মা/দ্বিতীয় খণ্ড/চৌদ্দ
—চৌদ্দ—
ফেরারী নিকোলাইর পক্ষে চোরের মতন লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ানো আর নিষ্কর্মা-জীবন যাপন করা হয়েছিল অসহ্য। কাজেই রাইবিনকে জেল থেকে মুক্ত করার বন্দোবস্তে সেই হ’ল প্রধান উৎসাহী।
পরিচালনার ভার নিলে শশেংকা, আর তাদের সঙ্গে যোগ দিলো গড়ুন···গড়ুনের স্বার্থ, তার ভাইপোও এই সঙ্গে মুক্ত হ’বে। মাও সঙ্গে গেলেন নেহাৎ যেচে···প্রাণের টানে। জেলের সেদিকটা গোরস্থান, নির্জন, অনেকটা ফাঁকা। সেদিকে চললেন মা। পথে দু’জন সৈনিকের সঙ্গে দেখা—মা অত্যস্ত ব্যস্ততার ভাব দেখিয়ে বললেন, হাঁগা, আমার ছাগল দু’টি হেথা কোন্দিকে গেল, দেখেছো?
না।
সৈন্যরা চ’লে গেলে মা নির্ধারিত স্থানটিতে এসে দাঁড়ালেন। নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হ’ল। মা কেঁপে উঠলেন। ঐ আসছে। জেলের দেয়ালের গা ঘিঁসে একটি ল্যাম্পপোস্ট।
একটি লোক বাতিওয়ালার মতো পা ফেলে ফেলে ল্যাম্পপোস্টের কাছে এলো। তার কাঁধে একটা দড়ির সিঁড়ি। বেশি ব্যস্ততা না দেখিয়ে সে সিঁড়িটা দেয়ালে আটকে অতি সহজভাবে বেয়ে ওপরে উঠে দাঁড়ালো, হাত দুলিয়ে ইঙ্গিত করলো, তারপর তর তর ক’রে নেবে এসে অদৃশ্য হ’য়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে জেলের ভেতর থেকে দেয়াল টপকে বাইরে নেবে এলো রাইবিন এবং গড়ুনের ভাইপো। তাদেরও অদৃশ্য হ’তে বেশি দেরি হ’ল না।
পরক্ষণেই জেলের পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠলো···পুলিস ছুটছে, সৈন্য ছুটছে···মহা হুলস্থুল।
একটা পুলিস ছুটতে ছুটতে মাকে এসে প্রশ্ন করলো, এই বুড়ি··· একটা লোক···কালো দাড়ি তার···তাকে এখান দিয়ে পালাতে দেখেছিস?
হাঁ, বাবা। উই দিকে গেলো...ব’লে মা উল্টো দিক দেখিয়ে দিলেন। সে মহোৎসাহে সেদিকে চ’লে গেলো।
মাও বাড়ি চ’লে এলেন।
হপ্তাখানেক পরে আদালত লোকে লোকারণ্য। আজ মামলা শুরু। আসামীদের আত্মীয়েরা ভিড় ক’রে এসে বসেছে। মা বসেছেন কম্পান্বিত হৃদয়ে, শিজভের পাশে। বিচার-মঞ্চের পেছনের দুয়ার খুলে বিচারকেরা এলেন। সবাই উঠে দাঁড়ালো। তারপরই এলো অন্য এক দুয়ার দিয়ে রক্ষী-সমেত পেভেল, এণ্ড্রি, মেজিন, গুসেভ-রা বাপ-ছেলে, শ্যাময়লভ, বুকিন, শোমোভ এবং আরো পাঁচজন যুবক···মা তাদের নাম জানেন না।