চখানি গ্রাম দিয়া রাখ।
রাজ পুত্র হইয়া কেন পাবে বড় দুখ॥
শুনিরাজা দুর্য্যোধন হইল কম্পবান।
হেন বাক্য বল মোরে গোয়ালা নন্দন॥
শুচ অগ্রে যত ভূমি আমি নাহি দিব।
বিনা যুদ্ধে পাণ্ডবে পৃথিবিতে না রাখিব॥
যুদ্ধ মোর অঙ্গিকার কহি সেত দড়।
হেন বাক্য কোন লাজে কৈলে তুমি বড়॥
দেখিতে নাপারি রাজা পঞ্চজনের দুঃখ।
ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র হইয়া হইলি বড় মূর্খ॥
শুচ অগ্রে যতভূমি নাহি দিব আমি।
বিনা যুদ্ধে নাহি দিব শুন চক্রপাণি॥
এই রূপে কত দিন গেল ছয় মাস।
মন দুঃখ ভাবি কৃষ্ণ গেল রাণীর পাস॥
মৃগয়াতে গিয়াছিল দুর্য্যোধন রায়।
হস্তীনাতে গেলত কৃষ্ণ ফাকার সময়॥
অন্তস্পুরে গিয়া কৃষ্ণ প্রবেশ করিল।
শুয়েছিল ভানুমতি সিয়রে বসিল॥
সুবর্ণ পালঙ্কে রাণী শুয়ে নিদ্রা যায়।
সিয়রে বসিয়া কৃষ্ণ স্বপন দেখায়॥
শুয়ে আছে ভানুমতি শুন পাট রাণী।
পঞ্চপাণ্ডব দুখ পায় তোমার বাখানি॥
ইন্দ্র প্রস্তে বড় দুঃখ পায় পঞ্চ ভাই।
মধ্যস্ত হইয়া আমি ছিনু রাজার ঠাই॥
দুর্য্যোধন রাজাকে কহি লাম যে বচন।
পঞ্চখানি গ্রাম দিয়া কর সমার্পণ॥
তার বাক্য শুনিয়া হইল ক্রোধমনে।
শুচ অগ্রে যত ভূমি না করিব দানে॥
যুদ্ধ করি নিতে পারে মোর বাক্য দৃঢ়।
বিনা যুদ্ধে আমি কারে না দিব এগৌড়॥
তুমি গৌড় জগতের গোধন রাখাল॥
রাখাল সবার কথা মোর গায়ে বাজে শাল॥
পাণ্ডব তোমার গুরু তুমি তার শিষ্য।
সেইত আমার শত্রু থাক তার পাশ॥
মোর শত্রু সঙ্গে ফের নফর হইয়া।
যথায় পাণ্ডব যায় সঙ্গেতে করিয়া॥
মোর বাক্য না শুনিলে রাজা দুর্য্যোধন।
গৌউড় হাউড় বলি কহকু সভাজন॥
যুদ্ধ অঙ্গিকার কৈল মান চক্রবতি।
নিদ্রাতে আশ্চর্য কহি শুনি ভানু মতি॥
জাগন্ত থাকিলে কত সুনিতে সেকানে।
নিদ্রাগত আছ কহি দেখহ স্বপনে॥
স্বপ্ন দেখাইয়া তোরে কহি ভানুমতি।
এই সব যত কথা বুঝাই সংপ্রতি॥
ভাল মন্দ স্বপ্ন দেখইয়া জগন্নাথ
স্বপ্ন দেখি ভানুমতি উঠে অকস্মাৎ॥
সৌতি বলে শুন সাটি সহশ্রেক মুনি।
ইতিহাস পুরাণ পিতার মুখে শুনি॥
সমস্ত পুরাণ মত পিতার সব কথা।
অমৃত্য কাহিনী তুমি শুন সর্ব্ব কথা॥
সংসারে স্বপ্ন আপনি নারায়ণ।
বৃন্দাবনে রাধা কৃষ্ণ লীলা সে যেমন॥
বিষ্ণুর মায়াতে নর বুঝিতে না পারে
স্বপন রূপেতে কৃষ্ণ আছেন সংসারে॥
নয়ন ইঙ্গিতে যুগ্ন করি কত শত।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর নাই পায় অন্ত॥
কোটি ব্রহ্মা কোটি বিষ্ণু কোটি শিব জান।
সমুদ্র সুমেরু কোটি কে করে গণন॥
কৃষ্ণ অন্তে কোটি২ ইন্দ্র দেবগণ।
ধ্যায়ানে সকল লীলা হয়তে কারণ॥
তৈলের মাথায় তৈল দেয় সর্ব্বজন।
রুখু মাথায় তৈল নাহি দেয় কোনজন
পঞ্চ মতে স্বপন দেখায় নারায়ণ।
শুন ভানুমতি আমি কহি যে বচন॥
রাণীকে স্বপ্ন দিয়া গেল জদু পতি।
নিদ্রা ত্যজে উঠিল সে রাণী ভানুমতি॥
স্বপন দেখায়ে কৃষ্ণ গেল নিজবাসে।
পাঁচালি। প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাসে॥
পয়ার। সৌতি মুখাশ্চার্য দেখি সাটি সহশ্রেক মুনি।
ইহার পর কিবা আছে পুরাণ কাহিনী॥
একেসে ছায়াল তুমি বচন অমৃত।
নমই সান বাপু তুমি সকল শাস্ত্র জ্ঞাত॥
সৌতি বলে শুন মম কথা কহিনু সে আমি।
পুরস্কার আমারে সে কত কর তুমি॥
শুনহ অগস্ত মুনি আমার বচন।
ব্যাসের পুরাণ হয় অমৃত সমান॥
ইতিহাস পুরাণ হয় অমৃত আখ্যান।
ইতিহাস পুরাণ মধ্যে শুন গান॥
অমৃত দানেতে ক্ষুথা হয় নিবারণ।
রাধা কৃষ্ণ বৃন্দাবনে মাধূর্য্য লিখন॥
কেমন স্বপন বলা সংসারেতে হয়।
কৃষ্ণের মায়াতে অন্তু কেহ নাহি চায়॥
আঠারো পর্ব্ব ভারত মাঝে স্বপ্নপর্ব্ব।
এপর্ব্ব শুনিলে সুখি হয় লোক সর্ব্ব।
ভারতের স্বপ্নপর্ব্ব শুনিলে স্বপ্ন যায়।
ভারতের আঠারো পর্ব্ব সার স্বপ্ন হয়।
বৈশস্পায়ান শুনাইছে জন্মেজয়।
শুনি সাম্বক আঠারো পর্ব্ব শুনাবে আমায়॥
জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল কহ তপোধন।
স্বপন দেখি ভানুমতি কি করিল পণ॥
অমৃত সমান এই স্বপ্নপর্ব্ব হয়।
শুনিলে আঠার পর্ব্ব কেমতি উপায়॥
নিশ্চয় কহিনু আমি পাপ দূরে যায়।
স্বপ্নপর্ব্ব আমারে শুনাও মহাশয়॥
আগে যদি এই পর্ব্ব মুনি শুনাইতে।
ভারত উনিশ পর্ব্ব সবাই জানিতে॥
আগে যদি এই পর্ব্ব করিত শ্রবণে।
না ফলিত ব্রহ্মশাপ পরীক্ষিত রাজনে॥
জন্মেজয় রাজা তবে কৃতাঞ্জলি হয়ে।
নিষ্পাপ করহ মুনি স্বপ্নপর্ব্ব কয়ে॥
মুনি বল শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
স্বপন দেখি ভানুমতী উঠিল তখন॥
গিয়াছিল হরিণী শিকারে নৃপবর।
সৈন্যগণ লয়্যা অইল হস্তিনানগর
আনন্দেতে প্রবেশ করিল নরপতি।
সৈন্যগণ গেলা তবে যার যথা সৃতি।
রত্নের পালঙ্কে গিয়া বৈসে দুর্য্যোধন।
খসাইল জামা যোড়া যত যায় মন॥
দাসীগণ আসিয়া চরণ ধুয়াইল।
ষোড়শ পচারেতে ভোজন করিল॥
আচমন করিয়া বলিল যে আসনে।
তাম্বূল যোগায় দাসী রাজার বদনে॥
মুচকি হাসিল রাজা তাম্বূল খাইতে।
দাসীগণ চামর ঢুলায় চারি ভিতে॥
তেমন সময় গেল রাণী ভানুমতী।
বিরস বদন হয়্যা বৈসে রাজা প্রিতি॥
রাণীরে দেখিয়া রাজা বলিল বচন।
আজি কেন দেখি রাণী বিরস বদন।
যে কারণে মন দুখি শুন মহাশয়।
কহিব দুঃখের কথা যদি আজ্ঞা হয়॥
রাজা কহে প্রিয়া যদি ভাল মন্দ কথা।
উচিত না কহ মিথ্যা না কবে সর্ব্বথা॥
শুনিয়া রাজার কথা কহে ভানুমতি।
কুচিত স্বপন দেখিলাম নরপতি॥
আপদ পড়িল রাজা পাবে বড় দুঃখ।
