লিপিকা/সতেরো বছর
সতেরো বছর
আমি তার সতেরো বছরের জানা।
কত আসা-যাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি;
তারি আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অনুমান, কত ইসারা; তারি সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙাঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভর-সন্ধ্যায় চামেলি ফুলের গন্ধ, কখনো বা বসন্তের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলু-বারোয়াঁ, সতেরো বছর ধরে’ এই সব গাঁথা পড়েছিল তার মনে।
আর, তারি সঙ্গে মিলিয়ে সে আমার নাম ধরে ডাক্ত। ঐ নামে যে-মানুষ সাড়া দিত সেত একা বিধাতার রচনা নয়। সে যে তারই সতেরো বছরের জানা দিয়ে গড়া; কখনো আদরে কখনো অনাদরে, কখনো কাজে কখনো অকাজে, কখনো সবার সাম্নে কখনো এক্লা আড়ালে, কেবল একটি লোকের মনে-মনে জানা দিয়ে গড়া সেই মানুষ।
তার পরে আরও সতেরো বছর যায়। কিন্তু এর দিনগুলি এর রাতগুলি সেই নামের রাখি-বন্ধনে আর ত এক হয়ে মেলে না,—এরা ছড়িয়ে পড়ে।
তাই এরা রোজ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “আমরা থাক্ব কোথায়? আমাদের ডেকে নিয়ে ঘিরে রাখ্বে কে?”
আমি তার কোনো জবাব দিতে পারিনে, চুপ করে বসে থাকি আর ভাবি। আর ওরা বাতাসে উড়ে চলে যায়। বলে, “আমরা খুঁজতে বেরলেম।”
“কা’কে?”
কা’কে সে এরা জানে না। তাই কখনো যায় এদিকে, কখনো যায় ওদিকে; সন্ধ্যাবেলাকার খাপছাড়া মেঘের মতো অন্ধকারে পাড়ি দেয়, আর দেখ্তে পাইনে।