ধ্রুব তারা।

হারায়েছি জীবনের নির্দিষ্ট সে ধ্রুব তারা।
লক্ষ্যভ্রষ্ট গ্রহ সম ভ্রমি সদা দিশাহারা॥
শূন্য পথে ফিরে যথা হ’য়ে গ্রহ কক্ষচ্যুত।
তেমতি নাহিক লক্ষ্য নাহি কিছু অনুভূত॥
পড়ে খসি মধ্যপথে রহে সদা ভ্রাম্যমান।
রহে ব্যোম রহে ক্ষিতি বহু দূরে ব্যবধান॥
আকুল উদ‍্ভ্রান্ত প্রাণে অবিশ্রান্ত গতি তার।
নাহি লক্ষ্য নাহি স্থিতি নাহি স্থান পড়িবার॥
অবিরাম দ্রুতগতি অনির্দ্দিষ্ট পথে হায়।
ভ্রমিতেছে অবিরত ফিরাইবে কেবা তায়॥
সেই রূপ জীবনের মম অনির্দিষ্ট গতি।
অন্বেষি উদ্ভ্রান্ত মনে আমার প্রাণের পতি॥
কক্ষচ্যুত গ্রহ সম হইয়া আশ্রয়হীন।
ভ্রমিতেছি শূন্য প্রাণে খুঁজি তারে নিশিদিন।
অনির্দ্দিষ্ট জীবনের গতি মম চলি যায়।
আশ্রয় করিতে চাহে পুনঃ সেই পদাশ্রয়।
জুড়াইতে চাহে প্রাণ সেই স্নেহ করুণায়।
সেই প্রেম ভালবাসা অভিমুখে সদা ধায়।


খসিয়া পড়িনু হায় মধ্য পথে জীবনের।
ভ্রমিব বা কতকাল দীর্ঘ পথে অতীতের॥
কাটাইব কতকাল উন্মত্ত কাতর প্রাণে।
কত বা যোজন পথ নাহি জানি অনুমানে॥
কত দিনে সমাপিব লক্ষ্য শূন্য গতি এই।
চির লক্ষ্য স্থানে গিয়া নিরখিব লক্ষ্য সেই॥
ফুরাইবে এ ভ্রমণ হবে গতি স্থিরতর।
নির্দ্দিষ্ট পথেতে গিয়া প্রবেশিব সে নগর॥
সম্মুখে না হেরি পথ আঁধারে পূরিত দিক্‌।
ভ্রমে যথা নিশাকালে আঁধারে ভ্রান্ত পথিক।
ভবিষ্যৎ ঘটাকাশ আঁধারে আচ্ছন্ন রয়॥
দুঃখের তুষারপাতে ঝাপে দিক্ সমুদয়।
হিমানীতে সমাচ্ছন্ন রহে দিক্ দিগন্তর!
কুজ্ঝটিকা ঘিরি রহে সতত মম অন্তর॥
বিষম করকাপাতে করে হায় গতি রোধ।
ভীষণ দুঃখের ঝঞ্ঝা যুঝে যেন শত যোধ॥
অগ্রসর হইবার নাহি জানি কোন ক্রম।
কবে বা হইবে শেষ জীবনের গতি মম॥
গিয়া সেই জীবনের পরপার মহাদেশ।
এ লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন হইবে ভ্রমণ শেষ।৷


হইব যে সম্মিলিত মম সেই লক্ষ্য স্থল।
হেরিব সে ধ্রুব তারা জীবন হবে সফল॥
উদ্দেশ্যবিহীন প্রাণ হইবে উদ্দেশ্যময়।
যে উদ্দেশ্যে এই প্রাণ ব্যাকুলিত সদা হয়॥
হেরিয়া নাথেরে তবে জীবন হবে নিশ্চিত।
মিলিব সে লক্ষ্যস্থলে নিশ্চিত করিয়া চিত।
চির স্থির যথা হয় সকল জীবের বাস।
নাহি তথা ক্ষয় কিছু নাহি তথা হয় হ্রাস॥
সকল পদার্থ যথা সমভাবে রহে স্থির।
পিপাসা মিটিবে যথা পান করি স্বাদু নীর॥
মিটিবে এ চির ক্ষুধা আহারেতে সুধাফল।
সুধাসিক্ত হবে প্রাণ নিবারিব এ অনল॥
এ ঘোর ঘূর্ণায়মান গতি মম হবে স্থির।
স্থির ভাবে স্থির চিত্তে যাব তথা নতশির॥
চির বিশ্রামের স্থলে লভিব চির বিশ্রাম।
মিলিব সে প্রিয়তমে রব সুখে অবিরাম॥