লুকোচুরি/ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।

————◆————

 অনাথনাথের বাড়ীতে উপস্থিত হইলে আমি প্রথমেই অবতরণ করিলাম। পরে কাহাকেও কোন কথা না বলিয়া সেই দাসীকে লইয়া এক নিভৃত স্থানে গমন করিলাম। দাসী চতুরা হইলেও আমাকে পুলিস-কর্ম্মচারী জানিতে পারিয়া অত্যন্ত ভীত হইল এবং আমার সম্মুখে দাঁড়াইয়া ভয়ে থর থর কাঁপিতে লাগিল।

 আমি মিষ্ট কথায় তাহাকে সন্তুষ্ট করিলাম। বলিলাম, যদি সে আমার নিকট সমস্ত কথা প্রকাশ করে, তাহা হইলে আমি তাহাকে ছাড়িয়া দিব। আমার কথায় সম্মত হইলে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে তোমাকে এখানে পাঠাইয়াছেন?”

 দা। আজ্ঞে অনাথবাবুর শ্বশুর।

 আ। তিনি ত বহুদিন হইল মারা পড়িয়াছেন?

 দা। আজ্ঞে না—সে সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

 আ। তুমি কতদিন তাঁহার নিকট কার্য্য করিতেছ?

 দা। আজ্ঞে প্রায় এক বৎসর।

 আ। এতদিন বিমলাকে লইয়া যাইতে চেষ্টা কর নাই কেন?

 দা। আমি দাসী মাত্র—যেমন হুকুম পাইব তেমনই কার্য্য করিব। এতদিন তিনি আমায় কোন কথা বলেন নাই, আমিও আসি নাই।

 আ। অনাথনাথের শ্বশুর মহাশয় কোথায় সম্প্রতি বাস করিতেছেন?

 দা। চন্দন নগরে।

 আ। আমাকে লইয়া যাইতে পার?

 দাসী কোন উত্তর করিল না দেখিয়া আমি পুনরায় ঐ প্রশ্ন করিলাম। দাসী বলিল, “না মহাশয়! আজ তিনি এইখানেই আছেন, আমার মনে ছিল না।”

 আমি হাসিয়া উঠিলাম। পরে বলিলাম, “বেশ কথা, আমাকে তাহার নিকট লইয়া চল।”

 দা। তিনি সেই নৌকাতেই ছিলেন। যদি নৌকাখানি ঘাট ছাড়িয়া না গিয়া থাকে, তাহা হইলে তিনি এখনও তথায় আছেন। আপনার ইচ্ছা হয় চলুন—গাড়ীখানি এখনও যায় নাই।

 দ্বিরুক্তি না করিয়া দাসীকে লইয়া আবার আমি সেই গাড়ীতে উঠিলাম এবং অনাথনাথকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিতে বলিয়া কোচমানকে শকট চালনা করিতে আদেশ করিলাম। অর্দ্ধ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা ঘাটে গিয়া উপস্থিত হইলাম। সৌভাগ্যক্রমে নৌকাখানি তখনও ঘাটে বাঁধা ছিল। আমি দাসীকে লইয়া একেবারে নৌকার ভিতরে গিয়া পড়িলাম।

 মাঝি মোল্লাগণ গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত ছিল। সুতরাং তাহারা আমাকে দেখিতে পাইল না। নৌকার ভিতরে অনাথবাবুর শ্বশুরও নিদ্রিত ছিলেন। দাসী তাঁহার নিকট গিয়া তাঁহাকে জাগ্রত করিয়া সকল কথা প্রকাশ করিল।

 দাসীর মুখে সকল কথা শুনিয়া তিনি স্তম্ভিত হইলেন এবং দাসীকে অজস্র গালি বর্ষণ করিতে লাগিলেন। আমি আর স্থির থাকিতে না পারিয়া তখনই তাঁহার নিকটে গমন করিলাম। পরে বলিলাম, “দাসীকে গালি দিলে কোন ফল হইবে না। উহার কোন অপরাধ নাই, আমাদের সকলের চক্ষে ধূলি দিয়া বিমলাকে এখান হইতে লইয়া যাওয়া সামান্য দাসীর কর্ম্ম নহে। এখন আপনি বাহিরে আসুন এবং আমার সঙ্গে আপনার জামাতার নিকটে চলুন।”

