অপরাজিত

ফিরাবে তুমি মুখ,
ভেবেছো মনে আমারে দিবে দুখ?
আমি কি করি ভয়?
জীবন দিয়ে তোমারে, প্রিয়ে, করিব আমি জয়।
বিঘ্ন-ভাঙা যৌবনের ভাষা,
অসীম তা’র আশা,
বিপুল তা’র বল,
তোমার আঁখি-বিজুলি-ঘাতে হবে না নিষ্ফল।


বিমুখ মেঘ ফিরিয়া যায় বৈশাখের দিনে,
অরণ্যেরে যেন সে নাহি চিনে।
ধরে না কুঁড়ি কানন জুড়ি’, ফোটে না বটে ফুল,
মাটির তলে তৃষিত তরুমূল।
ঝরিয়া পড়ে পাতা,
বনস্পতি তবুও তোলে মাথা।



নিঠুর তপে মন্ত্র জপে নীরব আনিমেষে
দহনজয়ী সন্ন্যাসীর বেশে।
দিনের পরে যায় রে দিন, রাতের পরে রাতি,
শ্রবণ রহে পাতি।
কঠিনতর যবে সে-পণ দারুণ উপবাসে
এমন কালে হঠাৎ কবে আসে
উদার অকৃপণ
আষাঢ় মাসে সজল শুভখণ;
পূর্ব্বগিরি-আড়াল হ’তে বাড়ায় তা’র পাণি,
করিয়ো ক্ষমা, করিয়ো ক্ষমা, গুমরি’ উঠে বাণী,
নমিয়া পড়ে নিবিড় মেঘরাশি,
অশ্রুবারি বন্যা নামে ধরণ যায় ভাসি’॥


ফিরালে মোরে মুখ!
এ শুধু মোরে ভাগ্য করে ক্ষণিক কৌতুক।
তোমার প্রেমে আমার অধিকার
অতীত যুগ হ’তে সে জেনে লিখন বিধাতার।
অচল গিরিশিখর ’পরে সাগর করে দাবী,
ঝরনা পড়ে নাবি’।

সুদূর দিক্‌-রেখার পানে চায়,
অকূল অজানায়
শঙ্কাভরে তরল স্বরে কহে,
নহে গো, নহে নহে।
এড়ায়ে যাবে বলি’
কত না আঁকা-বাঁকার পথে চলে সে ছলছলি’।
বিপুলতর হয় সে ধারা, গভীরতর সুরে,
যতই আসে দূরে।
উদার-হাসি সাগর সহে অবুঝ অবহেলা,—
একদা শেষে পলাতকার খেলা
বক্ষে তা’র মিলায় কবে, মিলনে হয় সারা
পূর্ণ হয় নিবেদনের ধারা॥

২৮ শ্রাবণ, ১৩৩৫