কুস্বপন দেখিয়া মোর বিদরে বুক॥
পালাল পড়েছে আর পড়েছে আরষ্ট।
কৃষ্ণেতে পাণ্ডবে বৈরি পায়ে বড় কষ্ট॥
আজি আমি নিশি শেষে দেখিছি স্বপন।
নারায়ণের দুঃখে মোর বিদরে পরাণ॥
ঘরেতে দেখিলে স্বপ্ন পর ঘর হন।
অপর দেখিলে স্বপ্ন ঘরেতে ফলেন॥
অমঙ্গল স্বপ্ন দেখি ধৃতরাষ্ট্র বলে।
হইল পরমাই শেষ পুরিল তৎকালে॥
মত্যা কৃষ্ণ তুমি নিন্দা কৈলে নরপতি।
বুঝি প্রায় যে তোমার হস্তিনা সম্পতি॥
অপর ঘরের স্বপ্ন শুনি দুর্য্যোধন।
পরেতে দেদেখিলে স্বপ্ন ঘরেতে মরণ॥
স্বপনে নিদ্রায় যদি দেখে কালসাড়।
ঘরে পুত্র পুড়িমরে বধূ হয় রাড়
সন্যাসী স্বপনে যদি দেখে যেই জন।
ঘরে পরে গর্ভনাশ হইরে শ্রগণ॥
নিদ্রাতে স্বপনে যদি দেখিবে গোমুড়।
সেই দিন জানিবে বেদ উনিবেক রাড়॥
গালাগালি স্বপনেতে যদি দেখে প্রাণি।
ঘরে কিবা পর গৃহে আসিবে ডাকিনী।
দেখিব স্বপনে, যদি পুষ্পের বাগান।
অনুম্রতা কেই কোথা হইবে স্ত্রীগণ।
স্বপনে নিদ্রাতে যদি দেখিব কুক্কুর।
জানিবে কে কোথা কৈল ব্রাহ্মণ সংহার॥
স্বপনে নিদ্রাতে যদি দেখিবে মহিষী।
জানিল বংশেতে কাল গরসিল আসি।
স্বপনে যেইজন দেখিবেক হাতী।
সেই দিন জানিব দৃষ্টি লক্ষ্মী-সরস্বতী॥
নানা স্বপ্ন স্বপনেতে দেখি নর পতি।
ঘরে পরে কন্যা কার হবে পুষ্পবতী॥
স্বপনে নিদ্রাতে মন্থ দেখিবে যে নিশি।
জানিবে সেজন চক্র গরাশিল আসি।
রোগ বেদসি স্বপনে দেখিব অগ্নি কুণ্ড।
কার কেবা যাদু কৈল বল জোন মুণ্ড।
মুসরি শস্য যেই দিন দেখিব স্বপনে।
ঘরে পরে বসন্তে কেবা মরিব অন্যস্থানে॥
নাভিতে স্বপনে কেবা পার হয় নদী
ঘরে কিবা পরে শত্রু মারিবেক যদি॥
নাভিতে কাণ্ডারী যদি দেখিব স্বপনে।
জানিব সে জন কোথা গুরু পত্নী হরণে॥
বিভান গোন স্বপনে দেখিব যেই জন॥
কুদ্রি দিনে ছাড়িবে লক্ষী ছাড়িবে দিন॥
স্বপনেতে ধান্য কওড়ি দেখিব যে নিশি।
উপবাসী কার ঘরে রহিল পরবাসী॥
স্বপনে দেখিব যদি বনে লাগে অগ্নি॥
কে কোথা করয় যজ্ঞ ঘৃতে হইল বিগ্নী।
স্বপনে দেখিব বৃক্ষ কেবা কৈল কাঠি।
ভাই২ কোথায় কে হইবে ঘর বাটী॥
স্বপনেতে দেখি মাটী গর্ত্ত খুলয়।
জানিব সে জন চক্রকারে গরাশয়॥
কেবা কোথা কাটে ধান্য দেখিব স্বপনে।
জানিব সে কার শত্রু কাটিবে সে দিনে॥
নিদ্রাতে স্বপনে যদি দেখি প্রজাপতি।
কার ঘরে নাই পূজে লক্ষী সরস্বতী॥
স্বপনে দেখিব দল সাজিব নৃপতি।
ঘরে কি পরে আসে এছার যুবতী॥
স্বপনে দেখিব রাজা কোথা হয় রণ।
আকাশ হইতে বৃষ্টি হইয়ে যেদিন॥
দেখিব স্বপনে মেঘে পড়িবে চিকূর।
জানিব রাজ্যেতে হইব রাজ নৃপবর॥
স্বপনে দেখিব রাজা করে দরবার।
জানিব সে পিতৃগণ ক্ষুধায় আবার॥
এসব স্বপন যদি যে নর দেখিবে।
সমগ্র সার্থক জন্য লোকে দান দিবে॥
ব্রারূণ বৈষ্ণব আর যত পিতৃগণ।
এই কথা না লইব কহিলাম বচন॥
পুত্র হইয়ে পিতার ধর্ম্ম করে যে পুরুষ।
গয়ার শ্রাদ্ধের কালে ধরে তিন কুশ॥
অন্য মত হবে নাই দক্ষিণ সে দিবে।
পিণ্ড লইয়া পিতৃগণ দেবলোকে যাবে॥
স্বপনে দেখিব যবে মৃত্যু লোক জন।
ঘরে পরে কিবা মৃত্যু হইবে সেই দিন॥
নানা জাতি ফুল যবে দেখিব স্বপন।
ঋতুস্থান হবে কার হইবে নন্দন॥
ভাল মন্দ কুস্বপন শুনহ রাজন।
অপরে দেখিলে স্বপ্ন ঘরে হয় পণ॥
স্বপনের প্রায় তোর উনশত ভাই।
কৃষ্ণ নিন্দা করি তারা যাবে অপ্রমায়ী॥
স্বপনেতে দেখিবে যত রাজধন।
কুবের ধন প্রাপ্তি দরিদ্র লক্ষণ॥
যত স্বপন দেখিলাম শুনহ রাজন।
পাণ্ডবেরে রাজ্য দিয়া চিন্ত নারায়ণ॥
সকলের কথা যে পাণ্ডবেতে অইরি।
বুঝি প্রায় মজে তোর হস্তীনা নগরী॥
আজি আমি শত২ দেখেছি স্বপন।
উনশত ভাই তোর হয়েছে নিধন॥
মোর বাক্য সত্য করি মান চক্রবর্ত্তী।
পাণ্ডবেরে রাজ্য দিয়া সভাই শ্রীপতি।
রাজ্য দিয়া যদি কর আপনি মুখ বোঝা।
বহাইবে রক্তে নদী তবে ধর্ম্মরাজা॥
সৌতি মুখে শুনহ যতেক মুনিগণ।
ইতিহাস পুরাণ এই ব্যাসের রচন॥
নমইসরের মুখে এসব শুনিয়া।
শুনিয়াছি পিতার মুখে ছায়াল হইয়া।
জন্মেজয় আগে কহে ব্যাসের নন্দন।
স্বপন কথা কাশীরাম দাস বিরচন॥
পয়ার। জিজ্ঞাসে অগস্ত মুনি সৌতি মুখ চেয়ে।
আর কি শুনছ সৌতি কহ বুঝাইয়ে॥
আপনি শ্রীকৃষ্ণ যদি সংসারে স্বপন।
শুনিয়া নিষ্পাপ হকু যত মুনিগণ॥
কৃষ্ণের স্বপন তাহে ব্যাসের নন্দন।
নমইসরের মুখে করেছ শ্রবণ
আমার সম্পূর্ণ ভাবে সৌতি আইল হেথা।
কৃতার্থ করাইলে বলে পুরাণের কথা॥
আর কিছু কহি নমইসরের সুত।
ব্যাসের পুরাণ মিথ্যা নহে কদাচিত॥
সৌতি বলে শুন ষাটি সহস্রেক মুনি।
তবে কহি শুন সবে পুরাণ কাহিনী॥
ইতিহাস পুরাণ কথা ব্যাসের বচন।
শুনিয়াছি পিতার মুখে কহি তেকারণ॥
জন্মেজয় আগে কয় ব্যাসের তনয়।
কহ শুকদেব মুনি পাপ যাউক ক্ষয়॥
কাগজে চরিত্র স্বপন যে ভারত।
শুনি তবে কি বলিল ধৃতরাষ্ট্র সুত॥
ইহা তবে বুঝিয়া কহ মহামুনি॥
খণ্ডিবেসে মহা পাপ স্বপ্ন কথা শুনি।
কৃষ্ণ কথা প্রসঙ্গ না হয় যেই দিন।
দিন বলি দিনে না করি গণন॥
মুনি বলে শুন পরিক্ষীতের নন্দন।
গুপ্ত কথা কহিতে নাহিক আমার মন॥
আঠার পর্ব্ব খ্যাত না করিল বৈশম্পয়ান।
স্বপ্নপর্ব না কহিয়া গেল তপোবন॥
প্রকাশ করিতে কহ পরিক্ষীতের তনয়।
আঠার পর্ব্ব সার এই স্বপ্নপর্ব্ব হয়।
বৃন্দাবনে রাধা কৃষ্ণ গুপ্ত লীলা করে।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর দেব অগোচরে॥
ভারত আঠার পর্ব্ব অমৃত সমান।
অমৃত অধিক এই কহি এবে শুন॥
এই পর্ব্ব শুনিলে রোগ যে দুরে যায়।
তিন দিন শুনিতে রোগেতে মুক্ত হয়॥
