প্রথম শোক

 বনের ছায়াতে যে পথটি ছিল, সে আজ ঘাসে ঢাকা।

 সেই নির্জ্জনে হঠাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠ্‌ল, “আমাকে চিনতে পার না?”

 আমি ফিরে তার মুখের দিকে তাকালেম। বললেম, “মনে পড়চে, কিন্তু ঠিক নাম করতে পারচিনে।”

 সে বল্‌লে, “আমি তোমার সেই অনেক কালের, সেই পঁচিশ বছর বয়সের শোক।”

 তার চোখের কোণে একটু ছল্‌‍ছলে আভা দেখা দিলে, যেন দিঘির জলে চাঁদের রেখা।

 অবাক্‌ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেম। বল্‌লেম, “সেদিন তোমাকে শ্রাবণের মেঘের মতো কালো দেখেছি, আজ যে দেখি আশ্বিনের সোনার প্রতিমা। সেদিনকার সব চোখের জল কি হারিয়ে ফেলেচ?”

 কোনো কথাটি না বলে সে একটু হাস্‌লে; বুঝলেম, সবটুকু রয়ে গেচে ঐ হাসিতে। বর্ষার মেঘ শরতে শিউলিফুলের হাসি শিখে নিয়েচে।

 আমি জিজ্ঞাসা কর্‌লেম, “আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবনকে কি আজো তোমার কাছে রেখে দিয়েচ?”

 সে বল্‌লে, “এই দেখনা আমার গলার হার।” দেখলেম, সেদিনকার বসন্তের মালার একটি পাপ্‌ড়িও খসে নি।

 আমি বল্‌লেম, “আমার আর ত সব জীর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু তোমার গলায় আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবন আজও ত ম্লান হয় নি।”

 আস্তে আস্তে সেই মালাটি নিয়ে সে আমার গলায় পরিয়ে দিলে। বল্‌লে, “মনে আছে, সেদিন বলেছিলে, তুমি সান্ত্বনা চাও না, তুমি শোককেই চাও!”

 লজ্জিত হয়ে বল্‌লেম, “বলেছিলেম। কিন্তু, তার পরে অনেক দিন হয়ে গেল, তার পরে কখন ভুলে গেলেম।”

 সে বললে, “যে-অর্ন্তযামীর বর, তিনি ত ভোলেন নি। আমি সেই অবধি ছায়াতলে গোপনে বসে আছি। আমাকে বরণ করে নাও।”

আমি তার হাতখানি আমার হাতে তুলে নিয়ে বল্‌লেম, “একি তোমার অপরূপ মূর্ত্তি!”

সে বল্‌লে, “যা ছিল শোক, আজ তাই হয়েচে শান্তি।”