মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ)/পঞ্চবিংশ অধ্যায়
পঞ্চবিংশ অধ্যায়— আস্তীকপর্ব্ব।
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, তৎপরে মহাবল মহাবীর্য্য কামগামী[১] বিহগরাজ অর্ণবের অপরপারবর্তিনী স্বীয় জননীর সন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। তথায় গরুড়মাতা বিনতা পণে পরাজিতা ও দুঃখদাবানলে দগ্ধ হইয়া দাসীভাবে কালহরণ করিতেছিলেন। একদা তিনি পুত্রসমীপে উপবিষ্টা আছেন, এমন সময়ে সর্পকুলজননী ক বিতাকে আহ্বান করিয়া কহিলেন, শুন বিনতে। সমুদ্রমধ্যে পরম রমণীয় অতি সুশোভন এক দ্বীপ আছে; ঐ দ্বীপ সর্পগণের আবাসভূমি; আমাকে তথায় লইয়া চল। নিত। শ্রবণমাত্র ককে, পৃষ্ঠে লইয়া চলিলেন, গরুড়ও স্বীয় জননীর আদেশানুসারে সপদিগকে পৃষ্ঠে বহন করিয়া তদনুগামী হইলেন। বিনতাহৃদয়নন্দন বিহগরাজ সূর্য্যাভিমুখে গমন করাতে, ভুজগগণ অতিপ্রদীপ্ত প্রভাকর প্রভাজালে তাপিত ও মূর্হিত হইতে লাগিল।
কদ্রু স্বীয় তনয়দিগের তাদৃশী দুরবস্থা দেখিয়া বৃষ্টি প্রার্থনায় দেবরাজ ইন্দ্রের স্তব আরম্ভ করিলেন, হে সর্বদেবনায়ক! হে বলবিনাশন[২] হে নমুচিনিপাতন![৩] হে শচীপতে! সহস্রাক্ষ! তোমাকে প্রণাম করি; তুমি বারিবর্ষণ দ্বারা সূর্য্যকিৱণতাপিত সর্পগণের প্রাণদান কর। হে অমরোত্তম! তুমিই আমাদিগের একমাত্র পরিত্রাণের উপায়; কারণ, তুমি অপর্যাপ্ত বারিবর্ষণে সমর্থ। হে পুরন্দর! তুমি মেঘ, তুমি বায়ু, তুমি অগ্নি, তুমিই নভোমণ্ডলে বিদ্যুৎ স্বরূপে বিরাজমান হও, তুমিই মেঘগণ ক্ষেপণ করিয়া থাক, এবং তোমাকেই মহামেঘ কহে, তুমি অতি বিষম ঘোের বজ্র স্বরূপ, তুমি ভীষণগর্জ্জনকারী মেঘ, তুমি সকল লোকের সৃষ্টিকর্ত্তা ও সংহারকারী, তুমি সর্ব ভূতের জ্যোতিঃস্বরূপ, তুমি আদিত্য, তুমি বিভাবসু, তুমি পরমাশ্চর্য্য মহৎ ভূত, তুমি রাজা, তুমি নিখিল দেবের অধীশ্বর, তুমি বিষ্ণু, তুমি সহস্রাক্ষ, তুমি দেব, তুমি পরম গতি, তুমি অমৃত, তুমি পরম পূজিত সোমদেবতা, তুমি তিথি, তুমি লব[৪], তুমি ক্ষণ, তুমি শুক্ল পক্ষ, তুমি কৃষ্ণ পক্ষ, তুমি কলা[৪], কাষ্ঠা[৪], ত্রুটি[৪], সংবৎসর, ঋতু, মাস, রজনী ও দিবস, তুমি সমস্ত পর্বত ও সমস্ত বন সহিত পৃথিবী, ভাস্করসহিত তিমিররহিত নভোমণ্ডল, এবং উত্তালতরঙ্গবহুল মীনমরতিমিতিমিঙ্গিলসঙ্কুল জলধি, তুমি অতি যশস্বী, এই নিমিত্ত নির্ম্মলমনীষা[৫] সম্পন্ন মহর্ষিগণ হর্ষোৎফুল্ল চিত্তে নিয়ত তোমার অৰ্চ্চনা করিয়া থাকেন, তুমি স্তুত হইয়া যজমানের হিতার্থে যজ্ঞীয় হবিঃ ও সোমরস পান করিয়া থাক। হে অতুলবল! ব্রাহ্মণের পারলৌকিক মঙ্গলফলাভিলাষে সতত তোমার অর্চনা করেন, নিখিল বেদাঙ্গ[৬] তোমার মহিমা কীর্ত্তন করে, যাগপরায়ণ দ্বিজেন্দ্রগণ তোমারি সাক্ষাৎকারলভার্থে সর্ব্ব প্রযত্নে সমস্ত বেদাঙ্গের অনুগম[৭] করেন।