 আমার কথায় তিনি ভয়ানক রাগান্বিত হইলেন। বলিলেন “আমি এমন কোন অন্যায় কার্য্য করি নাই, যাহাতে আপনার সঙ্গে যাইব।”

 আমি হাসিয়া উঠিলাম। পরে বলিলাম, “আপনি যে কার্য্য করিয়াছেন, তাহাতে আপনাকে তিন বৎসর কারাদণ্ড ভোগ করিতে হইবে।”

 বিমলার পিতা বলিলেন, “আইন কানুন আমাদেরও জানা আছে। আমি অপর কোন বালিকাকে চুরি করি নাই, আমারই কন্যাকে আমার বাড়ীতে লইয়া যাইতেছিলাম।”

 আ। কাহারও অনুমতি লইয়াছিলেন?

 বি-পি। প্রয়োজন হয় নাই।

 আ। সে কি! বিমলার স্বামী বর্ত্তমান; তাঁহার অনুমতি ভিন্ন তাহাকে কোথাও লইয়া যাইতে পারেন না। তাহার উপর আপনাকে মৃত বলিয়া রাষ্ট্র করিয়াছেন, সে জন্য আপনাকে বিলক্ষণ শাস্তি পাইতে হইবে। আপনি এখন কাহার সহিত কথা কহিতেছেন তাহা জানেন?

 আমার কথা শুনিয়া বিমলার পিতা অনেকটা নরম হইলেন। তিনি সহসা কোন উত্তর করিলেন না। কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “বড় সাধ করিয়া আসিয়াছিলাম আজ রাত্রে কন্যার মুখচন্দ্রিমা দর্শন করিব, কিন্তু আপনি যিনিই হউন—আমার সে সাধে বাদ সাধিলেন। এত ষড়যন্ত্র, এত পরামর্শ, এত কাণ্ড সমস্ত পণ্ড করিলেন। বলুন দেখি, আপনার কি অপকার করিয়াছি?”

 কথাগুলি কর্কশ হইলেও তিনি যে ভাবে বলিলেন, তাহাতে আমার বড় কষ্ট হইল, মনে কেমন দয়ার উদয় হইল। বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়! কন্যার মুখ দেখিবার জন্য এত ব্যস্ত কেন? আপনার দুই পুত্র ত আপনারই সঙ্গে বাস করিতেছেন।”

 আমি অবশ্য না জানিয়াই ঐ কথা বলিয়াছিলাম। তিনি আমার কথা শুনিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন। কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, “আজ্ঞে তাহা হইলে কি আজ আমার এমন দুর্দ্দশা হয়! বৌদ্ধেরা তাহাদিগকে অনশনে রাখিয়া বোধ হয় হত্যা করিয়াছে। অনেক দিন হইল, তাহাদের মুখ দেখি নাই। এ জনমে আমার প্রাণের পুতলিগণকে কি আর দেখিতে পাইব? বোধ হয় সে আশা নাই।”

 আমি নম্রস্বরে বলিলাম, “এখন আমার সঙ্গে চলুন, অনাথনাথের বাড়ীতে যাইলেই আপনার কন্যাকে আবার দেখিতে পাইবেন।”

 এবার বৃদ্ধ সম্মত হইলেন। একত্রে গাড়ীতে উঠিয়া তখনই অনাথনাথের বাড়ীতে ফিরিয়া যাইলাম। অনাথনাথ ও বিমলা উভয়েই তাঁহাকে দেখিয়া পরম সন্তুষ্ট হইলেন।

 কিয়ৎক্ষণ পরে আমি বৃদ্ধকে কোন নিভৃত স্থানে লইয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “বৌদ্ধেরা কেন আপনার উপর উপদ্রব করিয়াছিল?”

