মালা/জানাব হৃদয়-যাতনা

জানাব হৃদয়-যাতনা।

এসহে হৃদয়ে হৃদয়-দেবতা জানাব হৃদয় যাতনা।
গোপনেতে রহে হৃদয়ের ব্যথা কহিব মরম-বেদনা॥
বাজিতেছে প্রাণে কি দারুণ ব্যথা,
রহিয়াছে প্রাণে কত কাতরতা
কাঁদিয়া কহিব এ দুঃখের কথা আরত গোপন রহে না।

এস হৃদয়েশ! বারেক হেথায় আমার হৃদয়-মন্দিরে।
উন্মুক্ত করিব হৃদয়-অর্গল রুদ্ধ হৃদয়-দুয়ারে॥
দেখাইব হৃদি করিয়া বিদার,
কি যাতনা প্রাণে সহি অনিবার,
তোমারে হে দিব এ দুঃখের ভার তুমি যা দিয়াছ আমারে।

কি বিষম জ্বালা সহি হৃদয়েতে কহিব তোমায় গোপনে।
বিহনে তোমার কি দুঃখ আমার দেখিবে তা তুমি নয়নে॥
ভরি রহে প্রাণে বিষাদের রাশি,
নিরাশার সদা শুনি অট্টহাসি,
নয়নের জলে সতত যে ভাসি আমি গো তোমার বিহনে।৷


নিবেদিব প্রাণে যত দুঃখ পাই তোমারে জীবন-বল্লভ!
করিয়া সাধনা কব এ বেদনা এসহে সাধন-দুর্ল্লভ!
দারুণ যাতনা সহিতে না পারি,
নাহি কহি কারে গুমরে যে মরি,
কহিব তোমারে এ দুঃখ আমারি আবার রহিব নীরব॥

সদা দহে প্রাণ বিরহ অনলে করি শত শিখা বিস্তার।
নাহি নিবারণ জ্বলে অনুক্ষণ হৃদয় হ’তেছে অঙ্গার॥
তব দরশনে হইবে শীতল,
জ্বলিতেছে যাহা প্রাণে অবিরল,
দেহ শান্তিময়! প্রাণে শান্তিজল দরশন-বারি তোমার।

উছলি বহিছে দুঃখের তরঙ্গ রোধিবারে নারি তাহারে।
সতত আমারে রাখে ডুবাইয়ে গভীর দুঃখের পাথারে॥
নাহি তার কূল কিনারা কি পার,
কি বিষম এই দুঃখ-পারাবার,
কূলে কূলে ভরা রহে অনিবার দেখাইব তাহা তোমারে॥

কাঁপাইয়া মম সদাই অন্তর বহিছে দুঃখের হিল্লোল।
দুঃখ-সমীরণ হতেছে বহন কাঁপায়ে হৃদয়-পল্বল।৷


হৃদি সরোবরে নাহি শোভা আর,
ওহে প্রাণময়! বিহনে তোমার,
হাহাকার প্রাণে উঠে অনিবার ভীষণ এ দুঃখ-কল্লোল।

মরুভূমি সম জীবন প্রান্তর ধূ ধূ করে তোমা হারায়ে।
দরশন-আশা দারুণ পিপাসা রহিবে তৃষিত হৃদয়ে।
হৃদয়েতে জ্বলে কামনার শিখা,
নয়নেতে বহে মায়া মরীচিকা,
বাসনার বেগ নাহি যায় রাখা হৃদয়েতে আর বাঁধিয়ে॥

সদা তোমা পানে ধায় মত্ত বেগে এ প্রমত্ত মন ছুটিয়া।
কোথা আছ তুমি দেখিব হে আমি ত্রিভুবন ভ্রমি ঢুঁড়িয়া
যথা আছ তুমি যাব তথা ছুটি,
পড়িব তোমার চরণেতে লুঠি,
দুঃখ জ্বালা মম সব যাবে টুটি রহিব তোমাতে মিশিয়া।