রাহু শনি গ্রহ পীড়া না করহ বাধা।
ধন পুত্র বাড়ে তার শুনিতে বড় শ্রেদ্ধা॥
শুনিলে আঠার পর্ব্ব স্বর্গবাসী হয়।
স্বর্গ গেলে বৈকুণ্ঠ ভোগ ব্যাসদেব কয়॥
ভারত ভাগবত আর দ্বাদশ স্কন্ধ।
স্বপ্নপর্ব শুনিলে পাইবেক গোবিন্ধ॥
ভাল মন্দ স্বপ্ন দেখি কহে ভানুমতী।
শুনি দুর্য্যোধন রাজা কহিল ভারতি॥
দেখিয়া স্বপ্ন রাণী কহিল আমায়।
কপালে লিখন ধাতা খণ্ডন না যায়॥
জন্মিলে অবশ্য রাণী হয়ত মরণ।
জীয়ন্তে পাণ্ডব শুন না করি সম্মাণ॥
শুনি রাণী ভানুমতী শ্রীকৃষ্ণের কথা।
আমার সে ঐরি সঙ্গে থাকেন সর্বথা॥
শত্রু সঙ্গে থাকে যদি সেই শক্র হয়।
শত্রু সঙ্গেকরি কৃষ্ণ আইল হেথায়॥
অসতীর হইয়া কৃষ্ণ না রহিল ঘরে।
আমার শত্রুর সঙ্গে নিরস্তর ফেরে॥
শত্রুর ভাব সত্য শ্রত কৃষ্ণ নিন্দা করি।
উচিত কহিতে কথা কৃষ্ণ হইল বৈরি॥
কৃষ্ণ সে আমাকে দৃষ্টি সকক্ত লোক বীর।
কৃষ্ণ ঐরি ভাব করি কে বাচে শরীর॥
যত স্বপ্ন কহ রাণী সব বল মিছা।
জীয়ন্তে পাণ্ডবে আমি না ছাড়িব পিছা॥
কিম্বা আমি মারি তারে সে মারুক মোরে॥
কৃষ্ণের ভরসা করে পাণ্ডব কুমারে
ধনহীন সৈন্যহীন পাণ্ডব-নন্দন।
পাণ্ডব মারিব আমি যুদ্ধ করি পণ॥
গদা যুদ্ধে খেদাড়িয়া মারিব আমি ভীমে।
বিনা যুদ্ধে পাণ্ডবেনা দিব পঞ্চগ্রামে॥
দুর্য্যোধনের বাক্য শুনি বলে ভানুমতী।
সান্তনা করিহ রাজা শ্রদ্ধের প্রতি॥
গোবিন্দের কথা রাজা না কর হেলন।
পাণ্ডব সহায় কৃষ্ণ তোমার মরণ॥
তুমি কি জাননা রাজা গোবিন্দের কথা।
ইন্দ্র বাদ করি কৃষ্ণ লজ্জা পাইল তথা॥
সড়গুণে বকাসুরে মায়াতে মজিল।
যমোল অর্জ্জুন মারি পৃথিবী উদ্ধারিল॥
দুষ্ট দানব দৈত্যগণ না রাখিল হরি॥
গোবিন্দ শরণ কর বাচে তোর পুরী॥
করহ কৃষ্ণ নিন্দা পর ঘর চিনি।
দিয়া তারে পঞ্চগ্রাম মিনই এখনি॥
সকলের কথা শুনি মুখ কর বোঝা।
বহাইতে রক্তে নদী তবে ধর্ম্মরাজা॥
আজতো সপনে রাজা দে দেখিয়াছি যাহা।
পালন পড়েছে রাজ্য ভাঙ্গে তোর বাহা॥
সপনে দেখেছি রাজা হস্তীনা নগরে
সিংহদ্বার চাপিয়ে বসেছে বৃকোদরে॥
আপনি সারথি কৃষ্ণ অর্জ্জুনের রথে।
জিনয় অর্জ্জুন বীর যুদ্ধয়ে ভারতে॥
পাচহস্ত উপরে বসেছ ধর্ম্ম রায়।
রাজ সিন্ধ পাঠে রাজা সেই দিন হয়॥
কতেক কহিব রাজা পাণ্ডবের কথা।
পাণ্ডব সহায় কৃষ্ণ কাটিবে তোর মাথা॥
সপনে দেখিছি রাজা নব দণ্ড ছাতা।
ধর্ম্ম রাজা হইয়ে রাজ্যের বিধাতা॥
একেত পঞ্চাশ গুন রাজ্যের পালক॥
অন্নদাতা রাজার মিলেছে প্রজা লোক॥
সপ্নের কথা মিথ্যা নহে দুর্য্যোধন।
পাণ্ডবের রাজ্য দিয়ে চিন্তে নারায়ণ॥
মোর কথা শুনি কর পাণ্ডবের প্রীতি।
না শুনিলে তবে তুমি যাবে অধোগতি॥
নিদ্রাতে সপনে রাজা দেখিয়াছি যাহা॥
উপাড়িছে ভীমসেন দুশ্বাসনের বাহা॥
দুশ্বাসনের রক্তে স্নান করেছে সুন্দরী।
বামগত বুলয়ে রাজা যমের উগড়ি॥
গৃধিনী শৃগাল সকল করে টানাটানি।
কুরুক্ষেত্রে বহিয়াছে সাত তাল শুনি॥
আর কিছু সপ্ন কহিল গান্ধারীকে।
আই বুড়া মেয়ে যদি বাপ ঘরে থাকে॥
জানিবে তাহার ঘরে পাপ পরশিল।
অধগতি সপ্তম পুরুষ যে মজিল॥
সেইত গ্রামের লোক মহাপাপী হয়
তার পাপে রাজা মৃত্যু বিভা নাই দেয়॥
রক্তে নদী সপনেতে দেখি আছি নৃপ॥
রজসলা স্ত্রী মুখ দেখিলে মহাপাপ॥
রজসলা স্ত্রী সঙ্গে পুরুস কথা কয়।
পাপেতে পুর্ণিত করি নরকেতে যায়
তাহার হাতের অন্ন বিষ্ঠা সুরাপান॥
পুষ্প গন্ধে দুর্য্যোধন তোমার যেমন।
সপ্তদিন গেলে যদি স্ত্রী স্থান যদি করে।
তবে অন্নজল শুদ্ধ শুন নৃপবরে॥
চারি দিনে কৈল স্নান পাপ পূজা করয়।
পাপ পূজতে দুর্য্যোধন তোমার জনম হয়॥
এই সব অমঙ্গল শুন দুর্য্যোধন।
পাপ পূজাতে গারি আর সপন শুন॥
সপনেতে দেখে যদি সর্প ধরে ফণা।
ঘরে পরে কোলাহল হয় সেই দিনা॥
সপন নিদ্রাতে হয় মহিত দরশন॥
জগন্নাথ দরশন পুণ্য ফল যেন॥
দেব অঙ্গে সেযে পুরুষ সপনে করে রতি।
দেবকন্যা স্ত্রী সঙ্গে ভুঞ্জয়ে রাতি॥
দেবকন্যা বায়ু রূপে অঙ্গে ভর দিয়া।
পিযসে চলায়ে বায়ু মাজা ক্ষীণ হইয়া।
প্রভাতে উঠিলে মুখ থাকে তার যদি।
পাপ পূজাতে কেহ ছাড়ে তাহার সংহতি।
পাপ পুজে তোমার জন্ম শুন দুর্য্যোধন।
পাপেতে তোমার মতি ধর্মে নাই মন॥
পাপেতে তোমার দেহ হইয়াছে পুর্ণ।
আর কিছু স্বপ্ন বলি শুন দুর্য্যোধন॥
নিদ্রায় পুরুষ স্ত্রীর নিশ্বাস খরোতর।
কিবা সে পুরুষ মরে স্ত্রী মরে কাহার॥
সপনেতে পুরুষ নারী পরে ফুল হার।
তাঁর অঙ্গ সে ফুল হয় শনি রাহু ভার॥
ফূলেতে ফুল নাহি ফুলে রাহু রাজা॥
ফুলে শনি রাহু রাজা নারী হয় রাজা॥
যজ্ঞ হুম করিলে সন্তান যদি হয়
সপ্নেতে রাহু গ্রহ মারিয়ে বসয়॥
বারমাস বই কিবা যন্মে যে সন্তান।
যজ্ঞ করিলে শনি রাহু হয় বলবান॥
নিশিতে তুলশী দিলে শনির তেজ হয়।
পাপ পূজোতে থাকিলে দেহের পাপ পলায়॥
শনি রাহু গ্রহ রাজা তেজয়ে ব্রাহ্মণ।
ফল ফুলে হরিলেই পাপ যে খণ্ডন॥
দ্বিচারিণির বিয়ে পুরুষ যদি হয়।
তবে শনি রাহু পিড়া দুরেতে পলায়॥
তবে ফল ফুল রয়ে বাচে যে সন্তান।
তেমতি তােমার জন্ম গান্ধারী নন্দন॥
অমাবস্যা শন্ধেকালে তােমার জনম।
কৃষ্ণেতে পাণ্ডবে বৈরী হইলে অধম॥
দুঃখ বিনে সুক তাের কখন না হবে।
হস্তীনাতে আইলে লক্ষী উড়িয়া পলাবে॥
দুষ্ট গৃহে হতােলক্ষী বাস করে গিয়া।
খেতের শস্য পরেতে যায় হানি হৈয়া॥
কহিয়াছে সপ্নে কৃষ্ণ দুষ্ট বড়ো কথা॥
মরােণ তােমার হইবে সর্ব্বথা॥
আর কিছু সপ্ন কহি শুন মহাশয়।
অপর দেখিলে সপ্ন নিযো ঘরে হয়