 বৃদ্ধ প্রথমে আমার কথায় উত্তর দিতে ইচ্ছা করেন নাই। অবশেষে কিছুক্ষণ ভাবিয়া বলিলেন, “তাঁহাদের মঠের জমীতে শূকর প্রতিপালন করিয়াছিলাম বলিয়াই আমার উপর তাঁহাদের জাতক্রোধ।”

 আ। যখন আপনি প্রথমে ঐ কার্য্য আরম্ভ করেন, তখন কি তাঁহারা জানিতে পারেন নাই?

 বৃ। পারিয়াছিলেন বই কি!

 আ। তবে সে সময় কি তাঁহারা আপনাকে কোন কথা বলেন নাই।

 বৃ। আজ্ঞে হ্যাঁ—উপর্য্যুপরি আটখানি পত্র লিখিয়া আমাকে বারম্বার নিষেধ করিয়াছিলেন।

 আ। আপনি গ্রাহ্য করেন নাই কেন?

 বৃ। তখন শূকরের ব্যবসায়ে আমার বিলক্ষণ লাভ হইতেছিল। বিমলার কাছে যে সোণার শূকর কাছে, উহা এখানকার প্রস্তুত নহে—বিলাত হইতে আনীত। ঐ নমুনা দেখিয়া আমি দুই জোড়া শূকর বার্কিংহাম হইতে আনয়ন করি। তাহা হইতেই ক্রমে সহস্রাধিক শূকর হইয়াছিল। কাজেই বৌদ্ধদিগের কথায় কর্ণপাত করি নাই।

 আ। তাহার পর বৌদ্ধেরা কি করিলেন?

 বৃ। তাঁহারা লিখিলেন, যদি আমি ঐ ব্যবসায় ত্যাগ না করি, তাহা হইলে আমার ও আমার বংশীয় যাবতীয় পুরুষের প্রাণ সংহার করিবেন। আমি তখনও বিশেষ গ্রাহ্য করি নাই। কিন্তু ক্রমে বাড়াবাড়ি আরম্ভ হইল। কে যেন সদাই আমার পাছু পছু ঘুরিতে লাগিল, কিন্তু আমি কোনরূপে ধরিতে পারিতাম না। ক্রমে উপদ্রব এত বাড়িয়া উঠিল যে, আমি এখান হইতে পশ্চিমে পলায়ন করি।”

 আ। আপনার পুত্র দুইটী কোথায় ছিল?

 বৃ। তাহারা আমার কাছে ছিল না; তখন মাতুলালয়ে ছিল। দুর্বৃত্তেরা বাছাদিগকে সেখান হইতে আমার নাম করিয়া ভুলাইয়া লইয়া যায়। সেই অবধি আর তাহাদিগকে দেখি নাই। এতদিন কি তাহারা আর জীবিত আছে?

 আ। সে কতদিনের কথা?

 বৃ। প্রায় বার তের বৎসর।

 আ। পশ্চিমে যাইবার সময় আপনার কন্যে কোথায় ছিলেন?

 বৃ। আমারই সঙ্গে। বৌদ্ধেরা ক্রমে সেখানেও আমার সন্ধান পাইল। সন্দেহ হইবামাত্র আমি পুনরায় চন্দননগরে আগমন করিলাম; কিন্তু সেখানে বাস করিলাম না। এলাহাবাদে আমার সম্পর্কে এক ভগ্নীর একখানি দ্বিতল অট্টালিকা আছে। সেই বাড়ীতেই অধিকাংশ সময় বাস করিয়া থাকি। কখন কখন তাঁহার সহিত তীর্থেও যাই, কিন্তু সর্ব্বদাই সাবধানে থাকিতে হয়।

 আ। আপনি মারা গিয়াছেন বলিয়া সহরময় রাষ্ট্র করিলেন কেন?

