মানসিংহ/ভবানন্দের দিল্লী যাত্রা
ভবানন্দের দিল্লীযাত্রা।
দিয়া নানা উপচার, পূজা করি অন্নদার, দিল্লী যাত্রা কৈলা মজুন্দার। জননী তাহার সীতা, রাম সুমার্দ্দার পিতা, সমর্পিল পদে অন্নদার॥ শিরে চীরা হীরা তায়, বিলাতি খেলাত গায়, নানাবস্ত্রে কমর বান্ধিলা। বিল্বপত্র ঘ্রাণ লয়ে, বন্ধুগণে প্রিয় কয়ে, গোবিন্দ দেবেরে প্রণমিলা॥ বাপ মায় প্রণমিয়া, দুইনারী সম্ভাষিয়া, আরোহিলা পালকী উপর। জয় অন্নপূর্ণা কয়ে, চলিলা সত্বর হয়ে, মঙ্গল দেখেন বহুতর॥ ধেনু বৎস একস্থানে, বৃষ খুরে ক্ষিতি টানে, দক্ষিণাতে ব্রাহ্মণ অনল। অশ্ব গজ পতাকায়, রাজা মানসিংহ রায়, আগে আগে সকল মঙ্গল॥ পূর্ণঘট বাম পাশে, রামাগণ যায় বাসে, গণিকারে মালা বেচে মালী। ঘৃত দধি মধু মাসে, রজত লইয়া হাসে, কুজড়ানী দেখাইযা ডালী॥ শুক্লধান্যে গাঁথি হার, কাঞ্চন সুমেরু তার, আশীর্ব্বাদ দিয়াছেন সীতা। নকুল সহিত যান, বাম দিকে ফিরা চান, শিবা রূপে শিবের বনিতা॥ নীলকণ্ঠ উড়ি ফিরে, মণ্ডলী দিলেন শিরে, অন্নপূর্ণা ক্ষেমঙ্করী হয়ে। দেখি যত সুমঙ্গল, মজুন্দারে কুতুহল, চলিলা দেবির গুণ কয়ে॥ শিরে চীরা জামা গায়, কটি আঁটি পটুকায়, দাসু বাসু সঙ্গে দুই দাস। সুতেরে বিদায় দিয়া, সীতাদেবী ঘরে গিয়া, নানা মত ভাবেন হতাশ॥ বাড়ীর নিকটে খড়ে, পার হৈলা নায়ে চড়ে, অগ্রদ্বীপ শেলা কুতুহলে। অঞ্জলি বান্ধিয়া মাথে, প্রণমিয়া গোপীনাথে, স্নান দান কৈল গঙ্গাজলে॥ মনে করি অনভব, গঙ্গারে করিলা স্তব, কৃতাঞ্জলি হয়ে মজুন্দার। ব্রহ্ম কমণ্ডলু বাসি, বিষ্ণুপাদ প্রসূতাসি, শিব জটাজটে অবতার॥ বরমিহ তব তীরে, শরট করট ফিরে, নপুন ভূপতি তব দূরে। রাজ্য লোভে দূরে যাই, তব তীরে রাজ্য পাই, এই মনস্কাম যেন পুরে॥ স্তবে হয়ে তুষ্ট মন, গঙ্গা দিলা দরশন, মজুন্দারে কহেন সরসে। ধন্য তুমি মজুন্দার, ব্রতদাস অন্নদার, আমি ধন্যা তোমার পরশে॥ মহাসুখে দিল্লী যাবে, মনোমতরাজ্য পাবে, মোর তীরে পাবে অধিকার। সন্তান হইবে যত, সবে হবে অনুগত, জনেক হইবে রাজা তার॥ দিয়া এই বরদান, গঙ্গা কৈলা অন্তর্দ্ধান, মজুন্দার হৈলা গঙ্গাপার। কৃষ্ণচন্দ্র নৃপাজ্ঞায়, রায় গুণাকর গায়, অন্নপূর্ণা সহায় যাহার॥