মেগাস্থেনীসের ভারত-বিবরণ (১৯৪৪)/১১শ অংশ
স্ট্রাবো
ভারতবর্ষে বৎসরে দুই বার ফল-শস্য উৎপন্ন হয়; ইহা দ্বারা মেগাস্থেনীস ঐ দেশের উর্বরতা প্রদর্শন করিয়াছেন। [এরাটস্থেনীসও এইরূপ বলেন। তিনি লিখিয়াছেন, ভারতবর্ষে শীত ও গ্রীষ্ম এই দুই ঋতুতে শস্য উপ্ত হয় এবং এই দুই ঋতুতেই বৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, এমন বৎসর দেখা যায় না, যাহাতে শীত ও গ্রীষ্ম, উভয় ঋতুই বৃষ্টিহীন। সুতরাং (প্রতিবৎসরই) প্রচুর শস্য প্রাপ্ত হওয়া যায়, কারণ ভূমি কখনও অনুর্বর হইতে পারে না। তৎপর, বৃক্ষে যথেষ্ট ফল উৎপন্ন হয়; এবং তরুলতার মুল— বিশেষতঃ দীর্ঘ নলের মূলগুলি—স্বভাবতই মিষ্ট, সিদ্ধ করিলেও মিষ্ট; কারণ তাহারা বৃষ্টিধারা বা নদীজল হইতে যে রস গ্রহণ করে, তাহা সূর্যকিরণে উত্তপ্ত হয়। এরাটস্থেনীস এস্থলে একটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। অন্যান্য জাতির মধ্যে যাহা ফল ও রসের “পরিপক্বতা” বলিয়া অভিহিত ভারতবর্ষীয়েরা তাহাকে “পাক” (বা রন্ধন) বলে; কারণ অগ্নিতে সিদ্ধ করিলে (রস) যেমন মিষ্ট হয় ইহাতেও তাহাই হয়। তিনি আরও বলেন, উপর্যুক্ত কারণেই বৃক্ষশাখাগুলি এমন নমনীয়; উহা দ্বারা চক্র নির্মিত হয়, এবং ঐ কারণেই একজাতীয় বৃক্ষে পশম শোভা পায়।[১] ]
স্ট্রাবো (১৫।১।১৩) ৬৯০ পৃষ্ঠায় এরাটস্থেনীস হইতে যাহা উদ্ধৃত করিয়াছেন তাহা নিম্নে প্রদত্ত হইল:
এরাটস্থেনীস বলেন, ভারতবর্ষে অসংখ্য নদনদী হইতে বাষ্প উত্থিত হইতেছে এবং সংবৎসর ব্যাপিয়া বায়ু প্রবাহিত হইতেছে; এজন্য উহা গ্রীষ্মকালীন বারিপাত দ্বারা সিক্ত ও সমতল ভূমি জলপ্লাবিত হয়। এই বৃষ্টিপাত কালে শন, তিসি, চীনা, যোয়ার, তিল, ধান্য, বস্পরম্ প্রভৃতি উপ্ত হয়, এবং শীতকালে গোধূম, যব ডাল ও আমাদিগের নিকট অপরিচিত অন্যান্য আহার্য্য ফল-শস্য উপ্ত হয়।
- ↑ হিরডটসও তাঁহার ইতিহাসের একস্থানে লিখিয়াছেন, ভারতবর্ষে একজাতীয় বৃক্ষে পশম উৎপন্ন হয়। বলা বাহুল্য, কার্পাস সম্বন্ধে এইরূপ লিখিত হইয়াছে।