সপনেতে যেই স্ত্রী পরয়ে শিন্দূর।
ঘরে কিবা পরে স্বামী মরয়ে তাহার॥
সপ্নেতে কাহার দেখি কেশ বিগলিত॥
যানিব সে দিন ঘরে বাস করে ভুত॥
সূর্য্য অস্ত হইলে নারী কেস আচড়ায়।
সামীকে করয় পিড়া বিধবা সে হয়॥
ধান ভানে ঢেকীতে যদি দেখিব সপন।
লক্ষ্মীছাড়া হইবেক রাজা দুর্য্যোধন॥
হতোলক্ষ্মী দৃষ্টি তোরে হলি লক্ষীছাড়া।
এতোদিনে হস্তীনাতে শনি আইল বেড়া॥
এইতো সপন দেখি শুন দুর্য্যোধন।
অনু সতো ভাই তোর নিশি যাগরণ॥
স্ত্রী হয়া গাভি দুহে যে করে ক্ষেতি কর্ম্ম।
ধান্য ভানে পুরুষেতে নাহি সয় ধর্ম্ম।
এই সব অপোমানে লক্ষী কম্পবান।
লক্ষ্মীতে করয়ে পীড়া সর্ব্বত্রে মরণ।
তোমার হইবে মির্ত্ত শুন দুর্য্যোধন।
সপনেতে দেখিয়াছি নূতন বসোন॥
পাপেতে পূর্ণিত হৈয়া কয় কেহ মিঠা।
সপনেতে দেখিয়াছি বুকে এক কাটা॥
সোনা রুপা সপনেতে দেখিবে যেই যন
এসব দেখিলে রাজা পাপেতে মরণ॥
শ্রীগুরুব্রাহ্মণ যেই সপনে দেখায়।
রাধাকৃষ্ণও প্রাপ্তি অন্তে বৈকুণ্ঠেতে যায়॥
গাছ মাছ ফুল ফুলো সপনে দেখয়।
অল্পদিনে পুর্ণ আই অন্ত কে কোথায়॥
ঝড় বৃষ্টি সপনে দেখিছে কুসপন।
দিনেতে শুইলে রাজা অবশ্য মরণ॥
নরের পরমাই বিসাশয় বৎসর।
দিবসে শুইলে কমে পর মাই তাহার॥
দ্বিতীয় দিবসে চন্দ্র নর যুবা হয়।
অমাবস্যা হইলে পরমাই কময়॥
দিনেতে শুইলে না বাচয় বহু দিন।
রোগ কেহ হয় যুবা মুনির বচন॥
দিনেতে শুইলে পাপ অঙ্গে ভর দেয়।
রাহু শনি গ্রহ পীড়া আসি সে ধরয়॥
অল্প দিনে মরে কেহ বাঁচে বহু দিন।
বৃদ্ধ হইয়া পাপে মরে জন্মিয়া মরণ॥
আর কিছু স্বপ্ন তোর কহি নৃপরায়।
পঞ্চটা অঙ্গুলী মুখে যেবা অন্ন খায়॥
গোমাংস সমান অন্ন বৃষ্ঠে সে ভোজন।
ভোজনেতে বিষ অঙ্গুলী না ছুবে কখন॥
অর্জ্জুন বিন্ধিয়া লক্ষ দ্রপদী আনিল।
আনিল সে ফল বলি মায়েরে কহিল।
কুন্তী বলে পঞ্চ ভাই বেটে খাও গিয়া।
ফল নয় জননীগো হয় এক মেয়া॥
কুন্তী বলে মোর বাক্য না হবে লঙ্ঘন।
পঞ্চজন করে বিভা বেদের বচন॥
অমৃত অধিক চারি অঙ্গুলী সে মিষ্ট।
বিষ অঙ্গুলী ভীমসেন মনে হয় দুষ্ট॥
স্বপনে দেবতা হীন সর্ব্ব যে ভক্ষয়।
ভীমসেন অঙ্গুলী হয়ত সর্প প্রায়॥
শুন রাজা দুর্য্যোধন আমার বচন।
সর্পের গরল প্রায় হয় ভীমসেন।
কহিয়াছে স্বপনে কৃষ্ণ শিয়রে বসিয়া।
ভাঙ্গিবে তোমার উরু গদাবাড়ি দিয়া॥
স্বপ্ন কথা সত্য করি মান দুর্য্যোধন।
কৃষ্ণ বসে অদ্ধ অঙ্গ হয় যে স্বপন॥
স্বপ্ন যেই জম দেখে ভাগ্যবান হয়।
অভাগ্য কপাল যার স্বপ্ন না দেখয়॥
একাদশী ব্রত কৈলে যত পুণ্য হয়।
দশ গুণ পুণ্য পায় স্বপ্ন যে দেখয়॥
যেমন সে একাদশী তেমন স্বপন
সৌতি বলে শুন সবে যত মুনিগণ॥
আর কিছু বলি শুন স্বপ্ন গুণাগুণ।
স্বপনে যেমত কথা কহি সে রাজন॥
পয়ার। জিজ্ঞাসিল জন্মেজয় শুক মুখ চেয়ে।
নিস্পাপ করহ মোরে স্বপ্ন কথা কয়ে॥
যেমন সে একাদশী তেমন স্বপন।
স্বপ্ন কথা শুনি চিন্তে নারায়ণ॥
স্বপ্ন নিদ্রাতে ছিল রাজাত গৌউড়।
সর্ব্ব পাপ ছিল রাজা যেমন হাউড়॥
স্বপনে চন্দন চুয়া কুম২ দেখায়।
সেই দিন জানিব কার গর্ভপাত হয়॥
রক্ত নদী স্বপনেতে যে নর দেখিবে।
কাহাকে ডাকিনী খেয়ে আর নামে দিবে।
রূগীকে বকায় ডাইন অন্য নাম কয়।
অন্য লোক বলে তবে এই ডাইন হয়॥
অন্যের কথাতে ভুলি পাণ্ডবেতে হিংস।
বুঝি প্রায় মজাইবে হস্তিনার দেশ॥
স্বপনে দেখিবে যবে মেঘের গর্জ্জন।
মাথা বেথা প্রতি দিন হবেক সেজন।
মাথা বেথা নহে তার বজ্র মারে শিরে।
ব্রহ্মা ভোলে নিন্দিছে পুরে মাথা বেথা করে।
বায়ু রূপে যমদুত বজ্র মারে শিরে॥
অদ্ধ কপালি বলি বলে যে সংসারে।
শিরে বজ্র পড়ে পুত্র মৈলে ভাল হয়।
ব্রাহ্মণ নিন্দা কভু সহ লিখন না যায়॥
সত্য শাস্ত্র দিন নাহি রাজত্ব পাশরি।
অপরাধীন নরক ভোগ পাপ যম পুরী।
যুধিষ্ঠির রাজা হয় বিষ্ণু পরায়ণ।
মত গর্ভ নিন্দা কর নাহি পরিত্রাণ॥
শুন রাজা দুর্য্যোধন তুমি বড় অন্ধ।
গৌউড় হাউড় বলি কৃষ্ণ কর নিন্দ॥
কৃষ্ণ নিন্দা কর রাজা যাবৈ অধগতি।
আর কিছু স্বপন কহি শুন নরপতি॥
ঘ্রত মধু তৈল যদি স্বপনে দেখিব।
কাহার হইবে মৃত্যু কে মধু খাইব।
নিদ্রা তে স্বপ্ন যেবা দেখে সমুহ যশ।
ঘরে পরে আমি সুর দুরে পরবশ॥
স্বপ্ন নিন্দাতে স্ত্রী পরের কুমারী॥
ঘরে পরে স্বামী মরে বান্ধে চামদড়ি॥
স্বপন দেখিব যদি মলিন বদন॥
মরা মৃত্যু ঘরে পরে আসিব সে দিন॥
স্ত্রীর রূপ ঋতু ক্ষয় মাঝা হয় ক্ষীণ
সন্তান করাবে আর ব্রাহ্মণ ভোজন॥
অপর স্ত্রীতে করে শনি মঙ্গল বার।
ঋতু ভঙ্গ হবে তার শুর্দ্ধ হবে শরীর॥
স্বপ্ন নিন্দাতে যদি দেখে কাল পাণি।
কজ্জল সুধিরে সাধু করে টানাটানি॥
কতেক কহিব সাধু স্বপম মাণিকা।
পাণ্ডবকে জগন্নাথ হইবেক সখা॥
মোর বাক্য শুন রাজা পাণ্ডব কে ভজন।
নতুবা তোমাকে কাল পুরিল অর্জ্জুন॥
সৌতি বলে শুন ষাটি সহস্রেক মুনি।
কৃষ্ণরে কহিলাম স্বপ্ন লীলার কাহিনী।
পুরাণ সে ইতিহাস ব্যাসের বর্ণন।
কহিল পুরাণ তত্ব ভারত কথন॥
জন্মেজয় আগে কহে ব্যাসের তনয়।
ভানুমতী যত বলে রাজা না শুনয়॥
না শুনিল রাণীর বাক্য বিনাশিব বংশ।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস॥
পয়ার। নমইসরের পুত্র সৌতি মহামুনি।
ইতিহাস পুরাণেতে কৃষ্ণ হাস্য শুনি॥
ব্যাসের পুরাণ কিছু কহ আর তত্ত।
শুনিলে ছাওাল মুখে অমৃতের মত॥
সৌতি বলে শুন সাটি সহস্রেক মুনি
পিতার মুখে শুনিয়াছি পুরাণ কাহিনী॥
ত্রেতা যুগে রাধা কৃষ্ণ বৃন্দাবনে খেলা।
