ললিতাসুন্দরী ও কবিতাবলী/কবিতাবলী/স্মৃতি

স্মৃতি।

ভ্রমিতে ভ্রমিতে তমালের তলে
 যাইলাম একেশ্বর,
দেখিনু তথায় সরসীর জলে
 খেলিছে চাঁদের কর;
ঘুমায় তরল লহরী সকল
 প্রফুল কমলকোলে,
ঝুরু ঝুরু করি মলয় সমীর
 খেলে তমালের তলে;
বেড়াতে গিয়াছে নীরদ নিকর,
 পূর্ণ সরসীর জলে
পূর্ণ শশধর পূর্ণ প্রতিবিম্ব
 আঁকা যেন দলে দলে;
সকলি নীরব—সকলি মধুর—
 যেন এই বিশ্বময়
ত্রিদিব-প্রবাহ, ত্রিদিব-সুষমা
 আজি প্রবাহিত হয়।

দূরে সারি সারি দেবদার তরু
উন্নত করিয়া শির,
দাঁড়াইয়ে আছে—পাতাটি নড়ে না
মেদুর সমীরে ধীর;
নাহিক সঙ্গীত—চামর-ব্যজন—
অনিলে নাহিক দোলে,
যোড়কর করি যেন ত্রিলোচন
ধ্যানে “হরি হরি” বলে।
শিখর যাইয়া আকাশ পরশে—
যেন গগনের তলে
স্থির হয়ে আছে গিরিরেখা প্রায়
কাদম্বিনী দলে দলে।
দূরে সারি সারি দেবদারু তরু
মেদুর সমীরে ধীর,
জাহ্নবীর জলে যেন শত শত
উন্নত জাহাজ শির।

মাঝে মাঝে দূরে কোকিল কাকলি
চমকি চমকি উঠে,—
মাঝে মাঝে দুরে জাহ্নবীর পারে
হাসিয়ে দামিনী ফুটে।

তবুও কেমন নীরব-মধুর,
মধুর-নীরব, হায়,
কি যেন জগতে রয়েছে ভাসিয়ে,
কি যেন আনিলে বায়;—
অপরূপ এক মনোহর জ্যোতি
ভাসে এ নয়ন পরে,
অপরূপ এক মনোহর রস
আমার হৃদয়’পরে।
তাহারি মাঝারে সোণার মূরতি
তাহার দেখিতে পাই;
তাহারি মাঝারে তাহারি দীপতি
বিনা আর কিছু নাই।
চলিয়া গিয়াছে এবে সেই নিশা,
আসিবে না পুনরায়,
উহারি মতন কত মধু নিশা,
চলিয়া গিয়াছে, হায়!
উহারি মতন কত মধু নিশা,
কত শত মধু দিবা,
দেখিয়া গিয়াছে প্রেমের কিরণে
আমার হৃদয় বিভা;—

দেখিয়া গিয়াছে রবির আলোকে
অপরূপ এক রবি,
দেখিয়া গিয়াছে শশীর ভিতরে
অপরূপ এক ছবি।
উহারি মতন কত মধু নিশা
জনমের মত, হায়,
চলিয়া গিয়াছে; সে নিশাও আর
আসিবে না পুনরায়!