মানসিংহ/পাতশার নিকটে উজীরের নিবেদন
পাতশার নিকটে উজিরের নিবেদন।
ফিরিয়া চাও মা অন্নদা ভবানী। জননী না শুনে
কোথা বালকের বাণী। ধর্ম্ম অর্থ মোক্ষ কাম,
সাধন তোমার নাম, বিধি হরি হর ভাবে ও
পদ দুখানি। তুমি যারে দয়া কর, অন্নে পূর্ণ
তার ঘর, না থাকে আপদ কিছু আমি ইহা
জানি॥ পান পাত্র হাতা হাতে, রতন মুকুট
মাথে, নাচাও ত্রিশূলপাণি দিয়া অন্ন পানি॥
ভারত বিনয় করে, অন্নে পূর্ণ কর ঘরে, হরি
ভক্তি দেহ মোরে তবে দয়া জানি॥ ধ্রু॥
কাজি কহে জাহাপনা কত কব আর। কোরাণ টানিয়া কালী ফেলিল আমার॥ নাহি মানে কোরাণ তাবিজ মজবুত। এ কভু খরিশ নহে হিন্দুর এ ভূত॥ উজির কহিছে আলম্পনা সেলামত। আমি বুঝি সেই বামণের কেরামত॥ মানসিংহ কহিয়াছে দেবী পূজে সেই। যখন যে চাহে তাহে দেবী তাহা দেই॥ তুমি তবে দেবীরে হিন্দুর ভূত কয়ে। ভূত দেখা বলি বন্দী কৈলা ক্রুদ্ধ হয়ে॥ সেই দেবী এত করে মোর মনে লয়। মানাও সে বামণেরে মিটিবে প্রলয়। উজিরের বাক্যে জাহাঙ্গীর জ্ঞান পায়। দড় বড় ডাকাইল মানসিংহ রায়॥ মানসিংহ আসিয়া করিল নিবেদন। ভূত জানে তুমি জান জানে সে বামণ॥ আমি দেখিয়াছি বামণের কেরামত। অন্নপূর্ণা ভবানীর মহিমা যেমত॥ ভাল হেতু করেছিনু হজুরে আরজ। নহিলে কহিতে মোর কি ছিল গরজ॥ ভূত বলি দেবীরে সাহেব গালি দিলা। সহরে কহর এত আপনি করিলা॥ এখনো সে বামণেরে কর পরিতোষ। তবে বুঝি ভার দেবী মাপ করে রোষ॥ মানসিংহ রায়ের কথার অনুসারে মজুন্দারে। আনিতে কহিলা দরবারে॥ যোড়হাতে কহে নাজিরের লোক জন। বামণের কাছে যাবে কে আছে এমন॥ মশানেতে শ্মশান করিল যত ভূত। হাতী ঘোড়া উট আদি মরিল বহুত॥ মারা গেল কত শত আমীর উমরা। কেবল তক্তের বক্তে বাঁচিলা তোমরা॥ যমুনার লহর লহুত হৈল লাল। এখন বামণে মান মিটুক জঞ্জাল॥ শুনি জাহাঁগির বড় দিলগির হয়ে মশানে চলিলা ভয়ে দস্তবস্ত হয়ে॥ অন্তরযামিনী দেবী অন্তরে জানিয়া। দয়া হৈল জাহাঁগিরে কাতর দেখিয়া॥ ভূত দেখা বলি ভবানন্দে বন্দী কৈল। বাঞ্ছাকল্পতরু আমি দেখা দিতে হৈল॥ শহরের উপদ্রব বারণ করিয়া। দেখা দিলা জাহাঁগিরে মায়া প্রকাশিয়া॥ আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র রাজরাজেশ্বর রচিলা ভারত চন্দ্র রায় গুণাকর।