রাণী না খুনি? (শেষ অংশ)/চতুর্থ পরিচ্ছেদ
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
কালীবাবুকে আমরা অতিশয় চতুর বলিয়া মনে করিয়াছিলাম, কিন্ত পরিশেষে দেখিলাম, কালীবাবু অপেক্ষা ত্রৈলোক্যই অতিশয় চতুর। তাহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিয়া তাহার কোনরূপই উত্তর পাইলাম না; কিন্তু কালীবাবু পরিশেষে আমাদিগের নিকট সমস্ত কথা স্বীকার করিল। আমি তাহাকে কহিলাম, “দেখ কালীবাবু! যেরূপ অবস্থায় তোমরা এখন পতিত হইয়াছ, ইহাতে আর তোমাদিগের কোনরূপেই নিষ্কৃতি নাই। তোমার বিপক্ষে যে সকল প্রমাণ সংগৃহীত হইয়াছে, তাহাতে তুমি নিশ্চয়ই বেশ বুঝিতে পারিতেছ যে, এ যাত্রা তোমাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিতে হইবে। এখনও তুমি আমার পরামর্শ শুন, এখনও তুমি প্রকৃত কথা বল। তাহা হইলে তুমি কতদুর দোষী, তাহার যথার্থ অবস্থা আমরা অবগত হইব। নতুবা নিতান্ত অন্ধকারে থাকিয়া আমাদিগকে এই মোকদ্দমা চালাইতে হইবে। দায়ে পড়িয়া এরূপ অনেক বিষয়ের প্রমাণ হয় ত আমাদিগকে করিতে হইবে যে, বাস্তবিক তুমি হয় ত তাহা কর নাই, বা জান না। এই নিমিত্ত আমি তোমাকে বার বার বলিতেছি, তুমি যাহা যাহা করিয়াছ, তাহা আমাদিগকে স্পষ্ট করিয়া বল।”
কালী। আচ্ছা মহাশয়! যখন আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি যে, এ যাত্রা যখন কোনরূপেই আমার নিষ্কৃতি নাই, যে কোন উপায়েই হউক, আপনারা আমাদিগকে ফাঁসিতে ঝুলাইবেন, তখন আমি এই ঘটনার প্রকৃত অবস্থা প্রথম হইতে আরম্ভ করিয়া শেষ পর্য্যন্ত বলিতেছি।
আমি। এ নিতান্ত ভাল কথা।
কালী। কিছু দিবস অতীত হইল, পশ্চিমদেশীয় সেই জমিদার মহাশয় কলিকাতায় আগমন করেন।
আমি। কোন্ জমিদার?
কারী। যে জমিদার মহাশয়ের বাড়ীতে আমি আপনাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিলাম।
আমি। তাহার পর?
কালী। আমি শুনিয়াছিলাম, তাঁহার বাড়ীতে একটী বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হইবে। সেই বিবাহের নিমিত্ত কতকগুলি ভাল ভাল কাপড় এবং কিছু জহরত ক্রয় করিবার মানসে এবার তিনি কলিকাতায় আসিয়া উপস্থিত হন। সেই সকল দ্রব্যাদি ক্রয় করিবার মানসে উপর্য্যুপরি কয়েকদিবস পর্য্যন্ত তিনি নিজেই বাজারে গমন করেন, এবং বাজারে ঘূরিয়া ঘূরিয়া তিনি নিতান্ত ত্যক্ত হইয়া পড়েন। বাজারে গমন করিলেই, বাজারে যে সকল দালাল আছে, তাহারা, আসিয়া তাঁহার সহিত মিলিত হয়, ও তিনি যে দ্রব্য ক্রয় করিতে চাহেন, সেই দ্রব্য ক্রয় করিয়া দেওয়াইবার মানসে তাহাদিগের পরিচিত যে সকল দোকানে সেই সকল দ্রব্য পাওয়া যায়, সেই সকল দোকানে তাঁহাকে লইয়া গিয়া তাঁহাকে সেই সকল দ্রব্য দেখায়। সেই সকল দ্রব্যের মধ্যে তাঁহার যে কোন দ্রব্য পসন্দ হয়, তাহার মূল্য চতুর্গুণ করিয়া বলিয়া দেয়। এইরূপে কয়েকদিবস পর্য্যন্ত অনবরত তিনি দালালগণের সহিত বাজারে বাজারে ঘুরিয়া বেড়ান; কিন্ত কোন দ্রব্যই তিনি খরিদ করিয়া উঠিতে পারেন না।
