মানসিংহ/জগন্নাথ পুরীর বিবরণ

জগন্নাথ পুরীর বিবরণ।


 জয় জয় জগন্নাথ, সুভদ্রা বলাই সাত, জয় লক্ষ্মী জয় সুদর্শন। সুধন্য অক্ষয় বট, সুধন্য সিন্ধুর তট, ধন্য নীলাচল তপোধন॥ পূর্ব্বে ছিল অযোধ্যায়, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন রায়, সূর্য্যবংশে সূর্য্যের সমান। কৃষ্ণ দেখিবারে খেদ, স্বপনে পাইলা ভেদ, নীলমাধবের এই স্থান॥ পুরোহিতে পাঠাইল, দেখি গিয়া সে কহিল, নীলমাধবের বিবরণ। মূর্ত্তিমান ভগবান, দেখিলাম অন্ন খান, সেবা করে ব্যাধ এক জন। করি তার কন্যা বিয়া, তাহার সংহতি গিয়া, দেখিলাম কৃষ্ণের চরণ। রোহিণী কুণ্ডের কথা, কি কব দেখিনু তথা,কাক মরি হৈল নারায়ণ॥ ইন্দ্রদ্যুম্ন এত শুনি, বড় ভাগ্য মনে গুণি, রাজ্য শুদ্ধ এখানে আইল। দশ অশ্বমেধ করি, বৈতরণী জল তরি, বন কাটি আসি প্রবেশিল॥ দেখে সেই পুরী নাই, বালিপূর্ণ সর্ব্বঠাঁই, শত অশ্বমেধ আরম্ভিল। স্বপ্ন হৈল গোবিন্দের, সে পুরী না পাবে টের, আর পুরী গড়িতে হইল॥ ইন্দ্রদ্যুম্ন তুষ্ট হৈল, স্বর্ণময় পুরী কৈল, ব্রহ্মার মুহূর্ত্তে গেল সেই। রূপা তামাময় আর, পুরী কৈল দুইবার, শেষে পুরি পাথরের এই॥ গো দানে গরুর খুরে, মাটি উড়ে যায় দূরে, তাহে এই ইন্দ্রদ্যুম্ন হ্রদ। শ্বেতগঙ্গা মাকণ্ডেয়, স্নান কৈলা যম জেয়, পুনর্জন্ম না হয় আপদ॥ হরি বৃক্ষরূপে আসি, সমুদ্রের জলে ভাসি, চতুঃশাখ হয়ে দেখা দিলা। জগন্নাথ বলরাম, ভদ্রা সুদর্শন নাম, চারি মূর্ত্তি বিশাই গড়িলা॥ দারুব্রহ্ম সর্ব্বাদৃত, বিষ্ণু পঞ্জরেতে কৃত, ইন্দ্রদ্যুম্ন স্থাপিত সম্পন্ন। লক্ষ্মী রান্ধি দেন যাহা, জগন্নাথ খান তাহা, ব্রহ্মরূপ সেই এই অন্ন॥ খাইয়া প্রসাদ ভাত, মাথায় বুলায় হাত, আচার বিচার নাহি তায়। পঞ্চক্রোশ পুরী এই, প্রদক্ষিণ করে যেই, শমন সহিত নাহি দায়॥ শুষ্ক কিবা পিষুষিত, দূরদেশে সমানীত, কুক্কুরের বদন গলিত। এই অন্ন সুধাময়, ভুক্তিমাত্র মুক্তি হয়, উৎকল খণ্ডেতে অবিদিত॥ শুনি মানসিংহ রায়, পুলকে পূরিত কায়, প্রণাম করিল নীলাচলে। কৃষ্ণচন্দ্র নৃপাজ্ঞায়, রায় গুণাকর গায়, জগন্নাথ চরণ কমলে॥