মা/দ্বিতীয় খণ্ড/নয়

—নয়—

 আগের সেই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে আইভানের সেবা-শুশ্রূষার রীতিমতো বন্দোবস্ত করে কর্মীরা কাজের কথা পাড়লো।

 ডাক্তার বললো, প্রচার-কার্য আমাদের খুবই কম চলছে। ওটা বেশ জোরে এবং ব্যাপকভাবে শুরু করা দরকার।

 আইভানোভিচ সে কথায় সায় দিয়ে বললো, চারদিক থেকেই বইয়ের তাগিদ আসছে, অথচ আজো একটা ভালো ছাপাখানা হল না আমাদের। লিউদ্‌মিলা খেটে খেটে মরছে— তাও একজন সাহায্যকারী দরকার।

 শোফি বললো, কেন, নিকোলাই?

 শহরে সে থাকতে পারবে না। নতুন ছাপাখানাটা হলে সেখানে সে ঢুকে পড়বে,—সেখানেও আর একজন লোক লাগবে।

 মা বলে উঠলেন, আমি হ’লে চলে না?

 শহরের বাইরে থাকতে হবে, মা, পেভেলের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না এতো..তোমার কষ্ট হবে।

 হ’ক। আমি যাবো, রাঁধুনীর কাজ করবো।

 শহরের উত্তেজনা আর ভালো লাগছিল না বলে মা এই কাজ বেছে নিলেন

 পরদিন জেলে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হাতের মুঠোয় ছিল ছোট ক’রে ভাঁজ-করা চিঠি। হ্যাণ্ডসেক করার সময় পেভেলের হাতে তা গুঁজে দিলেন।

 বাড়ি এসে শশার সঙ্গে দেখা। মার কাছে পেভেলের খবর নিয়ে শশা বললো, তুমি কি মনে কর, মা, সে রাজি হবে?

 জানিনে—হবে বোধহয়। বিপদই যদি না থাকে তো আর কি আপত্তি থাকতে পারে!

 শশা, ধীর করুণ-কণ্ঠে বললো, আমি জানি, সে রাজি হবে না। তোমার কাছে মিনতি, মা—তাকে মত করিয়ে বলো, তাকে দরকার, তাকে নইলে কাজ চলবে না···তার আস। চাই-ই...

 মা শশাকে কোলে টেনে বললেন, সে কি কারো কথা শোনে; মা?

 ঠিক বলেছো, মা, শোনে না...চল রোগীকে খেতে দিইগে।

 মা এসে আইভানের পাশে ব’সে গল্প জুড়ে দিলেন। আইভান মাকে চিনতো না। কথায় কথায় বললো, পেভেলের কথা শুনেছো?—সে-ই সর্বপ্রথম আমাদের নিশান উড়িয়েছে প্রকাশ্যে—আর তার মা... তিনিও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তারপর···অদ্ভুত রমণী তিনি।

 মা একটু হাসলেন। বললেন, খাও দেখি আরো। যত তাড়াতাড়ি ভালো হ’য়ে যাবে, তত তাড়াতাড়ি কাজে লাগতে পারবে। দেশ আজ চায় সবল হাত, শুদ্ধ হৃদয়, সাধু মন।....

 সন্ধ্যার সময় শোফি বললো, একবার গ্রামে যেতে হ’বে, মা।

 কেন বলোতো? কখন যেতে হবে?

 কাল। গাড়ি ক’রে ভিন্ন এক পথ দিয়ে যেয়ো। সেখানে খুব ধর-পাকড় হয়েছে। তবে রাইবিন যে পালাতে পেরেছে এটা এক রকম নিশ্চিত।···কিন্তু আমাদের থামলে চলবে না···নিষিদ্ধ পুস্তিকা ছড়িয়ে যেতেই হবে। পারবে? ভয় পাবেনা তো?

 মা দস্তুরমতো আহত হয়ে বললেন, ও প্রশ্ন করো না, ভয় আয় কিছুতেই পাইনে আমি। কিসের জন্যে পাবো? কি আছে আমার? একটি মাত্র ছেলে। তার জন্যই ছিল যত ভাবনা, যত ভয়। এখন আর কি।···

 শোফি বললো, মাপ করো, মা। আর অমন কথা বলবো না কখনো।