“আমি এই সংবাদ জানিতে পারিয়া একদিবস তাঁহার বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম, এবং তাঁহার সহিত আমি সাক্ষাৎ করিলাম। আমি বড়বাজারের একজন প্রধান দোকানদার এই কথা বলিয়া আমি তাঁহার নিকট আমার পরিচয় প্রদান করিলাম ও কহিলাম, ‘আজ কয়েকদিবস পর্য্যন্ত দেখিতেছি, আপনি কতকগুলি দ্রব্যাদি ক্রয় করিবার মানসে দালালগণের সহিত দোকানে দোকানে ঘূরিয়া বেড়াইতেছেন। কিন্তু এ পর্য্যন্ত কোন দ্রব্যই আপনি ক্রয় করিয়া উঠিতে পারেন নাই। আমার বিশ্বাস, যে পর্য্য়ন্ত সেই দালালগণ আপনাকে পরিত্যাগ না করিবে, সেই পর্য্যন্ত আপনি, কোন দ্রব্য ক্রয় করিতে পারিবেন না। কারণ, উহারা আপনাকে সঙ্গে করিয়া যে কোন দোকানে লইয়া যাইবে, দোকানদার আপনার নিকট তাহারই চতুর্গুণ মূল্য চাহিয়া বসিবে। কারণ, সেই দ্রব্য যদি আপনার ক্রয় করা হয়, তাহা হইলে যে সকল দালাল আপনার সহিত সেই সময় সেই স্থানে উপস্থিত ছিল, তাহাদিগের প্রত্যেককেই পৃথক্ পৃথক্রূপ দালালী সেই দোকানদারকে দিতে হইবে। দোকানদার পূর্ব্বেই সেই অর্থ যদি আপনার নিকট হইতে গ্রহণ না করিবেন, তাহা হইলে তিনি দালালগণকে সন্তষ্ট করিবেন কোথা হইতে?’
“আমার নিজের সকল প্রকার দ্রব্যের দোকান আছে বলিয়াই, আমি আপনার নিকট আসিয়াছি। আমি যেরূপ অল্প মূল্যে আপনাকে দ্রব্যাদি দিতে পারিব, বাজারের অপর কোন বাক্তিই তাহা পারিবে না। আমার কথায় যদি আপনার বিশ্বাস না হয়, তাহা হইলে দুই একটী দ্রব্যের ফরমাইস আমাকে দিন, সেই দ্রব্য আনিয়া আমি আপনাকে প্রদান করি। আপনি বাজারে যাচাইয়া দেখুন, সেই দ্রব্যের মূল্য কত। তখন আপনি উহার মূল্য আমাকে প্রদান করিবেন। দেখিবেন, বাজার হইতেও কত কম মূল্যে আমি আমার দ্রব্যাদি বিক্রয় করিয়া থাকি।’
“আমার কথায় তিনি প্রথমতঃ সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করিলেন না বলিয়া অনুমান হইল। কিন্তু পরিশেষে আমাকে কহিলেন, “আচ্ছা, আপনি আমার নিমিত্ত এক থান ভাল কিংখাপ কাপড় আনিবেন।’
“জমিদার মহাশয়ের এই কথা শুনিয়া আমি সেই দিবস আমার বাসায় চলিয়া আসিলাম; এবং কিছু অর্থ সহ বড়বাজারে গমন করিয়া এক থান অতি উৎকৃষ্ট কিংখাপ কাপড় ক্রয় করিয়া সেই দিবস সন্ধ্যার সময় পুনরায় সেই জমিদার মহাশয়ের বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। আমার আনীত কিংখাপ দেখিয়া তাঁহার বেশ পসন্দ হইল, তিনি উহার দাম জিজ্ঞাসা করিলেন।
“উত্তরে আমি কহিলাম, ‘এ কাপড়ের দাম আমি এখন বলিব না। এই কাপড় অদ্য আপনার নিকট রহিল, আপনি ইহা একবার বাজার যাচাইয়া দেখুন, দোকানদারগণ ইহার কি দাম বলিয়া দেয়। আমি কল্য সন্ধ্যার সময় পুনরায় আপনার নিকট আসিব, সেই সময় ইহার দাম আপনাকে বলিব।’
