মেরী কার্পেণ্টার/আমেরিকার দাস-সংগ্রাম

আমেরিকার দাস-সংগ্রাম।

ই সময়ে আমেরিকায় দাসত্ব-প্রথার বিরুদ্ধে তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ হয়। আমেরিকার দাস-যুদ্ধ এক ঐতি-হাসিক ঘটনা। আমেরিকার দক্ষিণ উত্তর প্রদেশের অধি-বাসীরা, এমন কি, খৃষ্টীয়-ধর্ম্মযাজকেরাও এই জঘন্য দাসত্ব-প্রথা-প্রচলনের বিশেষ পক্ষপাতী ছিলেন। এতদ্দেশে নীল-করদিগের অত্যাচারকাহিনী সৰ্বজনবিশ্রুত। আসামের চা-কর কুলিদের উপর কম অত্যাচার করে নাই। আমেরি-কানেরা ক্রীতদাসদিগের উপর ততোধিক অত্যাচার করিত। নির্যাতিত দাসদিগের দুরবস্থা সন্দর্শন করিয়া করুণাময়ী শ্রীমতী হেরিয়েট বিচার ষ্টো’র (Mrs Harriet Beecher) Stowe) হৃদয় বিগলিত হইয়া উঠিল। তিনি উপন্যাসের ছলে দাসদিগের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার-কাহিনী ওজস্বিনী ভাষায় বিবৃত করিয়া টম-কাকার কুটীর (Uncle Tom's Cabin) নামে পুস্তিকা প্রকাশ পূর্ব্বক উত্তর আমেরিকার অধিবাসীদিগকে উদ্বোধিত করিতে লাগিলেন। এই উপন্যাস-পাঠে জনসাধারণ এই ঘৃণিত ব্যবসায়ের অনিষ্টকারিতা উপ-লব্ধি করে, এবং বিবেকবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হইয়া উত্তর-প্রদেশবাসীরাই এই নৃশংস ব্যবসায় রহিত করিবার জন্য প্রথমে দণ্ডায়মান হয়। দক্ষিণ আমেরিকাবাসীরা কিন্তু ইহাতে সম্মত হইল না। এতদ্বারা গৃহবিচ্ছেদের সূত্রপাত হইল। অবশেষে ভীষণ সমরানল প্রজ্বলিত হইয়া উঠে! এব্রাহিম লিঙ্কন প্রেসিডেণ্ট হইলে, ১৮৬৪ সালে এই ঘৃণিত ব্যবসায় আইন দ্বারা রহিত হয়।

 আমেরিকার এই দাস-যুদ্ধের সময় ইংলণ্ডের অনেকে উত্তর-আমেরিকাবাসীদিগের সহিত সমবেদনা প্রকাশ করিয়া-ছিলেন। মিঃ হিউজ, মিঃ লডলাে, মিঃ ব্রাইট্ প্রভৃতি মনীষিগণ এই ঘৃণিত প্রথার বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করিয়া-ছিলেন। আমেরিকার এই দুরবস্থার কথা শুনিয়া পরােপ-কারিণী কোমল হৃদয়া মেরী কার্পেণ্টারের হৃদয় উদ্বেলিত হইয়া উঠিল। তিনিও আর নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিতে পারিলেন না। মেরী কার্পেণ্টার্ লায়ড গ্যারিসন, থিয়ােডাের পার্কার প্রভৃতি মনীষিগণের সহিত মিলিত হইয়া এই সংগ্রামে প্রাণমনঃ ঢালিয়া যােগ দেন এবং দাসত্বপ্রথার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করিয়া দাসত্বপ্রথার বিরােধীদিগকে উৎসাহিত করেন। দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধ মতাবলম্বীরা ইহাঁ-দের সহানুভূতি ও উৎসাহ বাক্যে আরাে প্রােৎসাহিত হইয়া সঙ্কল্প দৃঢ়তর করিতে এবং এই ঘৃণিত ব্যবসায় উচ্ছেদ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। যে দেশে হউক না কেন, জনসাধারণের দুরবস্থার কথা শুনিলেই মেরী কার্পে-ণ্টারের প্রাণ আকুল হইয়া উঠিত; এবং তিনি তন্নিবারণে সর্ব্বান্তঃকরণে যত্নবতী থাকিতেন; যত দিন না কার্য্য সংসাধন হইত, ততদিন তাহা হইতে বিরত হইতেন না।