মানসিংহ/মজুন্দারের প্রতি পাতশাহের উত্তর
পাতশার প্রতি মজুন্দারের উত্তর।
এ কথা কব কেমনে। নর নিন্দে নারায়ণে॥ যেই
নিরাকার, সেই সে সাকার, তারি রূপ ত্রিভূবনে
তেজঃ ভাবে যোগী, দেবী ভাবে ভোগী, কৃষ্ণ
ভাবে ভক্ত জনে॥ ধর্ম্ম অর্থ কাম, মোক্ষের বিশ্রা-
ম, কেবল তরে ভজনে। ভারতের সার, গোবিন্দ
সাকার, নিত্যানন্দ বৃন্দাবনে॥ ধ্রু॥
মজুন্দার কহে জাহাঁপনা সেলামত। দেবতার নিন্দা কেন কর হজরত॥ হিন্দু মুসলমান আদি জীব জন্তু যত। ঈশ্বর সবার এক নহে দুই মত॥ পুরাণের মত ছাড়া কোরাণে কি আছে। ভাবি দেখ আগে হিন্দু মুসলমান পাছে॥ ঈশ্বরের নূর বলি দাড়ীর যতন। টিকি কাটি নেড়া মাথা এ যুক্তি কেমন॥ কর্ণ বেঁধে যদি হয় হিন্দু গুনাগার। সুন্নতের গুনা তবে কত গুণ তার॥ মাটি কাঠ পাথর প্রভৃতি চরাচর। পুরাণে কোরাণে দেখ সকলি ঈশ্বর॥ তাহার মূরতি গড়ি পূজা করে যেই। নিরাকার ঈশ্বর সাকার দেখে সেই॥ সাকার না ভাবিয়া যে ভাবে নিরাকার। সোনা ফেলি কেবল আঁচলে গিরা সার॥ দেব দেবী পূজা বিনা কি হবে রোজায়। স্ত্রী পুরুষ বিনা কোথা সন্তান খোজায়। দেবীপূজা করে হিন্দু বলিদান দিয়া। যবনেরা জবে করে পেটের লাগিয়া॥ দেবী ভাবি হিন্দুরা সিন্দুর দেই গাছে। শূন্য ঘরে নমাজ কি কার তাহে আছে॥ খশম ছাড়িলা যেবা নিকা করে রাঁড়। একে ছাড়ি গাই যেন ধরে আর ষাঁড়॥ ঈশ্বরের বাক্য বেদ আগম পুরাণ। সয়তান বাজী সেই এ যদি প্রমাণ॥ সেই ঈশ্বরের বাক্য কোরাণ যে কয়। সেহ সয়তান বাজী কহিতে কি ভয়॥ হিন্দরে সুন্নত দিয়া কর মুসলমান। কাণে ছেঁদো মুদে যদি তবে সে প্রমাণ॥ কারসাজী বলি কর্ণবেধে বল বাজী। ভেবে দেখ সুন্নত বিষম কারসাজী॥ বেদমন্ত্র না মানিয়া কলমা পড়ায়। তবে জানি সেইক্ষণে সে মন্ত্রে ভুলায়॥ প্রণাম করিতে মাথা দিল সে গোঁসাই। সংসারে যে কিছু মূর্ত্তি তাহা ছাড়া নাই॥ ভেদজ্ঞানী নহে হিন্দু অভেদ ভাবিয়া। যারে তারে সেবা দেয় ভূমে মাথা দিয়া॥ সূর্য্যরূপে ঈশ্বরের পূর্ব্বেতে উদয়। পূর্ব্ব মুখে পূজে হিন্দু জ্ঞানোদয় হয়॥ পশ্চিমে সূর্য্যের অস্ত সে মুখে নমাজ। যত করে মসলমান সকলি অকাজ॥ ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রাহ্মণ সে ব্রহ্মার নায়েব। না মানে না করে খানাপিনার আয়েব। বামহস্ত নাপাক তসবী জপে তায়। হিন্দুরে নাপাক বলে এত বড় দায়॥ উত্তম হিন্দুর মত তাহে বুঝে ফের। হায় হায় যবনের কি হবে আখের॥ যবনেরে কত ভাল ফিরিঙ্গির মত। কর্ণবেধ নাহি করে না দেয় সুন্নত॥ শৌচ আচমন নাহি যাহা পায় খায়। কেবল ঈশ্বর আছে বলে এই দায়॥ মজুন্দার কৈলা যদি এসব উত্তর। ক্রদ্ধ হৈলা জাহাগীর দিল্লীর ঈশ্বর॥ নাজিরে কহিলা বন্দী কর রে বামণে। দেখিব হিন্দুর ভূত বাঁচায় কেমনে॥ ক্রুদ্ধ হয়ে মানসিংহ চলিল বাসায়। বিরচিল পাঁচালি ভারত চন্দ্র রায়॥