লিপিকা/সন্ধ্যা ও প্রভাত
সন্ধ্যা ও প্রভাত
এখানে নাম্ল সন্ধ্যা। সূর্য্যদেব, কোন্ দেশে কোন্ সমুদ্রপারে তোমার প্রভাত হ’ল?
অন্ধকারে এখানে কেঁপে উঠ্চে রজনীগন্ধা, বাসরঘরের দ্বারের কাছে অবগুণ্ঠিতা নববধূর মত; কোন্খানে ফুটল ভোরবেলাকার কনকচাঁপা?
জাগ্ল কে? নিবিয়ে দিল সন্ধ্যায় জ্বালানো দীপ, ফেলে দিল রাত্রে-গাঁথা সেঁউতিফুলের মালা।
এখানে একে একে দরজায় আগল পড়ল, সেখানে জান্লা গেল খুলে। এখানে নৌকো ঘাটে বাঁধা, মাঝি ঘুমিয়ে; সেখানে পালে লেগেচে হাওয়া।
ওরা পান্থশালা থেকে বেরিয়ে পড়েচে, পুবের দিকে মুখ করে চলেচে; ওদের কপালে লেগেচে সকালের আলো, ওদের পারাণীর কড়ি এখানে ফুরোয়-নি; ওদের জন্যে পথের ধারের জান্লায় জান্লায় কালো চোখের করুণ কামনা অনিমেষ চেয়ে আছে; রাস্তা ওদের সামনে নিমন্ত্রণের রাঙা চিঠি খুলে ধরলে, বললে, “তোমাদের জন্যে সব প্রস্তুত।” ওদের হৃৎপিণ্ডে রক্তের তালে তালে জয়ভেরী বেজে উঠ্ল।
এখানে সবাই ধূসর আলোয় দিনের শেষ খেয়া পার হ’ল।
পান্থশালার আঙিনায় এরা কাঁথা বিছিয়েচে; কেউ বা এক্লা, কারো বা সঙ্গী ক্লান্ত; সাম্নের পথে কী আছে অন্ধকারে দেখা গেল না, পিছনের পথে কী ছিল কানে কানে বলাবলি করচে; বলতে বলতে কথা বেধে যায়, তার পরে চুপ করে থাকে; তার পরে আঙিনা থেকে উপরে চেয়ে দেখে, আকাশে উঠেচে সপ্তর্ষি।
সূর্য্যদেব, তোমার বামে এই সন্ধ্যা, তোমার দক্ষিণে ঐ প্রভাত, এদের তুমি মিলিয়ে দাও। এর ছায়া ওর আলোটিকে একবার কোলে তুলে নিয়ে চুম্বন করুক, এর পূরবী ওর বিভাসকে আশীর্ব্বাদ করে চলে যাক্।