মা/দ্বিতীয় খণ্ড/তেরো

—তেরো—

 পরদিন ভোরে অপ্রত্যাশিতভাবে ইগ্নাতি এসে হাজির হয়। তাদের দলের পাঁচজন ধরা পড়েছিল। বাকি সব কেউ পালিয়েছে, কেউ পুলিসের সন্দেহে পড়েনি।

 পুলিসের সাড়া পেয়েই ইগ্নাতি ঘব থেকে লাফ দিয়ে প’ড়ে ঝোঁপ এবং বনের আড়ালে আত্ম-গোপন ক’রে শহরের দিকে ছুটেছে। সাত দিন পরে সে শহরে এসে পৌঁছুল। হেঁটে হেঁটে পা ধরে গেছে, তবু তার মন খুশি। জুতো খুলে সে একটুকরো কাগজ বের ক’রে মার হাতে দিলো—রাইবিন লিখছে মাকে চিঠি··· আমাদের আরো বই চাই, আরো ইস্তাহার চাই। সেই মহিলাটিকে আমাদের জন্য লেখা পাঠাতে বলবেন···

 রাইবিনের চিঠি প’ড়ে মার চোখে জল এলো···তার গ্রেপ্তারের সেই করুণ কাহিনী ইগ্নাতিকে শোনান তিনি।···

 তারপর ইগ্নাতির ফুলো পায়ের দিকে চেয়ে আইভানোভিচকে তিনি বলেন, ওর পায়ে একটু অ্যালকোহল মালিশ করা দরকার।

 আইভানোভিচ্ বললো, নিশ্চয়।

 সে অ্যালকোহল নিয়ে এলো। মা ইগ্নাতিব পা ধু’য়ে অ্যালকোহল মালিশ করে দিলেন।

 ভদ্দরলোক আইভানোভিচ যে তার মতো ছোট লোকের ওপর এতোটা দরদ দেখাবে ইগ্নাতি তা কল্পনাও করতে পারেনি। কাজেই সে অতি মাত্রায় মুগ্ধ এবং অবাক হ’ল। আইভানোভিচ আড়ালে গেলে বললো, আশ্চর্য ব্যাপার!

 কি আশ্চর্য ব্যাপার?

 এই—একদিকে ওরা মুখে ঘুষি চালায়, আর এক দিকে ধোয়ায় পা। মাঝখানে···

 মাঝখানে কি?

 আইভানোভিচ হঠাৎ দোর গোড়ায় এসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললো, মাঝখানে একদল লোক··· যারা প্রহারকর্তার হাতে চুমু খায়, আর প্রহৃতের রক্ত শোষণ করে।

 ইগ্নাতি সসম্ভ্রমে তার দিকে চেয়ে বললো, তাই ঠিক।

 চা খেতে ব’সে সে বললো, আমার কাজ ছিল, কাগজ বিলি করা··· হাঁটতে ওস্তাদ ছিলুম কিনা, তাই রাইবিন এই কাজের ভার দিয়েছিল।

 আইভানোভিচ জিগ্যেস করলেন, লোকে কি খুব পড়ে?

 হাঁ খুব—যারা পারে। এমন-কি অনেক ধনীও পড়ে, তবে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নয়! আমরা এ ছড়াই জানলেই শ্রীঘর— এ যে তাদের মরণ-ফাঁদ।

 মরণ-ফাঁদ কেন?

 তা ছাড়া কি? চাষীরা এখন আর জমিদারের তোয়াক্কা না বেখে নিজেরাই জমি বিলি-বন্দোবস্ত করতে শুরু করেছে। ধনীরা কি জমি কামড়ে ব’সে থাকতে পারবে? চাষীরা রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দেবে ধনীদের··· মুনিবও থাকবে না, মজুরও থাকবেনা দুনিয়ায়। এ হাঙ্গামাকে কে ডেকে আনে, বলো?

 রাইবিনের গ্রেপ্তার সম্বন্ধে ইস্তাহার-বিলির কথায় ইগ্নাতি সাগ্রহে ব’লে উঠল, আমায় দিন, আমি যাচ্ছি। বনের মধ্যে একটা জায়গায় রেখে সবাইকে বলবো, যাও, ঐখানে গিয়ে নিয়ে এসো। আমিও ধরা পড়বো না, কাজও ফতে হ’বে।

আইভানোভিচ বললো, না বন্ধু, তুমি না! যাবো আমি, তুমি শুধু আমাকে সব খবরাখবর বাৎলে দেবে।

 ইগ্নাতি তাতেই রাজি হ’ল। ফন্দি-ফিকির বাৎলে দিতে দিতে বললো, জানলায় চারটে ঘা দেবে। পয়লা তিনটে···তারপর একটু থেমে আর একটা। একজন লাল-চুল চাষী দোর খুলে দিলে তুমি বলরে, ধাই কোথায়, ওদের কাছ থেকে এসেছি···বাস, এইটুকুই বলবে! তা’হলেই বুঝবে সব।

 আইভানোভিচ চ’লে গেলো।