লিপিকা/কৃতঘ্ন শোক
কৃতঘ্ন শোক
ভোর বেলায় সে বিদায় নিলে।
আমার মন আমাকে বোঝাতে বস্ল, “সবই মায়া।”
আমি রাগ করে বল্লেম, “এইত টেবিলে সেলাইয়ের বাক্স, ছাতে ফুলগাছের টব, খাটের উপর নাম-লেখা হাতপাখখানি—সবই ত সত্য।”
মন বললে, “তবু ভেবে দেখ—”
আমি বললেম, “থাম তুমি। ঐ দেখনা, গল্পের বইখানি, মাঝের পাতায় একটি চুলের কাঁটা, সবটা পড়া শেষ হয়নি; এও যদি মায়া হয়, সে এর চেয়েও বেশি মায়া হ’ল কেন?”
মন চুপ কর্লে। বন্ধু এসে বল্লেন, “যা ভালো তা সত্য, তা কখনো যায় না; সমস্ত জগৎ তাকে রত্নের মতো বুকের হারে গেঁথে রাখে।”
আমি রাগ করে’ বল্লেম, “কী করে’ জান্লে? দেহ কি ভালো নয়? সে দেহ গেল কোনখানে?”
ছোটো ছেলে যেমন রাগ করে’ মাকে মারে তেমনি করেই বিশ্বে আমার যা-কিছু আশ্রয় সমস্তকেই মারতে লাগ্লেম। বল্লেম, “সংসার বিশ্বাসঘাতক!”
হঠাৎ চম্কে উঠ্লেম। মনে হল, কে বল্লে, “অকৃতজ্ঞ!”
জানলার বাইরে দেখি ঝাউগাছের আড়ালে তৃতীয়ার চাঁদ উঠচে, যে গেচে যেন তারি হাসির লুকোচুরি। তারা-ছিটিয়ে-দেওয়া অন্ধকারের ভিতর থেকে একটি ভর্ৎসনা এল, “ধরা দিয়েছিলেম সেটাই কি ফাঁকি, আর আড়াল পড়েচে, এইটেকেই এত জোরে বিশ্বাস?”