“আমার প্রস্তাবে জমিদার মহাশয় সম্মত হইলেন, আমিও সেই কাপড় সেই স্থানে রাখিয়া আপনার বাসায় প্রত্যাবর্ত্তন করিলাম।
“পরদিবস বৈকালে আমি পুনরায় জমিদার মহাশয়ের বাসার গিয়া উপস্থিত হইলাম। তিনি আমাকে দেখিয়া সেই কাপড়ের দাম জিজ্ঞাসা করিলেন।
“তাঁহার কথার উত্তরে আমি কহিলাম, ‘মহারাজ! ইহার দাম আমি প্রথমে বলিব না, পশ্চাতে বলিব। এই কাপড় বাজারে যাচাইয়া ইহার কি দাম আপনি জানিয়াছেন, বা আপনিইবা ইহার কি দাম দিতে ইচ্ছা করেন, তাহা আমি পূর্ব্বে জানিতে ইচ্ছা করি। আপনি ইহা মনে করিবেন না যে, আপনি ইহার দাম আমার ন্যায্য দাম অপেক্ষা অধিক প্রদান করিলে, আমি গ্রহণ করিব। সেই কাপড়ের দাম এই কাগজে লিখিয়া আমি এই স্থানে রাখিয়া দিলাম, আমার ন্যায্য দাম অপেক্ষা যদি আপনি অধিক দাম প্রদান করেন, তাহা হইলে আমি অধিক গ্রহণ করিব না। আমার ন্যায্য দামই আমাকে আপনি প্রদান করিবেন।’
“এই বলিয়া যে দামে আমি সেই কিংখাপ ক্রয় করিয়া আনিয়া ছিলাম, তাহার অর্দ্ধেক দাম একখানি কাগজে লিখিয়া আমি সেই স্থানে রাখিয়া দিলাম। আমার কথা শুনিয়া জমিদার মহাশয় আমার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। তাঁহার কথার ভাবে অনুমান হইল, কি দরে সেই কাপড় লওয়া যাইতে পারে, তাহা তিনি যাচাইয়া রাখিয়াছেন। তিনি আমার কথায় আর কোনরূপ দ্বিরুক্তি না করিয়া যে দরে তিনি সেই কাপড় ক্রয় করিতে পারেন, তাহা আমাকে বলিলেন। আমি দেখিলাম, যে দরে আমি উহা ক্রয় করিয়াছিলাম, তাহার অপেক্ষাও প্রায় এক-চতুর্থ অংশ কম করিয়া উহার দাম বলিলেন।
“তাঁহার কথা শুনিয়া আমি একটু কপট আনন্দ প্রকাশ করিলাম ও কহিলাম, ‘আমি আজ প্রকৃতই একজন খরিদ্দার পাইয়াছি। যে ব্যক্তি দ্রব্যের উপযুক্ত দাম না জানেন, তাঁহার সহিত কেনা-বেচা করা যে কতদূর কষ্টকর কার্য্য, তাহা যিনি করিয়াছেন, তিনিই বলিতে পারেন। আপনি যে দাম বলিয়াছেন, তাহা এই বস্ত্রের প্রকৃত দাম; কিন্তু এই দ্রব্য কোন কারণ বশতঃ আমার কিছু কম মূল্যে ক্রয় করা ছিল বলিয়াই, আমি আপনাকে আরও কম মূল্যে দিতে পারিতেছি।”
“এই বলিয়া যে কাগজে আমি উহার খরিদ মূল্যের অর্দ্ধেক দাম লিখিয়া রাখিয়াছিলাম, সেই কাগজখানি তাঁহার হস্তে প্রদান করিলাম। আমার লিখিত দর দেখিয়া তিনি অতিশয় সন্তষ্ট হইলেন, এবং আমার লিখিত মত সেই দ্রব্যের মূল্য তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে প্রদান করিলেন। তদ্ব্যতীত গাড়ি ভাড়া বলিয়া আর দুই টাকা আমাকে দিয়া, অন্য আর একটী দ্রব্যের ফরমাইস দিলেন। পরদিবস সেই দ্রব্য বাজার হইতে ক্রয় করিয়া তাঁহার নিকট লইয়া গেলাম, এবং আমার খরিদ মূল্য অপেক্ষাও কিছু কম মূল্যে উহা আমি তাঁহার নিকট বিক্রয় করিলাম। ইহাতে তিনি আমার উপর আরও সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, ‘আপনি কেবলই কি বস্ত্রের কারবার করিয়া থাকেন, না জহরত-আদিও বিক্রয় করেন?’
