পরাজয়।

হৃদয়ের সহ আজি করিব সংগ্রাম।
দিবানিশী কেন তারে ভাব অবিরাম॥
যে তোমারে ভুলিয়াছে এ জনমমত।
তাহার কারণে সদা কেন ব্যাকুলিত?
যে তোমারে ফেলিয়াছে মরুভূমি মাঝে।
তোমার দুঃখের কথা প্রাণে নাহি বাজে
দুরন্ত অশান্তি হয় দিয়াছে ঢালিয়া।
হৃদয় হইতে দেছে বাসনা মুছিয়া॥
মুখভরা যেই হৃদি ছিল অনিবার।
এখন ক’রেছে সে যে দুঃখ-পারাবার॥
প্রাণ হ’তে মুছিয়াছে অরুণের রাগ।
তাহাতে ভরিয়া দেছে বিষাদের দাগ॥
প্রাণের পাখীর গান দিয়াছে থামায়ে।
জীবনের যত আলো দিল সে নিভায়ে॥
চাঁদের কিরণমাখা ছিল যেই প্রাণ।
করিয়াছে তারে হায় জ্বলন্ত শ্মশান॥
ফল ফুলে যে হৃদয় ছিল সুশোভিত।
ক’রেছে এখন তাহা ভস্মে পরিণত॥


ঊষার রক্তিম-ছটাভরা যে হৃদয়।
ভরিয়াছে সেই স্থান দুঃখ তমসায়॥
অরুণের নব রাগে আলোকিত ছিল।
ঢাকিয়া দুঃখের জালে আঁধার করিল॥
প্রস্ফুটিত ছিল সদা হৃদি কুঞ্জবন।
সুখ আশা ছিল তাহে ভ্রমর গুঞ্জন॥
প্রণয় পীযুষ ভরা ছিল যে হৃদয়ে।
বিচূর্ণ করিয়া তারে দিয়াছে দলিয়ে॥
নয়নেতে ছিল যাহা সাধের অঞ্জন।
বিষাদ তাহাতে আহা ক’রেছে লেপন॥
সতত বহিত প্রাণে সুখের হিল্লোল।
দিবানিশি উঠে তথা দুঃখের কল্লোল॥
হৃদয়ে বহিত সদা সুখের নির্ঝর
প্লাবিত করিত মম তাহাতে অন্তর॥
ভাবিতাম সুখভরা হায় এ ধরণী।
সুখোচ্ছ্বাসে ভাসিতাম দিবস রজনী॥
কিন্তু হায় হইয়াছে জগৎ এখন।
অশান্তির বাসভূমি দুঃখ-নিকেতন॥
প্রকৃতির আয়োজন ছিল যত হায়।
অধিকার করিয়াছে সকলি হৃদয়॥


করায়ত্ত্ব করিবারে সবে নাহি পারি।
বিদ্রোহী হইয়া তারা রহিয়াছে ঘিরি॥
অধিকার করিয়াছে হৃদয় আমার।
আধিপত্য করিতেছে প্রাণে অনিবার॥
হৃদয়ের সহ আজি সংগ্রাম করিব।
বিজয়িনী হব কিবা হারিয়া রহিব॥
আশা সাধ ভালবাসা লইব কাড়িয়া।
কামনা বাসনা যত দিব তাড়াইয়া॥
প্রেমের সে অনুরাগ না রাখিব মনে।
প্রণয়ের সুখ-স্মৃতি ভুলিব যতনে॥
ভুলিয়াছে যে আমারে হইয়া নিদয়।
তাহার কারণে মন কেন মত্ত হয়?
সুখের সে স্মৃতি হায় হব বিস্মরণ।
পাষাণে গঠিব হৃদি পাষাণেতে মন॥
দেখিব যুঝিয়া আজি হৃদয়ের সহ।
দূরিবারে পারি কিনা অতীতের মোহ॥
মুছিবারে পারি কিনা ছায়া সে স্মৃতির।
ভুলিবারে পারি কিনা ভাব প্রকৃতির॥
একাগ্রতা সেনাপতি সম্মুখে রাখিয়া।
অতীতের যাহা কিছু লইব জিনিয়া॥