কলিযুগে রাধা কৃষ্ণ স্বপ্ন করে লীলা।
আঠার পুরাণ মধ্যে ইতিহাস সার।
কাশীদাস বলে আছে স্বপ্ন লীলা সার॥
জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল মুনির তনয়ে॥
আঠার পর্ব্বের সার স্বপ্ন লিলা হয়ে॥
শুনিলে আঠার পর্ব্ব আচার্য্যের মত।
শুনিলে আঠার পর্ব্ব হয় সর্ব্ব তত্ব॥
আর কিছু শুন মুনি ব্যাসের নন্দন।
ভানুমতী দুর্য্যোধনে কৈল সম্ভাষন॥
শুক মুনি বলে পরিক্ষীতের তনয়।
এসর্ব্ব শুনিলে রাধা কৃষ্ণ প্রাপ্তি হয়॥
শুনিলে অধম্ম খণ্ডে নিষ্পাপ শরীর।
শুন রাজা জন্মেজয় করহ গোচর॥
ভানুমতী যত বলে রাজা না শুনয়ে।
হস্তিনাতে কে যাচিবে কুন্তীর তনয়॥
শুনিয়া না শুনে রাজা তুমি লক্ষ প্রিয়া।
দুর্য্যোধন বলে পাণ্ডবে রাজ্য দিয়া॥
রাণী বলে গাণ্ডিবান শুন দুর্য্যোধন।
ফুরাইল স্বপ্ন কথা যাত্রা কথা শুন॥
পাণ্ডবের কথা শুনি যাত্রার নির্ণয়।
হস্তিনাতে সাজি আছে কুন্তীর তনয়॥
যাত্রা করি কোথা যাব দেখি প্রজাপতি।
প্রথম যাত্রায় ভেট অমৃতের রতি॥
প্রথম যাত্রায় যদি দেখি ঐরাবত।
বিনাশিল নানা ধেনু তাকে হয় প্রাপত॥
স্বপনে আমি শুভ লগ্নে দেখিনু পবর।
যাত্রা করি আইসে ভীম হস্তিনা নগর॥
গদাবাড়ি মারি ভীম ভাঙ্গিবে তোর উরু।
ভীমের সাপক্ষ আছে বাঞ্ছা কল্পতরু॥
স্বপনেতে তোমার যাত্রা দেখি দুর্য্যোধন।
অমঙ্গল যাত্রা দেখি বেদের পুরাণ॥
যাত্রা কালে কর্ণে শুনি ক্রন্দনের গোল।
অগ্নি জেলে থাকে যদি থাকে যদি মড়ার উপর॥
দেখি গেলা অমঙ্গল যথা ঘটে তার।
পথে চোর মৃত্যু হয় যায় যম ঘর
পাপহৈতে মহা পাপ হরয়ে ব্রাহ্মণ।
প্রভাতে দেখিলে মুখ পাপতে যৌ হন॥
যাত্রাকালে গালাগালি হুড়াহুড়ি পথে।
লগ্ন ধরি গেলে দেখা হয় শত্রু সাথে॥
যাত্রাকালে পঞ্চ বিপ্র দেখিয়া আসর।
লক্ষ্মীলাভ হয় মাত্র আসিবেক ঘর॥
যাত্রা কালে দেখি যবে উড়িবে শুকনী।
পিছ মোড়া দিয়া ঘরের হিবে সে দিন॥
প্রথমেতে যাত্রা কালে দেখে মড়ার মাথা।
লগ্ন ধরে গেলে কার্য্য না হয় সর্ব্বথা॥
যাত্রা কালে ডোমচিল উড়য়ে সম্মুখে।
লক্ষণগণ ধরে গেলে সক্ত কাটে পথে॥
প্রথমেতে যাত্রা কালে দেখি অগ্নি কুণ্ড।
দরবারে নাই উড়ে কথা সবে মেণ্ডু॥
যাত্রা কালে রম্ভাকলা দেখিব সম্মুখে।
পথে তার মৃত্যু হয় যায় যম লোকে॥
হাঁচি জেটি পড়ে আর বাধা করে সদা।
খালি কুম্ভ কাখে করে যাত্রা কালে বাধা॥
তোর যাত্রা দুর্য্যোধন এমনি বিধান।
উরু ভাঙ্গি ভীমসেন করিবে সে রন॥
তোর যাত্রা দুর্য্যোধন আর কিছু শুন।
পরমাই তোর শেষ যাত্রা অলক্ষণ॥
যাত্রা কালে অমঙ্গল দেখি দুষ্ট নারী।
যেবা বধ নাস্তি হয় আসিব ঘর ফিরি॥
অমঙ্গল তোর যাত্রা স্বপনে দেখিয়া।
তোমারে কহিব রাজা শুন মন দিয়া॥
শুভ যে মঙ্গল যাত্রা রাজা যুধিষ্ঠীর।
যাত্রা করি আশে বীর হস্তিনানগর॥
পাণ্ডবের যাত্রা তবে শুন মন দিয়া।
আসিতেছে পঞ্চভাই লস্কর সাজিয়া॥
পুর্ণ কুম্ভ কাখে করি আসিতেছে যুবা।
বামেতে সৃকাল করি যাত্রাযে করিলা॥
ব্রাহ্মণ বিষ্ণুর দেহ যাত্রা বিলক্ষণ।
বিলম্ব না কর যাত্রা কর আরোহণ॥
যাত্রা কালে শঙ্খ চিল দেখে উত্তরাবত।
কুবিরের ধন তার হইবে প্রমি
যাত্রা কালে ঘর মধ্যে দেখে জ্যেষ্ঠ সম।
শত্রু মনে জয় হয় ভয় করে যম॥
যাত্রা কালে যেই দেখে প্রসবিছে গাই।
অমৃত ভোজন ঘরে পরেতে মিলাই॥
যাত্রা কালে দধি মন্থ দেখে কার হাতে
ভাগ্যে দেখা হয় তার দুরন্ত বন্ধু সাতে॥
যাত্রার লক্ষণ দেখি যুধিষ্ঠির অমঙ্গল।
আসিতেছে যুধিষ্ঠির সাজি সৈন্য দল॥
পাণ্ডবেরে বলিলাম যাত্রার লক্ষণ।
আর কিছু স্বপ্ন বলি শুনহ রাজন॥
স্বপ্নে নিদ্রায় যে স্ত্রী হয় রজশ্বলা।
অবস্য জানিব তার মরিবে অবলা॥
নিদ্রাতে স্বপনে যে থাকে স্ত্রী সঙ্গম।
পূর্ব্বের পরমাই ক্ষয় আসি লয় যম॥
অপবিত্র থাকে যদি শনিতে করয়।
শুনিতে দেবতা স্ত্রী কাছে নাহি যায়॥
স্বপনে অনেক কি ডাকয়ে যেই জন।
ঘরে পরে শত্রু হস্তে হইবে নিধন॥
স্বপনে নিদ্রাতে যদি কার ঝাড়ে বিষ॥
ঘরে কিবা অপরে হইবে সর্প গ্রাশ॥
দেখিবে স্বপনে যেবা কোথা কাটবনি।
দেবতা মানুষ ধার তেকারণেশুনি
নিদ্রাতে স্বপনে যেবা দেখে গুরুমাতা।
সে দিনে তে অতি ভাগ্য অতি পুণ্য কথা॥
স্বপনের কথা রাজা যতেক কহিল।
শুনিয়াত দুর্য্যোধন কিছু না বলিল॥
কৃষ্ণ সহ পাণ্ডবকে করাই সর্ম্মাণ।
মরি বারে ইচ্ছা থাকে কর অপমান।
ভানুমতির কথা শুনি গান্ধারী তনয়।
জিয়ন্ত পাণ্ডব সনে পিত্যু নাহি হয়॥
শত্রুর অধিন আমি না হব কখন।
শুনিয়া হাসিবে তবে যত রাজাগণ॥
রাজসই যজ্ঞ কৈলে কুন্তীর নন্দন।
ছিয়াশী সহস্র রাজা আছিল তখন॥
স্ফটিকের স্তম্ভ সব দানের আকার।
খন্দকে পড়িলাম আমি হাসিল সংসার॥
সেই কথা মোর বুকে লাগেছে বহুত।
আমার হস্তের ধন ব্যয় কৈল যত॥
ভাণ্ডার ঘরেতে দিল মোর অধিকার।
বৈভব দেখিয়া মোরে শত্রু ভাব তার॥
পাশাতে বৈভব কৈনু সকল জিনিয়া।
ভাই নহে শত্রু ভাব আমাতে করিয়া॥
শত্রুর অধিক হইলে নাশিকেব ক্ষিতি।
পাণ্ডবের সঙ্গে মোর কিসের পিরিতী॥
উনশত ভাই মোর যমের দোশর।
উনশত পঞ্চজনে কি করিবে মোর॥
ধন হীন সৈন হীন কি করিতে পারে।
মোর সব যত রাজা আছয়ে সংসারে॥
পাণ্ডবেরে না করিব ভয় ঈশ্বর থাকিতে।
কর্ণ সঙ্গে যুদ্ধে আর কে আছে জগতে
মারির পাণ্ডবে আমি যুদ্ধে খেদাড়িয়া।
কি করিতে পারে কৃষ্ণ সহায় হইয়া॥
গৌউড় হাউড় জাতি কিবা যুদ্ধ জানে।
পাণ্ডর সহিত পাঠাইব শমন ভুবনে॥
মোর পক্ষ না হইয়া শত্রুর সহায়।