 বৃ। নতুবা দস্যুগণের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাই না। আমার কয়েকজন বন্ধুই ষড়যন্ত্র করিয়া একার্য্য সম্পন্ন করিয়াছিল। তাঁহারা এ কার্য্যের ভার না লইলে আমি কখনও পলাইতে পারিতাম না। তাঁহারা অগ্রে আমাকে রেলগাড়ীতে তুলিয়া দিলেন। পরে সেই দিন রাত্রেই একটা মিথ্যা জনরব রাষ্ট্র করিলেন, আমি মারা গিয়াছি। ক্রমে সেখানকার সকলেই আমার মৃত্যুসংবাদ জানিতে পারিল। বিমলার ক্রন্দনে এবং আমার সমস্ত বিষয় আশয় বিক্রয় হওয়াতেই সকলেই সে মৃত্যু-সংবাদ বিশ্বাস করিল; কাহারও অণুমাত্র সন্দেহ হইল না।

 প্রায় একমাস হইল সহসা একদিন ইচ্ছা হইল, যখন আমি জীবিত আছি, তখন বিমলাকে পত্র লিখিয়া সমস্ত কথা জানাই। এই ভাবিয়া তাহাই করিলাম। কন্যা আমার সংবাদ পাইয়া আমার নিকট আসিবার কথা বলিল।

 বাধা দিয়া আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “পত্র দেখিয়াই বিমলা আপনাকে চিনিতে পারিল? তাহার এতদিনের বিশ্বাস একেবারে নষ্ট হইয়া গেল?”

 বৃদ্ধ হাসিলেন। তিনি বলিলেন, “আপনারা পুলিসের লোক, জেরা ভিন্ন কাজ করেন না। কিন্ত এখানে তাহা চলিবে না। আমার হাতের লেখা অতি অদ্ভূত, দেখিতে পার্‌সি অক্ষরের মত কিন্তু প্রকৃত বাঙ্গালা অক্ষর। বিমলা আমার হাতের লেখা বিশেষ চিনিত এবং পড়িতে পারিত। সকলে আমার লেখা পড়িতে পারে না।

 আ। আপনার কন্যা কেন আপনার নিকট যাইতে চাহিয়াছিল। দেখিবার সাধ থাকিলে আপনাকেই আসিতে লিখিতে পারিতেন?

 বৃ। কন্যার পত্রে জানিলাম, তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে। তাহার স্বামী তাহাকে মৌখিক ভালবাসা দেখায়, কি তাহার ভালবাসা প্রকৃত, তাহাই জানিবার জন্য সে আমাকে মৃত জানাইতে ইচ্ছা করিয়াছিল, কিন্তু আপনাদের কৌশলে সমস্তই ব্যর্থ হইল।

 আ। সাঙ্কেতিক পত্রাদিও কি আপনারই মস্তিষ্ক হইতে উদ্ভূত?

 বৃদ্ধ হাসিলেন। কোন কথা বলিলেন না দেখিয়া আমি তাঁহাকে লইয়া সকলের সমক্ষে গমন করিলাম এবং অনাথনাথকে বলিলাম, “আপনার স্ত্রী সমস্তই মিথ্যা বলিয়াছিলেন। তিনিই এই চাতুরী করিয়া, এই প্রকার কৌশল করিয়া নিজের পিতার নিকট পলায়ন করিতেছিলেন।”

 অনাথনাথ আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন তিনি এমন কার্য্য করিলেন। আমি ত উহার সহিত কোন প্রকার অন্যায় ব্যবহার করি নাই?”

 আ। সে কথা তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করুন। কি অভিপ্রায়ে যে তিনি এত চাতুরী করিলেন, তাহা আমি বলিতে পারি না। কিন্তু একথা বলিতে পারি যে, তিনি সম্প্রতি জানিতে পারিয়াছিলেন, তাঁহার পিতা এখনও জীবিত আছেন।

 অ। কেমন করিয়া জানিলেন?

 আ। আপনার শ্বশুর মহাশয়ের পত্র পাঠ করিয়া জানিয়াছেন। দাসীকে আপনার শ্বশুর মহাশয়ই এখানে পাঠাইয়া দিয়াছেন।

 অ। কেন?

 আ। কন্যাকে লইয়া যাইবার জন্য।

 অ। এখানে আসিয়া ত তিনি দেখিতে পারিতেন?

