মালা/কাহার লাগিয়া

কাহার লাগিয়া

কাহার লাগিয়া হৃদয় পাতিয়া রয়েছি কাহার আশে?
ল’য়ে আশা প্রাণে কাহার কারণে কেন বা রয়েছি বাসে?
চমকিত মনে চকিত শ্রবণে হইয়া তৃষিত আঁখি।
বেড়াই ঘুরিয়া চঞ্চল হইয়া হৃদয়ে কাহারে দেখি?
সদা মনে হয় দেখিব কাহায় কি বাসনা প্রাণে জাগে।
কার স্মৃতি হায় ভরা এ হৃদয় কাহার প্রণয়-রাগে॥
উঠি চমকিয়া থাকিয়া থাকিয়া শিহরি চকিত চাহি।
হয়ে স্থিরমন করিয়া যতন কার গুণ সদা গাহি?
কার রূপ হেরি এ ভুবন ভরি রহেছ সকলি ব্যাপি?
নভে জলে স্থলে এ হৃদয়-তলে হেরিয়া যে উঠি কাঁপি॥
সুনীল আকাশে মোহন বেশে ওই যে সুধাংশু হাসে।
কার রূপ ল’য়ে গগনে রহিয়ে সকল আঁধার নাশে।
অমল ধবল জোছনা তরল ঢালিছে ধরণী পরে।
কার প্রণয়ের এ ধারা প্রেমের ঢালে গো প্রীতির ভরে?
ফুটিলে তারকা যায় কি গো দেখা কাহার উজল আঁখি।
রহে বহু দূরে তথাপিও তারে তৃষিত নয়নে দেখি॥
সুমন্দ মলয় মৃদু মৃদু বয় কাহার সুরভি লয়ে।
কাননে কুসুম শোভা মনোরম রয়েছে শোভিত হয়ে॥


লয়ে কার শোভা এত মনোলোভা ফুটিতেছে ওই ফুল।
পবিত্র মূরতি এবা কার স্মৃতি কার রূপ সমতুল॥
বসি তরু পরে বিহগ সুস্বরে নিজ মনে গাহে গান।
সচকিত আঁখি তাহারে নিরখি চমকিয়া উঠে প্রাণ॥
যবে শুনি দূরে পাতার মর্ম্মরে মনে হয় কেবা আসে।
উঠিয়ে ত্বরিতে কাহারে হেরিতে ধাই মরীচিকা পাশে
দেব দিবাপতি কার যশঃ-ভাতি প্রকাশে জগৎ মাঝে।
উজলিত কায় যশের ছটায় আঁধার পলায় লাজে॥
স্বচ্ছ সরোবরে প্রতিবিম্ব পড়ে কাহার ললিত রূপ।
হৃদয় মুকুরে দিবানিশি যার জাগিতেছে সেই মুখ॥
দিবানিশি যার স্মৃতিতে আমার রয়েছে ভরিয়া প্রাণ।
জগৎ ভরিয়া উঠে উথলিয়া হৃদয়েতে যার স্থান॥
রাখিয়া হৃদয়ে নয়ন মুদিয়া সতত রহি যে ধ্যানে।
নিরখি তাহারে এ চিত্ত-মুকুরে বাসনা-ব্যাকুল প্রাণে॥
এ দীর্ঘ বিরহ-অবসানে কবে জীবনের পরপারে।
আত্মায় আত্মায় মিলিয়া দোঁহায় গাঁথিয়া হৃদয় তারে॥
গাহিব দুজনে প্রীতিফুল্লমনে মিলন-মুখর-গীতি।
সেই শেষ দিন-আশায় এখন লভি যে হৃদয়ে প্রীতি।৷