শত্রুর সংহতি তারে মারিব নিশ্চয়।
দুর্য্যোধনের বাক্য শুনি হাসে ভানুমতী।
পর বুদ্ধে লক্ষ্মীছাড়া হইলে ভূপতি॥
সৌতি বলে শুন সভে যত মুনিগণ।
নমইসরের মুখে শুনেছি বচন॥
পিতা মোর সর্ব্বশাস্ত্রে হয় বড় সিদ্ধ।
অমৃত অধিক শুনি নাই কভু মিথ্যা॥
শুনিয়া ছিলাম আমি কহিলাম তোমায়।
ইতিহাস পুরাণেতে এই সব হয়॥
জন্মে জয় আগে কহে ব্যাসের নন্দন।
গুপ্তকথা ব্যক্ত কৈলাম তোমার কারণ॥
কহিল যে ভানুমতী না শুনে রাজন।
কাশী কহে ভীম হস্তে সভার মরণ॥
পয়ার। সৌতিরে আনিয়া সভে কর তার পুজা।
সৌতি হইতে কৃতার্থ যত সমাঝা।
অগস্ত বলেন কহ সৌতি পুরাণ কথন।
শুনিছ পিতার মুখে কহত বচন॥
সৌতি বলে বৃদ্ধ সবে ছাওাল সে আমি।
শুনিতে ছাওয়াল বাক্য শ্রদ্ধা কর তুমি॥
শুন কথা কহি আমি মন কর ইবে।
যে শুনেছি পিতার মুখে কহি শুন তবে॥
ইতিহাস পুরাণ হয় ব্যাসের বর্ণন।
কাশীদাস কহিয়াছে পুরাণ কথন॥
পয়ার। জন্মেজয় জিজ্ঞাসয় শুক মুনি কয়।
পুণ্য কথা কহে মুনি তারাও আমায়।
অঙ্গিকার করিল যুদ্ধ বাক্য না শুনিল।
তার পর ভানুমতী কি আর বলিল॥
কহ মুনি বুঝাইয়া এই সব কথা।
পুণ্য কথা কহিয়া নিস্পাপ কর ব্যথা॥
জন্মেজয় বাক্য শুনি ব্যাসের নন্দন।
ধন্য২ জন্মেজয় ধন্যত জীবন॥
এপর্ব্ব শুনিলে মাত্র ধন বান হয়।
পুং লিঙ্গ স্ত্রী লিঙ্গ এপর্ব্বেতে আছয়।
শুন রাজা জন্মেজয় কহি বুঝাইয়া।
অন্তে রাধা কৃষ্ণ পাবে এপর্ব্ব শুনিয়া॥
ভানুমতী যত বলে রাজা না শুনয়॥
বিনাশিবে নিজ বংশ বুঝহ নিশ্চয়॥
রাণী বলে মোর বাক্য মান চক্রবর্ত্তী।
পর বুদ্ধে মিছা দন্দ কর নর পতি॥
পর বুদ্ধে ছল নিন্দা কর ভগবান॥
গুরুদ্রোহি করিলে নাহিক পরিত্রাণ॥
ফুল শূন্য দেবতার পড়ে মহা রাহু।
তাহাতে বলিষ্ঠ গুরু কেবা আছে বাহু॥
বুঝাইব আর কত শুন চক্রবর্ত্তী।
পাণ্ডবেরে রাজ্য দিয়া চিন্ত ইন্দ্রপতি।
আর কিছু কহি তোর শুন দুর্য্যোধন।
গুরু সে গঞ্জনা বালা প্রভু নারায়ণ॥
গুব্ধ করি পর বুদ্ধে শুন নৃপবর।
তোর মত কত রাজা গেল যম ঘর।
নমইসরের পুত্র জজাতি নৃপতি।
এই ছয় জন রাজা জগতে খ্যায়াতি॥
এই সবার গর্ব্ব নাশ করি শ্রীপতি।
অহঙ্কারে গর্ব্ব চুর শুনই নৃপতি।
শুন রাজা দুর্য্যোধন গান্ধারী তনুজা।
সবার উপরে বড় হয় ইন্দ্র রাজা॥
ইন্দ্র হইতে বড় রাজা আছে কোন ছার।
এমন গৌরব তার শুন চক্রধর
যে রূপে ইন্দ্রের গর্ব্ব প্রভু কৈল চূর্ণ।
তাহার বিধান কহি শুন দুর্যোধন॥
এক দিন ইন্দ্ররাজা করিল বিচার।
যুগে২ ইন্দ্রপদ হইবে আমার॥
স্বর্ণ মন্দির এক কৃষ্ণ নামে দিল।
কৃষ্ণ আনি মন্দিরেতে ইন্দ্র বসাইল॥
সূবর্ণ মন্দির দিয়া দর্প কৈল মনে
আমার সমান কেবা আছে ত্রিভুবনে॥
অন্তর যামিনী ভগবান জানিল তখন।
মন্দিরে বসাইয়া কৃষ্ণ হাসে মনে মন॥
অন্তর যামিনী দর্প করিল বিস্তর।
ইন্দ্র সঙ্গে করি কৃষ্ণ গেল মুনি দ্বার॥
বামঞে নামেতে হয় মুনি তপোধন।
তার সঙ্গে পাণিজয় করয়ে পিড়ন॥
কৃষ্ণ ইন্দ্র দেখি মুনি করিল বিচার।
পাণিজরে কৈল মুনি ছানে ভর কর॥
কৃষ্ণ ইন্দ্র আসে মুনি আমার সে হেথা।
মোর সঙ্গে দিলে তুমি না কহিব কথা॥
সুরপুর যাবে ইন্দ্র কৃষ্ণ দ্বারিকাতে।
আসিবেক ছাল ছাড়ি আমার অঙ্গেতে॥
মুনি অঙ্গে পেয়ে জর মৃগ ছালে গেল॥
জর ভরে মৃগছাল কাপিতে লাগিল।
ধড় ফড় হুড়২ মৃগছাল করে।
হেনকালে কৃষ্ণ ইন্দ্র আইল মুনি দ্বারে॥
কথা বার্ত্তা তিনজন হইল কতক্ষণ।
কৃষ্ণ গেল দ্বারিকাতে ইন্দ্র কৈল পণ॥
মুনিরে জিজ্ঞাসে ইন্দ্র ভাবিয়া অন্তরে॥
কি লাগিয়া মৃগছাল ধড়ফড় করে॥
কেহ নাহি নাড়ে ছাল পবন না বয়।
ইহা মোরে কহ মুনি বড়ই সংশয়॥
মূনি বলে আমার করয়ে পালিজর
মোর অঙ্গ ছাড়ি মৃগছালে কর ভর॥
তুমি গেলে মোর অঙ্গে জর প্রবেশিবে।
অঙ্গে জর রহিলে ক কথা কহিতে নারিবে।
ইন্দ্র বলে তোমার অঙ্গে যদি আমি পাই।
তবে কেন জর আসি অঙ্গে ভর দেই॥
মূনি বলে জর মোর অঙ্গে করে ভোগ।
ভোগ মোর ফুরাইলে আপনি হবে ত্যাগ॥
দুই দণ্ড॥ আছে ভোগ ছয় মাস আর ছয় দণ্ড॥
থাকি জর বাহির হইল।
জর বলে থাক মুনি অন্যন্তরে যাই।
থাকিহ নিসন্ধে মুনি আর ভয় নাই।
মুনি নমস্কার করি জর করিল গমন।
ক্রোধেতে অন্তরে মুনি লোহিত লোচন॥
মোর অঙ্গ ছারখার করি যাও কোথা।
দোষেতে উচিত শাঁপ পাবে মোর হেথা॥
মুনির ক্রোধ দেখি জর কাপে থর২।
বর কিবা শাপ দিবে কাহার উপর॥
মুনি বলে তোরে নাই দিব আর জর।
পালিবে আমার আঙ্গা দিনু তোরে বর॥
মোর এক সত্য তুমি করহ পালন।
কৃষ্ণ ইন্দ্র প্রসঙ্গ শুনিবে যেই জন॥
সংসারেতে নর দেহে ভার নাই দিবে।
প্রসঙ্গ শুনিলে জর ছাড়িয়ে পলাবে।
সর্প নহে তোরে আমি করে দিনু বর।
চৌষট্টী রোগের রাজা সবার উপর।
আগেতে তোমার জর পাছে হব রোগ।
আগে জর তোমার পাছে রোগ ভোগ॥
জর বলে মুনি আমি করি নিবেদন।
পূর্ণ না হইলে ভোগ ছাড়িব কেমন॥
ছয় মাস করিব ভোগ আর দুই দণ্ড।
তবে সে ছাড়িব মুনি আমি তার পিণ্ড॥
খুট ভোজনে হইলে পুত্রের শোক হয়।
বুঝিয়া বলহ মুনি ইহার উপায়॥
শুনিয়া জরের মুখে বলে মুনিবর
তোমার ভোগের লাগি কহিব সত্বর॥
রক্ত মাংস ভোগ কর হবে কত কষ্ট।
উপহার দ্রব্য খাইলে ভরিবেক পেট॥
তিন দিনে চালু তিন মোন তিন সিকা।
তোমাকে এভোগ দিলে শুনিবেক একা॥
মনে মাপি কমি যদি হইবে চালু।
কহিলে কমিলে কড়া জরের ভোগালু॥
এক গর্ত্ত বাক্সে পান এক শত।
এক দিন মুখ বাসি তোমার সেই মত।
তিন সের হরিদ্রা তিনসের তৈল।
সন্দেশ আদি রম্ভা কলা ভোগ সে সকল॥
তিনসের চাউল আর কউড়ি তিন আনা।
