যন্ত্রকোষ/স্বর-শৃঙ্গার বা সুর-শৃঙ্গার


সংখ্যা ৮।

স্বর-শৃঙ্গার বা সুর-শৃঙ্গার।

 এই যন্ত্রের খোলটী শরদ বা রবাবের ন্যায় একখানি অভিন্ন কাষ্ঠদ্বারা প্রস্তুত না হইয়া সেতারাদি অন্যান্য যন্ত্রের ন্যায় অলাবু নির্ম্মিত হয়। ঐ অলাবুর উপরে সেতারাদির ন্যায় কাষ্ঠনির্ম্মিত একখানি ধ্বনি-পট্টক (পারস্য ভাষায় ইহাকে তবলি বলে) দেওয়া আছে উক্ত ধ্বনিপট্টকের উপর হস্তিদন্ত-নির্ম্মিত একখানি তন্ত্রাসন (পারস্য ভাষায় যাহাকে সওয়ারি কহে) এবং পূর্ব্বকথিত অলাবুটীতে কাষ্ঠ-নির্ম্মিত একটী দণ্ড যোজিত থাকে; আবার ঐ দণ্ড বা ডাণ্ডির উপরে একখানি সমতল লৌহপট্টক (হিন্দি ভাষায় ইহাকে পট্‌রি কহে) আছে, ধ্বনির আধিক্য করণ-জন্য দণ্ডের পরপার্শ্বেও অপর একটী অলাবু মহতী-বীণার ন্যায় যোজিত হয়। সুর-শৃঙ্গারের ছয়টী কীলকে বা কাণে তিনটী লৌহের এবং তিনটী পিত্তলের সাকল্যে ছয়টী তারের ব্যবহার দেখা যায় এবং ঐ তার কয়েকটী নিম্নলিখিত নিয়মে বাঁধা গিয়া থাকে। যথা—

তা
 
মু
 

 
                                                                                                                        

                              সা                                                                                                    
                                                                                                                   সা               

সুর-শৃঙ্গারে সারিকাবিন্যাস নাই, রবাব-যন্ত্রের ন্যায় এই যন্ত্রটীও স্বন্ধে স্থাপনপূর্ব্বক বামহস্তের তর্জ্জনী এবং মধ্যমা অঙ্গুলি লৌহপট্টকোপরিস্থ-তারের উপরে উপরে ঘর্ষণ করত দক্ষিণ-হস্তের তর্জ্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির টীপ-যোগে লৌহ-নির্ম্মিত-কোণস্‌ ধারণ করিয়া রবাবের প্রণালীতে বাজাইতে হয়, ইহাতে নিম্নে প্রদর্শিত প্রথানুসারে সাৰ্দ্ধদ্বিসপ্তক স্বর প্রতিপন্ন হয়। যথা—

 মহতী, কচ্ছপী ও রুদ্র এই তিন-জাতীয়-বীণার মিশ্রণে সুর-শৃঙ্গারের উৎপত্তি। প্রসিদ্ধ বীণকার পিয়ার খাঁ এই যন্ত্রটী প্রস্তুত করেন। এই যন্ত্রের নিম্নের অলাবু-নিৰ্ম্মিতখোল, ধ্বনি-পট্টক ও তন্ত্রাসন এই তিনটী অংশ অবিকল কচ্ছপীসদৃশ, দণ্ডটী রুদ্র-বীণার অনুকৃত, ইহার মধ্যে বিশেষ এই যে, রুদ্র-বীণার পট্‌রি খানি কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত, সুর-শৃঙ্গারের পট্‌রি খানি তৎপরিবর্ত্তে লৌহ-নিৰ্ম্মিত হয় এবং পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে, দণ্ডের অপর প্রান্তে অবিকল মহতী-বীণার অনুকরণে আর একটী অলাবু যোজিত থাকে। রুদ্র-বীণাতে তন্তু ব্যবহার করে, ইহাতে তন্তর বিনিময়ে সেতারাদির ন্যায় লৌহাদিধাতুময় তার আবদ্ধ করা যায়; কিন্তু তার-যোজনা, সুরবন্ধন-পদ্ধতি, ধারণ এবং বাদন-প্রণালী সকলই প্রায় রুদ্র-বীণার অনুরূপ। যাহাই হউক, সুর-শৃঙ্গার গুণ-গরিমা বা বন্ধন-সম্বন্ধে কি মহতী-বীণা, কি কচ্ছপী-বীণা, কি রুদ্র-বীণা এই তিনের কাহারই সদৃশ নহে, ইহার ধ্বনিও অপেক্ষাকৃত অনেক মৃদু এবং স্বল্পক্ষণস্থায়ী।