 আ। কেমন করিয়া পারিবেন। আপনারা সকলেই জানেন, তিনি মারা পড়িয়াছেন। এ সময়ে তাঁহাকে সশরীরে দেখিলে নিশ্চয়ই আপনাদের সকলের ভয় হইত। সেই জন্যই তিনি প্রথমে ঐ লোককে পাঠাইয়া দিয়া নিজে নৌকার ভিতর লুকাইয়া ছিলেন। মাসীর মুখে ঐ কথা শুনিয়া আমি পুনরায় ঘাটে গিয়াছিলাম। নতুবা আপনার শ্বশুর মহাশয়কে কি এখানে আনিতে পারিতাম?

 অ। বিমলা ত আমাকে সকল কথা বলিয়া যাইতে পারিত? তাহা হইলে আমিই তাহাকে সেখানে লইয়া যাইতে পারিতাম। এ চাতুরীর প্রয়োজন কি? সেই সাঙ্কেতিক পত্রখানিই বা কোথা হইতে আসিল?

 আ। সে সমস্তই আপনার শ্বশুরের কপোলকল্পিত, কন্যার নিকট পত্রদ্বারা ব্যাখ্যাত। আপনার স্ত্রীর প্ররোচনায় তিনি ঐ সকল ষড়যন্ত্র করিয়াছিলেন।

 অ। কি ভয়ানক! নিজে ঐ সকল কাণ্ড করিয়া নিজেই কাঁদিত! এমন অদ্ভুত কথা ত আর কখনও শুনি নাই!

 আ। আপনিই তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করুন।

 অ। কিন্তু আপনি কেমন করিয়া জানিলেন যে, বিমলা পলায়ন করিতেছে।

 আ। সেদিন থানা হইতে ফিরিয়া যাইবার সময় যখন দ্বিতীয় পত্রখানি ঘাসের থলিয়ার ভিতর হইতে বাহির হয়, সেই দিন আমি স্বচক্ষে আপনার স্ত্রীর কার্য্য দেখিয়াছি।

 অ। কি?

 আ। পত্রখানি অগ্রে তিনি নিজেই সেই থলির ভিতর রাখিয়া দেন। কোচমান যখন ঘাস রাখিতে যায়, তখন বাহির করে। আমার কথা বিশ্বাস না হয় আপনার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন।

 অনাথনাথকে আর জিজ্ঞাসা করিতে হইল না। বিমলা লজ্জা ত্যাগ করিয়া গললগ্নীকৃতবাসে আমার পদতলে আসিয়া পড়িলেন এবং সকল কথাই স্বীকার করিলেন। তাঁহার কথা শুনিয়া আমি বলিলাম, “অনাথ বাবু আপনাকে কোন কথা বলিবেন না, আপনার উপর কিছুতেই বিরক্ত হইবেন না, ঠিক পূর্ব্বের মতই সদ্ব্যবহার করিবেন। কিন্তু কেন আপনি এত চাতুরী করিলেন তাহা বলিতে হইবে।

 বিমলা অনেকক্ষণ কোন উত্তর করিলেন না। পরে আমার নির্ব্বন্ধাতিশয় দর্শনে বলিলেন, “আজ আপনি আমার পিতার স্বরূপ, আপনার নিকট কোন কথা গোপন করিব না। আমার স্বামী আমাকে অত্যন্ত ভালবাসেন, তাঁহার সেই ভালবাসা মৌখিক কি আন্তরিক তাহাই জানিবার জন্য আমি এত কাণ্ড করিয়াছি। আমার অপরাধ হইয়াছে—আমায় ক্ষমা করুন, আমি আর কখনও এমন কার্য্য করিব না।

 আমি হাসিতে লাগিলাম। পরে বলিলাম, “না মা! তোমার কোন চিন্তা নাই। অনাথবাবু তোমাকে যেমন ভালবাসেন, এমন ভালবাসা অতি অল্প লোকেরই দেখিয়াছি।

সম্পূর্ণ।


ভাদ্র মাসের সংখ্যা

“প্রেমের খেলা”

বা

“খুনে প্রেমিক”

যন্ত্রস্থ।