সতের

  ১৬৫৮ খৃঃ অব্দে বৈশাখ মাসে ভীষণ যুদ্ধ হইল। মোরাদ ও আওরংজীবের সৈন্যেরা সিপ্রা নদী পার হইবার উদ্যম করিতে লাগিল, কিন্তু সে বড় সহজ ব্যাপার নহে। আওরংজীব সৈন্য পার হইবার জন্য অতিশয় নিপুণ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। উন্নত স্থানে তাঁহার কামান সাজাইয়া, সম্মুখে শত্রুর আগমন রোধ করিয়া নিজ সৈন্যকে নদী পার হইতে বলিলেন। শত্রুরাও কামান সাজাইয়াছিল তদ্দ্বারা আওরংজীবের সৈনের নদী পার হওয়া নিবারণ করিতে চেষ্টা করিয়াছিল, অনেকক্ষণ তুমুল সংগ্রাম হইতে লাগিল। যশোবন্তসিংহ অপূর্ব বীর্যবল প্রকাশ করিয়া মোগলদিগের গতিরোধ করিতে লাগিলেন, কিন্তু তাঁহার সহযোদ্ধা কাসেম খা ঁসেরূপ যত্ন করিলেন না। তাৎকালিক লেখকেরা সন্দেহ করেন যে, তিনি আওরংজীবের অর্থে বশীভূত হইয়া আপন গোলা ও বারুদ লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, সুতরাং তাঁহার সৈন্যের কামান অচিরাৎ নিস্তব্ধ হইল। এ অবস্থায় শত্রুর কামানের সম্মুখে যুদ্ধ করা যশোবন্তের পক্ষে অসম্ভব হইয়া পড়িল; কিন্তু তিনি ভগ্নপ্রযত্ন না হইয়া অমানুষিক বীরত্ব প্রকাশপূর্বক শত্রুদিগের গতিরোধ করিতে লাগিলেন। সেখান পর্বতময়; সুতরাং আক্রমণকারিগণ সহজে নদী পার হইতে পারিল না, কিন্তু সাহসী মোরাদ কতিপয় সৈন্য লইয়া সকল ব্যাঘাত অতিক্রম করিয়া জয় জয় নাদে নদী পার হইলেন, তাহা দেখিয়া সমস্ত সৈন্য নদী পার হইল। ভীরু কাসেম খাঁ তৎক্ষণাৎ সসৈন্যে পলায়ন করিলেন, সুতরাং যশোবন্ত সিংহের বিপদসীমা রহিল না; কিন্তু সেই অসমসাহসী রাজপুত চতুর্দিকে শক্রবেষ্টিত হইয়াও তুমুল সংগ্রাম করিতে লাগিলেন। তাঁহার সৈন্যসংখ্যা ক্ষীণ হইতে লাগিল, তাঁহার প্রিয় অনুচরেরা চতুর্দিকে হত হইতে লাগিল, মোগলেরা জয় জয় নাদে আকাশ ও মেদিনী কম্পিত করিতে লাগিল, তথাপি বীর রাজপুতেরা রণে ভঙ্গ দিল না। অনেকক্ষণ যুদ্ধের পর পরাস্ত হইয়া যশোবন্তসিংহ কেবলমাত্র পঞ্চ শত সেনা লইয়া যুদ্ধস্থল ত্যাগ করিলেন। সপ্ত সহস্র রাজপুত সেইদিন সেই ভীষণ যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনদান করিল।