মানসিংহ/দাসু বাসুর খেদ

দাসু বাসুর খেদ।

 পাতশার আজ্ঞা পায়, নাজির সত্বরে ধায়, মজুন্দারে কয়েদ করিল। দিলেক হাবসিখানা, অন্ন জল কৈলা মানা, দ্রব্যজাত লুটিয়া লইল॥ কাহার প্রভৃতি যারা, ছুটিয়া পলায় তারা, দাসু বাসু কান্দে উভরায়। হায় হায় হরি হরি, বিদেশে বিপাকে মরি, ঠাকুরের কি হইল দায়॥ দাসু বলে বাসু ভাই, পলাইয়া চল যাই, কি হইবে বিদেশে মরিলে। বিস্তর চাকরী পাব, বিস্তর পরিব খাব, কোন রূপে পরাণ থাকিলে॥ যুবতী রমণী আছে, না রয়ে তাহার কাছে, কেন আনু বামণের সাতে। নারী রৈল মুখ চেয়ে, তবু আনু মাটী খেয়ে, তারি ফল পানু হাতে হাতে॥ দিবসে মজুরী করে, রজনীতে গিয়া ঘরে, নারী লয়ে যে থাকে সে সুখী। নারী ছাড়ি ধন আশে, যেই থাকে পরবারে, তারে বড় কেবা আছে দুঃখী॥ কান্দিয়া কহিছে বাসু, উচিত কহিল দাসু, এই দুখে মোর প্রাণ কাঁদে। মরি তাহে দুখ নাই নারী রৈল কোন ঠাঁই, বিধাতা ফেলিল এ কি ফাঁদে॥ কুড়ি টাকা পণ দিয়া, নূতন করিনু বিয়া, এক দিনো শুতে না পাইনু। কাদাখেড়ু হইয়াছে, পুনর্ব্বিয়া বাকি আছে, মাটী খেয়ে বিদেশে আইনু॥ হেদে বামণের ছেলে, আগু পাছু নাই ভেবে দিল্লী আইল রাজাই করিতে। দুধে ভাতে ভাল ছিল, হেন বুদ্ধি কেটা দিল, পাতশার দেয়ানে আনিতে॥ মানসিংহ সঙ্গ পেয়ে, রাজা হৈতে এল ধেয়ে, এখন সে মানসিংহ কই। গাঁজা খোর রজপুত, আফিঙ্গেতে মজবুত, ব্রহ্মহত্যা করিলেক অই। মোগলে রহিল ঘেরি, সদা করে তেরি মেরি, রাঙ্গা আঁখি দেখে ভয় পাই। খোট্টা মোট্টা বুঝি নাই, লুকাইব কোন ঠাই, ছাতি ফাটে জল দে রে খাই। উজ্বর্ক কজল বাসে, ঘেরিয়াছে চারি পাশে, রোহেলাজল্লাদ আদি যত। কামড়ায়ে খেতে যায়, জাতি লৈতে কেহ চায়, কত জনে কহে কতমত॥ অরে রে হিন্দুকে পুত, দেখালাও কঁহা ভূত, নাহি তুবে করুঙ্গা দোটুক ন হোয় সুন্নত দেকে, কলমা পড়াঁও লেকে, জাতি লেউ খেলায়কে থুক॥ ধরিবারে কেহ ধায়, কাটি বারে কেহ চায়, অন্নদা ভাবেন মজুন্দার। অন্ননা ধ্যানের বলে, তেজঃ যেন অগ্নি জ্বলে, ছুঁইতে যোগ্যতা হয় কার॥ স্তুতি পাঠে অন্নদার, বসিলেন মজুন্দার, চৌদিকে যবনে ধূম করে। সিংহ যেন বসি থাকে, চারি দিকে শিবা ডাকে, কাছে যেতে নাহি পারে ডরে॥ ভূরিশিটে মহাকায়, ভূপতি নরেন্দ্র রায়, তাঁর সুত ভারত ব্রাহ্মণ। কৃষ্ণ চন্দ্র নৃপাজ্ঞায়, অন্নদামঙ্গল গায়, নীলমণি প্রথম গায়ন॥