হায় হায় কি করি আসি যুঝিবারে।
মানিলাম পরাজয় নিরাশ অন্তরে॥
দৃঢ়রূপে অধিকার করিল হৃদয়।
এ জীবনে তাহা কভু ভুলিবার নয়॥
আধিপত্য করে সদা হৃদয়েতে আসি।
অতীতের সেই স্মৃতি প্রাণে রহে মিশি॥
সেই প্রেম ভালবাসা প্রণয়-বন্ধন।
শতগুণ হ’য়ে প্রাণ করিছে বেষ্টন॥
ভাবিলাম পরাজিব বিদ্রোহীহৃদয়।
তাহাতে বিফল হ’য়ে মানি পরাজয়॥
চিরদিন এ হৃদয়ে যার অধিকার।
সেই স্মৃতি বিদূরিতে কি সাধ্য আমার?
উন্মত্ত উদভ্রান্ত মন হায় ভ্রমবশে।
বিপাকে পড়িনু যে গো যুঝিবারে এসে॥
ওহো কি দারুণ তৃষা উঠিল জাগিয়া।
হৃদয়ের তন্ত্রী গুলি উঠিল কাঁপিয়া॥
হৃদয়ের স্তরে স্তরে ধ্বনিল সে নাম।
ব্যাপিয়া সে রূপ রাশি জিনিল সংগ্রাম॥
ভুলুক সে ভুলিয়াছে ক্ষতি নাহি তায়।
আমি যে বাসিব ভাল সতত তাহায়॥


ভুলিব না ভুলিব না সে মধুর স্মৃতি।
তাহার মধুর প্রেম স্মরি দিবারাতি॥
মানসে লভিব প্রীতি পূজিয়া তাহারে।
দিবানিশী সেই রূপ ভাৱিব অন্তরে॥
ভুলিয়াছে ভালবাসা ভুলেছে আমায়।
আমি যে যাপিব কাল তাহারি আশায়॥
প্রীতি প্রেম-অনুরাগ করি একত্রিত।
হৃদয়ে করিব সেই দেবতা পূজিত॥
উপেক্ষার অনাদর না ভাবিব মনে॥
যত দুঃখ সহিতেছি এ পোড়া জীবনে॥
প্রণয়ের তরুমূলে সাধনার বারি।
সিঞ্চন করিব আমি দিবা বিভাবরী॥
বাসনা কামনা ল’য়ে সদা তার নামে।
যাপিব তাহার ধ্যানে জীবন-সংগ্রামে॥
চাহিনাক প্রতিদান চাহিনা সোহাগ।
চাহি প্রণয় প্রীতি প্রেম অনুরাগ॥
বিস্মৃতিরে সমাদরে করিয়া গ্রহণ।
আশা পথ চাহি তারি রব অনুক্ষণ॥
সঁপেছি এ মন প্রাণ যাহার চরণে।
উৎসর্গ হৃদয় যার প্রতি সম্পাদনে॥

নীরবে এ পূজা মম করিব প্রদান।
জীবনান্তে সেই পদে লভিবারে স্থান॥
হৃদয়-ঈশ্বর ওহে জীবনের সখা!
জীবনের পরপারে দিও মোরে দেখা॥
স্মরিও এ অভাগীরে সেই শেষ দিনে।
আবার মিলিব মোর। সে সুখমিলনে॥
ভুলিব এ দুঃখ জ্বালা বিরহ বেদনা।
চরণেতে দিবে স্থান করিয়া করুণা॥
বিস্মৃতির অনুযোগ না রহিবে আর।
চিরসুখে রব মোরা সেই পরপার॥