মানসিংহ/ভবানন্দের পাতশার বিনয়

ভবানন্দের পাতশার বিনয়।

 জাহাঁগীর কহে শুন বামণ ঠাকুর। না জানি করিনু দোষ রোষ কর দূর। দেবীপুত্র দয়াময় মোরে কর দয়া। তোমার প্রসাদে আমি দেখিন অভয়া॥ অধম যবন আমি তপস্যা কি জানি। অধর্ম্মেরে ধর্ম্ম বলি ধর্ম্ম নাহি মানি। তবে যে আমায় দেখা দিলা মহামায়া। তার মূল কেবল তোমার পদছায়া॥ অধম উত্তম হয় উত্তমের সাথে। পুষ্পসঙ্গে কীট যেন উঠে সুরমাথে॥ তবে যে পাইলে দুঃখ দুঃখ নাহি ইতে। রাহুহ্রন্ত হন চন্দ্র লোকে পুণ্য দিতে॥ ঘৃণা ছাড়ি ছূয়ে শুদ্ধ করহ আমারে। পরশ পরশে লোহা সোণা করিবারে॥ মজুন্দার রূপ কেন এত কথা কও। জাহাঁপনা সামান্যা মানুষ তুমি নও॥ তবে মোরে বড় বল দেবীভক্ত জানি। আমা হৈতে তুমি বড় ভক্ত অনুমানি॥ যে রূপে তোমারে দরশন দিয়া দেবী। এরূপ না দেখি আমি এতদিন সেবি॥ ইথে বুঝি আমাহৈতে তুমি তাঁর প্রিয়। এই নিবেদন করি কৃপাদৃষ্টি দিয়॥ পাতশা কহেন শুন বামণ ঠাকুর। দেবী পূজা করি মোর পাপ কর দূর॥ যে পদ পূজিলে পাব সেই পদে ঠাঁই॥ হায় রে পূজিব কিসে কোন চীজ নাই॥ অন্তর যামিনী দেবী দানা হস্ত দিয়া। পূজার সামগ্রী যত দিলা পাঠাইয়া॥ দেখিয়া সবারে আরো বাড়িল বিস্ময়। সাক্ষাত দেবীর পুত্র মজুন্দারে কয়॥ জাহাঁগীরে কহেন ঠাকুর মোরে বাঁচা। ভাল মতে বুঝিনু তোমার দেবী সাঁচা॥ জাহাঁগীর ঢেড়ী দিলা সকল শহরে। অন্নপূর্ণা পূজা সবে কর ঘরে ঘরে॥ সেইখানে মজুন্দার মুদিয়া নয়ন। উর্দ্দেশেতে অন্নদারে কৈলা নিবেদন॥ দেশ কাল পাত্র বুঝি পুজার নিয়ম॥ অন্তরযামিনী তুমি জান সব ক্রম॥ পাতশা অধ্যক্ষ দরবার পূজা স্থান। সদস্য কেবল দস্যু মোগল পাঠান॥ কাজী ছাড়ে কলমা কোরাণ ছাড়ে কারী। হুলাহুলি দেই যত যবনের নারী॥ এমন পূজার ঘটা কবে হবে আর॥ নিবেদিনু অন্নপূর্ণা যে ইচ্ছা তোমার॥ অন্নে পূর্ণ করি দিল্লী সকলে বাঁচাও। পাতশা প্রণাম করে কটাক্ষেতে চাও॥ কাজী হাজী কারী আদি যবন রাবত। সর্ব্বশুদ্ধ পাতশা হইলা দণ্ডবত॥ মধুর নৌবত বাজে নাচে রামজনী। মজুন্দার মানসিংহ পড়িলা অবনী॥ পূজা পেয়ে অন্নপূর্ণা দিলা কৃপাদৃষ্টি॥ সকলের উপরে হইল পুষ্প বৃষ্টি। সেই ফুল চালু কলা প্রসাদ বলিয়া। প্রেত ভূতগণ সবে লইল লুটিয়া॥ পূর্ব্বমত অন্নে পূর্ণ হইল সহরে। অন্নপূর্ণা পূজা সবে করে প্রতি ঘরে॥ পূজা লয়ে অন্নপূর্ণা মহাহৃষ্টা হয়ে। কৈলাস শিখরে গেলা নিজগণ লয়ে॥ মহানন্দে জাহাঁগীর গুণাগীর হয়ে। চলিলেন ভবানন্দ মজুন্দারে লয়ে॥ পাতশা বসিলা গিয়া তক্তের উপরে। মানসিংহ বিদায় হইলা নিজঘরে। মজুন্দার রাজাই পাইলা ফরমান। খেলাত কাটার ঘড়ী নাগারা নিশান॥ পাতশার নিকটেতে হইয়া বিদায়। বিস্তর সামগ্রী দিলা মানসিংহ রায়॥ দাসু বাসু আদি যত পলাইয়াছিল। সংবাদ পাইয়া সবে আসিয়া মিলিল॥ দিল্লী হৈতে মজুন্দার দেশেরে চলিলা। ত্রিবেণীর স্নান হেতু প্রায়াগে আইলা॥ করিলেন স্নানদান প্রয়াগের নীরে। দাসু বাসু নিবেদন করে ধীরে২॥ ইহাঁর মহিমা কিছু কহ নিমা সীমা। কার অধিষ্ঠানে এতই হয় মহিমা॥ জ্ঞানবলে তোমরা আন্ধারে দেখ আলা। চক্ষুকর্ণ আছে মোরা তবু কাণা কালা॥ শুন অরে দাসু বাসু কন মজুন্দার।গঙ্গার প্রভাবে এত মহিমা ইহাঁর॥ ভারতেরে দয়া কর গঙ্গা দয়ামই। এই ছলে গঙ্গার মহিমা কিছু কই॥