মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ)/বিংশ অধ্যায়

বিংশ অধ্যায়—আস্তীকপর্ব্ব।

উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, হে ঋষিপ্রবর! যে অমৃত মন্থনে শ্রীমান্ অতুলবিক্রম অশ্বরাজ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহার সমুদায় বৃত্তান্ত বর্ণন করিলাম। ক সেই অশ্বরত্ন অবলোকন করিয়া বিনতাকে কহিলেন, বিনতে! শীঘ্র বল দেখি, উচ্চৈঃশ্রবার কিরূপ বর্ণ। বিনতা কহিলেন, এ অশ্বরাজ শ্বেতবর্ণ, তুমি কি বল, আইস এ বিষয়ে পণ করা যাউক। কক্র কহিলেন, হে চারুহাসিনি! আমি বোধ করি, এই অশ্বের পুচ্ছ কৃষ্ণবর্ণ; আইস, এ বিষয়ে এই পণ করা যাউক, যে হারিবেক, সে দাসী হইবেক। তাহারা এই রূপে দাসীবৃত্তিস্বীকাররূপ প্রতিজ্ঞায় আরূঢ় হইয়া, কলা অশ্ব দেখিব, এই স্থির করিয়া স্ব স্ব গৃহে গমন করিলেন।

কদ্রু গৃহে গিয়া কৌটিল্য করিবার অভিপ্রায়ে স্বীয় পুত্রসহস্রকে আহ্বান করিয়া কহিলেন, কজ্জলতুল্য রূপ ধারণ করিয়া ত্বরায় ঐ তুরঙ্গ শরীরে প্রবেশ কর; যেন আমাকে দাসী হইতে না হয়। যে সকল ভুজঙ্গ তাহার আজ্ঞা প্রতি পালনে পরাজুখ হইল, তিনি তাহাদিগকে এই শাপ দিলেন, পাণ্ডুকুলোদ্ভব ধীমান্ রাজা জনমেজয়ের সর্পসত্রে অগ্নি তোমাদিগকে দগ্ধ করিবেন। সর্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা কদত্ত নিষ্ঠুর শাপ স্বকর্ণে শ্রবণ করিলেন, এবং সর্পগণের সংখ্যা অধিক দেখিয়া, ঐ শাপ প্রজাগণের হিতকর ভাবিয়া, দেবগণ সহিত হর্ষ প্রকাশ করিতে লাগিলেন; আর কহিলেন, কদ্রু স্বীয় সন্তানদিগকে যে এরূপ শাপ দিয়াছেন, ইহা পরম সৌভাগ্যের বিষয়; এই সকল মহাবল সর্পের বিষ অতি তীক্ষ্ণ ও বীর্যৎ। ইহারা স্বভাবতঃ হিংসারত ও অন্যান্য সমস্ত প্রাণীর নিয়ত অহিতকারী। অতএব ক উচিত বিবেচনা করিয়াছেন। তাহারা যেমন নূর, দৈব তেমনই তাহাদিগের উপর প্রাণান্ত দণ্ড পাত করিয়াছেন।

 ব্রহ্মা দেবতাদিগকে এইরূপ সম্ভাষণ ও কদ্রুর সমুচিত প্রশংসা করিয়া কশ্যপকে স্বসমীপে আহবান পূর্ব্বক কহিলেন, হে পুণ্যাত্ম। যে সকল তুীক্ষবিষ মহাফণ দন্দক[] সর্প তোমার ঔরসে জন্মিয়াছে, জননী তাহাদিগকে শাপ দিয়াছেন। বৎস! তদ্বিষয়ে কোনও ক্রমেই তোমার মন্যু করা বিধেয় নহে। যজ্ঞে সর্পকুলসংহার পূর্ব্বাবধি নির্দিষ্ট আছে। বিধাতা, মহাত্মা কশ্যপ প্রজাপতিকে এই রূপে প্রসন্ন করিয়া, তাহাকে বিষহরী বিদ্যা প্রদান করিলেন।

  1. সদা দংশনে উদ্যত।