উত্তরে আমি কহিলাম, ‘বস্ত্রাদি আমি অতি অল্প পরিমাণেই বিক্রয় করিয়া থাকি। আমার অধিক কারবার জহরতের। কেন মহাশয় আপনি আমাকে একথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন?’
জমিদার। আমার কিছু জহরতের প্রয়োজন হইয়াছে; সেই নিমিত্তই আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতেছি।
“আমি তাঁহাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আপনার কত টাকার জহরতের প্রয়োজন হইবে?’ তাহার উত্তরে তিনি কহিলেন, ‘প্রায় দশ হাজার টাকার জহরতের প্রয়োজন।’
“আমি কহিলাম, ‘এ অতি সামান্য কথা। আপনার কি কি দ্রব্যের প্রয়োজন, তাহার একটা তালিকা প্রস্তত করিয়া আপনি আমাকে প্রদান করুন, আমি সেই তালিকা অনুযায়ী জহরত আনিয়া আপনাকে প্রদান করিব। আপনি সেই সকল জহরত প্রথমে যাচাই করিয়া দেখিবেন, এবং পরিশেষে তাহার মূল্য আমাকে প্রদান করিবেন।’
“আমার এই কথা শুনিয়া কি মূল্যের কি কি জহরতের প্রয়োজন, তাহার একটী তালিকা প্রস্তুত করিয়া জমিদার মহাশয় আমাকে প্রদান করিলেন। আমি সেই তালিকা গ্রহণ করিয়া তাঁহার একজন কর্ম্মচারীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম। সেই কর্ম্মচারী সর্ব্বদা জমিদার মহাশয়ের নিকট থাকিতেন, এবং তিনি যাহা বলিতেন, তাহা প্রায়ই তিনি শুনিতেন। আমি বলিতে ভুলিয়া গিয়াছি, জমিদার মহাশয়ের সহিত সাক্ষাৎ হইবার পূর্ব্বেই আমি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, তাঁহার সহিত একরূপ বন্ধুত্ব স্থাপন করিয়াছিলাম। যে দিবস জমিদার মহাশয়ের নিকট কোন দ্রব্য বিক্রয় করিয়া কিছু অর্থ সংগ্রহ করিতে পারিতাম, সেই দিবস তাহা হইতে তাঁহাকেও কিছু অর্থ প্রদান করিতাম। সুতরাং জমিদার মহাশয়ের নিকট হইতে সর্ব্বদা যাহাতে আমি কিছু প্রাপ্ত হই, তিনি তাহাই করিতেন।
“জমিদার মহাশয় আমাকে জহরতের ফরমাইস দিলে পরই, তিনি জমিদার মহাশয়কে কহিলেন, ‘যে ব্যক্তি এত টাকার জহরত আপনার নিকট আনয়ন করিবেন, তাঁহাকে উহার নিমিত্ত কিছু অগ্রিম টাকা দেওয়া কর্ত্তব্য। কারণ, অগ্রিম কিছু টাকা প্রদান করিলে যতশীঘ্র পারিবেন জহরত লইয়া ইনি আপনার নিকট উপস্থিত হইবেন।’
