না পোহাল আর

পোহাইল ওই আধার রজনী
ওই যে গগনে উদিল রবি।
আলোকিত হ’ল সকল ধরণী
হেরিয়া রবির নূতন ছবি॥

হাসিল জগৎ দিক্ চরাচর
এ আলো পরশে হাসিল ওই।
হাসিল সাগর গহন ভূধর
নাহি হাসে কেহ এ হাসি বই॥

হাসে তরুলতা হাসে ফুল পাতা
নব রবিকর মাখিয়া গায়।
প্রকৃতি হাসিয়া কহে যেন কথা
সোনালি দুকূলে আবরি কায়॥

গাহে ওই পাখী কলকণ্ঠ তানে
মুখরিত করি ধরণী তল।
আলোক পরশে হাসিল হরষে
উছলিয়া হাসে সরসী-জল।


হরিৎ বরণ নব দূর্ব্বাদলে
পড়েছে নবীন কনক-রেখা।
নব প্রভাকর ওই নভস্তজালে
নব বেশে ওই দিলেন দেখা।

পোহাইল ঘোর আঁধার তামসী
উজলিল দিক্‌ রবির করে।
হাসিলেন সুখে প্রকৃতি রূপসী
হেরি প্রভাকরে গগনোপরে॥

সাজিল প্রকৃতি নব বধূবেশে
ললাটে ধরিয়া উষার ছটা।
রক্ত রাগ আজ শোভে শিরোদেশে
সিমন্তে সিন্দুর মরি কি ঘটা॥

লয়ে রাশি রাশি সুরভি কুসুম
পরেছে অঙ্গেতে প্রকৃতি রাণী।
গগন উপরে হেরি প্রিয়তম
নিজ প্রাণপতি ও দিনমণি।

প্রভাতী মলয় বহে মৃদু মৃদু
সুশীতল করি প্রকৃতি-মন।

মৃদু সমীরণ লুটে ফুল-মধু
প্রকৃতি-হৃদয়ে ঢলে পবন॥

আঁধার রজনী প্রভাতিল পুন
উদিল গগনে সুখ-তপন।
আলােকি আমার হৃদয় গগন
না ভাতিল সেই সুখ-কিরণ॥

আঁধার রজনী আর ত আমার
নাহি পােহাইবে জনম লাগি।
হৃদয় গগন করি অন্ধকার
অস্তমিত সেই সুখের রবি॥

হাসিল প্রভাতে ধরাতলবাসী
প্রভাকরে হেরি গগন থালে।
আমি অভাগিনী ফুরায়েছে হাসি
নিরাশার রাশি আমার ভালে॥

প্রভাতেতে উঠি লয়ে অশ্রুধারা
সারাদিন তাহা ঝরে নয়নে।
কি বিষম জ্বালা এ হৃদয়ভরা
হারাইয়া সেই বাঞ্ছিত ধনে॥


মানস-গগনে ছিল যে আমার
করি সমুজ্জ্বল সে দিনমণি।
গিয়াছেন চলি অস্ত-পারাবার
করিয়া আমারে চিরদুঃখিনী॥

হেরিয়া আমার এ দুঃখ দুর্গতি
হেরিয়া আমার নয়ন-ধারা।
কিছু কি বেদনা ও প্রকৃতি সতি!
নাহি তব মনে ওগো নিষ্ঠুরা?

মানস-উদ্যানে নাহি ফুটে ফুল
বহে সুমন্দ সুখ পবন
মরম-বেদনা করিছে গকুল
নিরাশার শ্বাস করি বহন॥

ডাকে বিহগী কাকলি করিয়া
ধরে কোকিল পঞ্চম তান।
হৃদয়-উদ্যান গেছে শুকাইয়া
সদা তাহে হয় দুঃখের গান॥

নব রবি প্রেমে তুমি গো মগনা
নব আশা হৃদে সারাটি বেলা।

নবীন কামনা নবীন বাসনা
কত নব ভাবে কর গাে খেলা।

মাের মন হতে হয়েছে বিলয়
কামনা বাসনা প্রণয় স্নেহ।
জীবনের বীণা নীরবেতে রয়
কি কাজ রাখিয়া এ ছার দেহ?

যাব গাে তথায় সে অস্ত-সাগরে
গিয়াছেন যথা মম প্রাণেশ।
মিশিবে এ জ্যোতি সে চরণােপরে
গিয়া পরপারে সে মহাদেশ।