এপ্রসঙ্গে যে পড়িবে দিবেক দক্ষিণা॥
এতেক তোমার ভোগ তার সঙ্গে যে ছাড়িবে।
এত যদি করে কমি লইয়া পড়িবে॥
মোর মুনির বাক্য যে করিবে হেলন।
হাড় মাংস করিবেক তাহার ধ্বংসন॥
পালিজরে এত ভোগ দিল তপোধন।
মুনি নমস্কার করি জর করিল গমন॥
পুর্ব্বেতে মুনির অঙ্গ ছিলেন যেমন।
তাহা হইতে চতুর্গুণ হইল তপোধন॥
জরের মুখে তে এত সমিস্যে পুরিয়া।
চমৎকার হইল ইন্দ্র একথা শুনিয়া॥
ইন্দ্র বলে শুন মুনি আমার বচন
পল্লবের মুনি ঘর কিসের কারণ॥
পল্লবের ঘর আমি ভাগ্য করি মানি।
পল্লবের ঘর কেন কহ মহামুনি॥
কাষ্ঠ তৃণ দিয়া কেন না কর ছাওনি।
পল্লবের ঘর আমি ভাগ্য করে মানি॥
পল্লবের ঘর মোর পল্লবের ছাতা।
বাচিবেক কত দিন কাষ্ঠ তিন বাতা॥
আজি মরি কালি মরি এঘর কাহার।
আমি মৈলে ঘর দুয়ার হইবেক কার॥
যত দেখ ঘর দ্বার নহে চাদবাতি।
অত্বকার নিশি যেন এধন সম্পতি।
ইন্দ্র বলে শুন মুনি আমার বচন।
জানুতে তোমার চন্দ্র কিসের কারণ॥
সর্ব্বাঙ্গেতে লোমাবলি আছয় বিস্তর।
কি কারণে জানু বধি কহ মুনিবর।
মুনি বলে শুন ইন্দ্র কহি যে তোমায়।
এক ইন্দ্র গেলে মোর এক লোম যায়।
তোমার মত কত ইন্দ্র সুরপুরে গেল।
তেকারণে জানু মোর চাদ দেখাইল।
মুনি মুখে শুনি ইন্দ্র হৈল চমৎকার।
গর্ব্ব সে গর্জ্জন বালা প্রভু চক্রধর।
শুন রাজা দুর্য্যোধন আমার বচন।
লক্ষ ইন্দ্র কত বড় গেল গর্ব্ব চুর্ণ
মোর বাক্য দুর্য্যোধন গোবিন্দকে ভজ।
নতুবা তোমার কাল ফুরাইল অজ।
জন্মেজয় বলে শুন রাজা দুর্য্যোধন।
শুনেছি মুনির মুখে তব গুণাগুণ॥
সৌতি বলে শুন ষাটি সহশ্রেক মুনি।
নমইসরের মুখে শুনেছি কাহিনী।
নমইসরের পিতা বৈশম্পায়ন মূনি॥
জন্মেজয় শুনিয়াছে পুরাণ কাহিনী।
তার পর শুন মুনি জন্মেজয় কয়
ভানুমতী যত বলে রাজা না শুনয়॥
শুনি দুর্য্যোধন ক্রোধে ছাড়য় নিশ্বাস।
কাসি কহে প্রমাই হইল আশী শেষ॥
পয়ার। জিজ্ঞাসে অগস্ত মুনি সৌতি মুখ চেয়ে
কি শুনেছ আর কিছু কহ বুঝাইয়ে॥
একেসে ছাওয়াল তুমি অমৃত বচন।
ব্যাসের পুরাণ কই যে শুনহ পুনঃ॥
সৌতি বলে শুনহ অগস্ত মহামুনি।
এই ইতিহাস পুরাণ পিতার মুখে শুনি
তোমার সভা সভে বৃদ্ধ আমি ছাওয়াল।
পুরাণ কহিতে কিছু নাহি জানি ভাল॥
শুনেছি কর্ণেতে আমি পিতার বচন।
কহিনু অগস্ত মুনি যেমন তেমন॥
অগস্ত বলেন কহ পুরাণ কাহিনী।
যেমন তেমন কহ আর কিছু শুনি॥
মিষ্ট লাগে ছাও৷ল মুখে যেমন তেমন কথা।
সৌতি বলে কহ শুনি হইয়া সর্ব্বথা॥
শুকদেব জিজ্ঞাসিল জন্মেজয় রাজা।
শুনি দুর্য্যোধন কোপে হৈল মহা—তেজা॥
ভানুমতী রাজা তবে কি আর কহিল।
শুনি দুর্য্যোধন রাজা কি বাক্য কহিল॥
এমত বুঝাইয়া তবে কহ মহামুনি।
কৃতার্থ হইয়া আমি স্বপ্ন কথা শুনি॥
শুনিলে আঠার পর্ব্ব রাজ্য পাবে তবে।
রাধা কৃষ্ণ চারি নাম রহিবেক পর্ব্বে॥
মুনি বলে শুন পরিক্ষীত নৃপ সুত।
রাখিলে পিতার ধর্ম্ম শুনেছি ভারত॥
আঠার পর্ব্বের সার স্বপ্নপর্ব্ব হয়।
শুনিলে এপর্ব্ব অন্তে রাধা কৃষ্ণ পায়॥
শ্রীভাগবত রসার দ্বাদশ স্কন্ধ।
দ্বাদশস্কন্ধে রাধা কৃষ্ণ লীলা সে আনন্দ।
আর ভাগবত-সার দ্বাদশস্কন্ধ হয়।
ব্যাসের মজ্জদা স্থাই শুন জন্মেজয়॥
শুন রাজা জন্মেজয় পুরাণ কথন।
দুগ্ধ উথলিলে পড়ে চুলায় যেমন।
সুপুত্র হইয়া পিতার ধর্ম্ম সে রাখয়।
কুপুত্র হইলে বংশ নরকে পড়ায়॥
দুর্য্যোধনে ভানুমতী বলয়ে বচন।
তোর গুণে মজিবেক হস্তিনা ভুবন॥
মোর বাক্য শুন রাজা চিন্ত হলধর।
ধন যৌবন সকল দেখ অন্ধকার॥
ভানুমতী বাক্য শুনি বলে নরপতি।
জীয়ন্তে গোবিন্দ সনে না করি পীরিতি॥
মোরে কহ ভানুমতী চিন্ত গদাধর।
আমার শত্রুর সঙ্গে নিত হরি চর॥
শুন রাণী ভানুমতী আমার বচন।
জানিলেঅবশ্য মৃত্যু নাহয় লঙ্ঘন॥
বরঞ্চ মরিব আমি তার নাই ডর।
এখান হইতে উঠে তুমি যাহ ঘর
অন্য যদি কহে কেহ মোর শত্রুর কথা।
আপন হস্তেতে তার কাটিব যে মাথা॥
যত কহ ভানুমতী শত্রু কথা মান।
অন্য জন কহে কথা বাচে এত ক্ষণ॥
শুনিয়া রাজার বাক্য ভানুমতী কয়।
দুগ্ধ উথলিলে রাজা চুলেতে পড়য়া॥
যে যার স্বভাব রাজা ছাড়িতে না পারে।
তোমার জন্মের কথা বৃথা কহি তোরে॥
যত বুঝাইলাম আমি সব অকারণ।
তোমার জন্মের দোষ শুন দুর্য্যোধন॥
অন্যসমা নামে পিতা তোমার পার্ব্বতী।
পিতা কহে মাতা শুন তোমার জন্ম তিথি॥
গর্ভ থাকিয়া শুনি তোমার জন্ম কথা।
তোমার জন্ম শুনি মাতা গর্ভ কৈল বৃথা॥
আটমাসের গর্ভ আমি পড়ে যেভূমি।
তোমারে যে দোষ দিব কি বলিব আমি॥
যে যার সভাব দোষ ছাড়িতে না পারে।
রেবতী নক্ষত্রে জন্ম গান্ধারী উদরে॥
রেবতী নক্ষত্রে জন্ম শুক্লপক্ষ তিথি।
গণ্ডযোগে দণ্ড মুনি নাম নরপতি।
না কর গণ্ড না ছাড়ে তোমাতে।
পর বংশে নিজবংশ দেখ শত্রু রূপে।
কৃষ্ণতে শত্রুতা ভাব জন্ম নিলা ধরি।
ধৃতরাষ্ট্র বৈল কৃষ্ণ এপুত্র তোমারি॥
তোমার জন্ম দিনে আইল দেবকী নন্দন।
কোলে করি লয়ে গেল নন্দের সদন॥
শুন ওহে ধৃতরাষ্ট্র আমার বচন।
ভজন সাধন তার সব অকারণ॥
সর্ব্ব ত্রেতে হয় রাজা গুরু সে অধিক।
গুরু কৃষ্ণ ব্রাহ্মণেতে তিন দেহ এক।
বিষ্ণু পরায়ণ হইল যুধিষ্ঠি রাজন।
তারে নিন্দা কৈলে রাজা নরকে গমন॥
পঞ্চ জনার পুত্র হয় পঞ্চ যে পাণ্ডব।
তারে নিন্দা কৈলে তুমি অহঙ্কারে যাব॥
ধন গর্ব্ব অহঙ্কার এই তিন মদ।
এই তিন ছাড়ি ভজ বিষ্ণুর সে পদ
বিষ্ণু নিন্দা অতিশয় যে জন করয়।
ব্রাহ্মণ জাতি, বিচারিলে বিষ্ণু নিন্দা হয়॥
কোন জাতি, বলিয়া জিজ্ঞাসা যদি করে।