“কর্ম্মচারীর কথা শুনিয়া জমিদার মহাশয় একখানি হাজার টাকার নোট বাহির করিয়া আমার হস্তে প্রদান করিলেন। বলা বাহুল্য, সেই স্থান হইতে আসিবার সময় আমি কর্ম্মচারীকে কিছু প্রদান করিরা আসিলাম। সেই কর্ম্মচারীকে আমি মধ্যে মধ্যে কিছু কিছু প্রদান করিতাম বলিয়াই যে তিনি আমার উপর এতদূর অনুগ্রহ করিতেন, তাহা নহে। সময় সময় তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া আমার বাসায় আনিতাম ও তাঁহাকে লইয়া আমি ও ত্রৈলোক্য নানারূপ আমোদ-আহ্লাদ করিতাম।
“সেই টাকা লইয়া আমি সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিলাম, এবং আপন বাসায় আসিয়া সেই টাকা ত্রৈলোক্যের হস্তে প্রদান করিলাম। এতগুলি টাকা আমি একবারে কোথায় পাইলাম, জিজ্ঞাসা করায়, আমি ত্রৈলোক্যকে আদ্যোপান্ত সমস্ত ব্যাপার বলিলাম। আমার কথা শুনিয়া ত্রৈলোক্য কহিল, ‘তাহা হইলে সেই জমিদার মহাশয়ের নিকট আর গমন করিবার প্রয়োজন কি? এই হাজার টাকায় এখন অনেক দিবস আমাদিগের চলিবে।’
“ত্রৈলোক্যের কথার উত্তরে আমি কহিলাম, ‘তাহা কি কখনও হইতে পারে। কারণ, জমিদার মহাশয়ের কর্ম্মচারী আমাদিগের বাসা পর্য্যন্ত অবগত আছেন। বিশেষতঃ যখন তাঁহারই কথায় বিশ্বাস করিয়া জমিদার মহাশয় আমাকে এই টাকা প্রদান করিয়াছেন, তখন তাঁহাদিগের নিকট আর গমন না করিলে, সেই কর্ম্মচারীই নিতান্ত বিপদ্গ্রস্ত হইবেন। সুতরাং তাঁহাকে অবমানিত করিয়া আমার সবিশেষ কোন ফল লাভ হইবে না। অধিকন্তু যদি তাঁহাদিগের সহিত প্রণয় রাখিয়া চলিতে পারি, তবে এক সহস্র কেন, এরূপ কত সহস্র টাকা আমি তাঁহাদিগের নিকট হইতে ক্রমে গ্রহণ করিতে সমর্থ হইব। তুমি যেরূপ প্রস্তাব করিতেছ, সেই প্রস্তাবে আমি কোনরূপেই সম্মত হইতে গারি না। কিন্ত আমি এক উপায় মনে মনে স্থির করিয়াছি। যাহা ভাবিতেছি, তাহা যদি কার্য্যে পরিণত করিতে পারি, তাহা হইলে আমাদিগের লাভও যথেষ্ট হইবে, এবং সেই কর্ম্মচারী প্রভৃতি কাহার কোনরূপ অনিষ্ট হইবার সম্ভাবনা থাকিবে না। অথচ সেই জমিদার মহাশয়ের বাড়ীতে আমার খুব পসার থাকিবে।’
“এই বলিয়া আমি মনে মনে যাহা স্থির করিয়াছিলাম, তাহা ত্রৈলোক্যকে বলিলাম। আমার কথা শুনিয়া ত্রৈলোক্য প্রথমতঃ একবারে হতবুদ্ধি হইয়া সেই স্থানে বসিয়া পড়িল ও কহিল, ‘এরূপ কার্য্য আমার দ্বারা কখনই হইবে না।’ কিন্ত সে কি করিবে? আমার প্রস্তাবে পরিশেষে তাহাকে সম্মত হইয়া আমাকে সর্ব্বতোভাবে সাহায্য করিতে প্রস্তুত হইতে হইল।