অন্তে তার বাস হয় নরক ভিতরে॥
গৌউড় ধ্যান করি কৃষ্ণ বাছিলেক যদি
তোর হবে দুর্য্যোধন নরকে বসতি॥
গৌউড় হাউড় বলে কৃষ্ণ কৈলে নিন্দা।
অন্তকালে যাবে রাজা যমালয় বান্ধা॥
তুমি সে ভরসা কর উনশত ভাই।
গোবিন্দের জাতি নাঞি রহিলে এঠাঞি॥
জানমদ অহঙ্কারে জাতি বাঞ্চা তোর।
জ্ঞানসে ভঞ্জন বালা জাতি চক্রধর॥
সুদরশন চক্রে সবাই করিবে নিধন।
উনশত ভাই তোর করিব নিধন॥
গদার বাড়িতে ভীম ভাঙ্গিবেক তোর উরু।
ব্রাক্ষণে বাছিল জাতি বাঞ্ছা কল্পতরু॥
মোর বাক্য ভজ রাজা গোবিন্দের পদ।
দেহ তারে পঞ্চগ্রাম নাহবে প্রমাদ॥
স্ত্রী পুরুষে যার হয় বড়ই উদর
এচতুরে ধম গারি বহেত তাহার।
স্ত্রী বুদ্ধে পুরুষের ধন গারি রয়।
দুখে সুখে দেহ যুক্তিত করয়
দুজনেতে গালাগালি হয়ত ভৃঙ্গর।
পাপেতে পূর্ণিত হয়্যা মজে তার ঘর॥
তুমিত ভৃঙ্গর হইলে দির্ক্ষ ভাগবতে।
দ্রুপদীরে আনাইলে তোমার সভাতে॥
পাশাযুদ্ধে পাণ্ডবের ধন সব লইয়া॥
ব্রহ্মাবর দরবার রৌদ্রে বসাইয়া॥
ছলে সহশ্র রাজা সভাতে আছিল।
দ্রপদীরে দুশ্বাসন সভাতে আনিল॥
দ্রপদীর রজশ্বলা সেই দিন হয়।
কুন্তীরে ঠেলিয়া দুশ্বা দ্রপদীরে ধরয়।
মুচ্ছিত হইয়া কুন্তী ভূমিতে পড়িল।
দ্রপদীরে আনি দুশ্বা বিচার করিল॥
বারুণ নগরে পঞ্চ পাণ্ডব সে খাই।
তোমারে বলি গৌত্রকুল সে যোগাই॥
মনে হেন বিচারিল মান চক্রপাণি।
সভাতে দ্রপদীর লজ্জা রেখেছে আপনি।
উনশত ভাই বহু হইল উলঙ্গ।
ছিয়াশী সহস্র রাজা দেখিবেক রঙ্গ
অঙ্গ কেহ দ্রোপদীর দেখিতে না পায়।
ধন্য দেবী দ্রোপদী সতীত্ব বলয়॥
তোর মুখে লজ্জা নাই রাজা দুর্য্যোধন।
জন্মিয়া না মেলে কেন পাপীষ্ঠ জীবন॥
বুঝাইব কত তোরে পাপীষ্ঠ দুর্ম্মতি।
কুবুদ্ধে মজালি তুই হস্তিনা সম্পতি।
জীবনে নাহিক লাজ মরণে নাহি ডর।
এমন পাপীষ্ঠ কেন জন্মায় সংসার॥
ক্ষেতি কুলঙ্গার তোর নাহি স্তরজ্ঞান।
কৃষ্ণ দিন্দা কর তুমি নাহি গুরু জ্ঞান॥
তার পর ক্রম কহি শুন দুর্য্যোধন।
একা কৃষ্ণ শত্রু সব করিল নিধন॥
কংস বন্দি ঘরে জন্ম হইল যে দিনে।
পুতনা রাক্ষসী মারি শিশু স্তন পানে॥
কৃষ্ণ জন্ম হইতে কংস হইল নিপাত
পারিজাত হরণে হারিলেন শচিনাথ।
উগ্রসেনে রাজ্য দিয়া কংসরাজা মারি।
ইন্দ্র সনে বাদ করিলেন গিরিধারি।
অঘাসুর বকাসুর করিল নিপাত।
হিরলক্ষ হিরণ্যকশিপু কৈল হত॥
সংসারে বিষ্ণুর রূপ জগতের কর্ত্তা।
সবাকার স্বামী হয় সভাকার পিতা।
অখিলের কর্ত্তা কৃষ্ণ কল্পতরুবর।
অর্জ্জুনের সঙ্গে তার নিত্য যে বেহার॥
দুষ্ট লোকে দুষ্ট কৃষ্ণ সান্তলোকে সান্ত।
দুখি লোকের জন্যে দয়া হয়ত অত্যন্ত॥
সত্য ভাবে যুধিষ্ঠির নোঙাইল মাথা।
যেমন কৃষ্ণরে পাপী কই দুষ্ট কথা।
পাণ্ডু-পুত্র হস্তিনাতে হইবেক রাজা।
আপনি করিবে কৃষ্ণ পাণ্ডবের পুজা
শুন রাজা দুর্য্যোধন গান্ধারী নন্দন।
সুভদ্রা ভগ্নী কৃষ্ণের অর্জ্জুনে সমার্পণ॥
হস্তিনাতে ভগ্নীপতি রাজা করাইয়া।
কুরুবংশ জলাঞ্জলি পাণ্ডু-পুত্র দিয়া॥
এইত সে আজি কালি তোমার মরণ।
তোমার শ্রদ্ধের লাগি দ্রোপদী আয়োজন॥
দুর্য্যোধন রাজা শুনি রাণীর বচন।
ক্রোধ কম্পবান রাজা লোহিত লোচন॥
থর২ কাপে রাজা ছাড়িয়ে নিশ্বাস।
শত্রুর প্রসংশা আসি করে মোর পাশ॥
রাণী বলে শুন রাজা পুরিল তোর কাল
আজি হইতে বিষনাম হইল কপাল॥
আজি হইতে তোর শ্রাদ্ধের করি সরঞ্জম।
আজি হইতে তোর সঙ্গে নাহিক সঙ্গম॥
গুরুদ্রোহি হইলে রাজা নহে ভাল দসা।
কত কথা কহি কৃষ্ণ চরণ ভরসা॥
রাজারে ভর্ৎসিয়া রাণী গেল নিজ বাসে
নিপাত হইবে গদাপর্ব্বে কুরুবংশে॥
গদাপর্ব্বে কুরুবংশ হইবে সমুদায়ে।
বিধবার মুনি সব নারী পর্ব্ব হয়ে॥
আঠার ভারত হয় আঠার পুরাণ।
ভাগবত সাতকাণ্ড খ্যাত রামায়ণ॥
সৌতি বলে শুন ষাটি সহস্রেক মুনি।
ব্যাসের পুরাণ ইথে ভারত কাহিনী॥
নমইসরের পুত্র এসব শুনিয়া
কহিলাম এসব আমি বালক হইয়া॥
জন্মেজয় আগে কহে ব্যাসের তনয়।
এত দূরে স্বপ্নপর্ব্ব হইল সমুদয়॥
ইতিহাস পুরাণ কথা ব্যাসের বর্ণন
স্বপ্নপর্ব্ব কাশীদাস করেছে রচন॥
পয়ার। রাধা কৃষ্ণ বৃন্দাবনে ত্রেতাযুগে লীলা
আপনি স্বপন কৃষ্ণ যুগে২ হইলা॥
ভাগবত যেই লোক স্বপনে দেখয়ে।
অভাগ্য লোক যে দেখিতে না পায়ে॥
ব্যাসের পুরাণ এই স্বপ্ন কথা মান
স্বপ্ন দেখিলে লোক না কয় কখন॥
শুকদেব মুনি তবে জন্মেজয় কয়্যা।
নমস্কার করি গেল তপস্য লাগিয়া।
শুনে গায় প্রতি দিনে স্বপ্ন যে ভারত
শনি রাহু গ্রহ পীড়া না করে পীড়িত॥
প্রতি দিন যেই নর শুনায় গায়ায়।
ধনে পুত্রে বাড়ে অন্তে রাধা কৃষ্ণ পায়॥
রাজপীড়া বন্ধি থাকে হয়ত খণ্ডন।
তিন দিন শুনিবেক হইয়া একমন॥
একুশবুড়ি কৌড়ি চাল্য ছিদ্র নাহি হয়।
রাজ পীড়া শনি গ্রহ দূরেতে পলায়॥
ছিদ্র কৈলে শনি গ্রহ দ্বিগুণ বাড়য়॥
আঠার পর্ব্ব সার স্বপ্ন পর্ব্ব হয়।
শুনে গায় প্রতি দিন চতুবর্গ পায়।
দ্বাদশস্কন্ধ হয় যে ভাগবত-সার।
অন্তে রাধা কৃষ্ণ পায় চিন্তে মুনিপুর॥
ভারত আঠার পর্ব্ব প্রচার করিবে।
প্রচার না কর স্বপ্ন গুপ্তেতে রাখিবে॥
সবাকার চরণে আমি করিব প্রণতি।
কাশী কহে আমি হৈয় সবাকার পতি॥
বেদব্যাস বচন করিয় প্রতি আস।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস॥
ব্রাহ্মণ ক্ষেত্রিয় বস্য শূদ্র চারি জাতি।
এতদূরে স্বপ্নপর্ব্ব হইল সমাপতি॥
ইতি সমাপ্তোয়ং।
এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।
এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।