লেফ্‌টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস/সুরেশের পত্রাবলী

পরিশিষ্ট


 লেফ্‌টেন্যাণ্ট সুরেশচন্দ্র বিশ্বাস—কলিকাতায় তাঁহার পিতৃব্যকে অনেক পত্র লিখিয়াছিলেন তন্মধ্যে কতকগুলি হারাইয়া গিয়াছে কিন্তু যে গুলি আমাদিগের হস্তগত হইয়াছে, নিম্নে তৎসমস্ত উদ্ধৃত হইল—

[১]
সেণ্টক্রুজ, ৮ই ফেব্রুয়ারী ১৮৮৭।

 প্রিয় পিতৃব্য মহাশয়;—উপরে সেণ্টক্রুজ ঠিকানা দেখি বুঝিতে পারিবেন যে, আমি আর এক্ষণে রাইয়ো ডি-জেনিরোতে নাই, কারণ আমি তথা হইতে এখানে বদ্‌লি হইয়াছি। এই সেণ্টক্রুজ ক্ষুদ্র গ্রাম, পূর্ব্বে অর্থাৎ কয়েক বৎসর পূর্ব্বে ইহা ব্রেজিলদেশীয় সম্রাটের নিজস্ব সম্পত্তি ছিল এবং তদীয় ক্রীতদাস গণ কর্ত্তৃক উহার আবাদ হইত, কিন্তু তাঁহার সেই সুবিখ্যাতকারুণ্যবশতঃ তাহাদিগকে মুক্তি প্রদান করিবার পর হইতে এই স্থান নিতান্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় পতিত হইয়াছে এবং এক্ষণে কেবল ইহা গোচারণের মাঠ মধ্যে গণ্য। আমি এক্ষণে অশ্বারোহী সৈনিক শ্রেণীভূক্ত এবং এই সামরিক পদে অশ্বাদির ভার গ্রহণ করিয়াছি। এই সকল অশ্ব ও অন্যান্য পশুচারণ জন্য স্থানীয় বিস্তীর্ণ পার্ব্বত্য ভূমি রহিয়াছে। পিতৃব্য মহাশয়, আমি আপনাকে অতি আনন্দসহকারে এখন জানাইতেছি যে, আমি সৈনিকশ্রেণীর এক পদ উচ্চে উন্নীত হইয়াছি। আমি আর এক্ষণে সামান্য সৈন্য নহি,—আমি এক্ষণে কেবো-ডি-এঙ্কোরাড্র। ইহাকে ফরাসি ভাষায় কর্পোরাল বলে, এবং সৈনদিগকে স্বেচ্ছামত পরিচালন করিতেছি। আপনি আমাকে যায় লিখিয়াছেন যে, আমি যেখানে যাই বা যে জাতি দেখি, তৎসম্বন্ধে আপনাকে কিছু লিখি, কিন্তু তাহা করিতে হইলে আমাকে রাশি রাশি পুস্তক লিখিতে হয়। আমার অনেক ইয়ুরোপীয় বন্ধু সেই কথা বলেন অর্থাৎ আমার অভিজ্ঞতা, আমার কার্য্য, প্রভৃতি পুস্তকাকারে মুদ্রিত করিয়া প্রকাশ করিতে বলেন। বস্তুতই আমি অনেক দেখিয়াছি। আমি প্রায় সমুদায় বিজ্ঞানই আনি এবং সাতটা ভাষাও জানি। আমি ইংরাজি, ফরাসি, জর্ম্মান, স্পেনীয়, এবং পর্ত্ত‌ুগীজ এবং অল্প অল্প ইটালী, ডেনিস, ও ওলন্দাজ ভাষায় কথা কহিতে পারি, কিন্তু এই শেষোক্তগুলি আমি গণনা মধ্যে ধরি না। আমি একটা কপর্দ্দক লইয়াও বাটী হইতে আসি নাই এবং যদিও আমার তখন একটা কপর্দ্দকও ছিল না, বলিতে কি, আমি এক বস্ত্রেই বাটী হইতে বাহির হইয়াছিলাম। বরাবর আমার ঐকান্তিক বাসনা ছিল যে, মাতাঠাকুরাণিকে দর্শন করিব এবং তাঁহার শিরোদেশমণিমুক্তায় সুশোভিত করিব এবং যদি তাঁহার সহিত দেখা সাক্ষাতের সম্ভাবনা থাকিত তাহা হইলে অনেক দিন আগেই তাহা করিতাম, কারণ এক্ষণে আমার সেরূপ অবস্থাও হইয়াছে। কিন্তু স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা স্বতন্ত্র—সুতরাং এ জীবনে তাঁহার দর্শন লাভ আর ঘটিল না। কিন্তু হায়! আমি সংসারে একাকী এবং একাকীই থাকিব,—অদৃষ্টে যাহা ঘটিবার তাহা ঘটিবে। অহো! সর্ব্বশক্তিমান পরমেশ্বরের অসীম রাজ্যে একাকী ভ্রমণ করা এবং প্রকৃতি জননীর শোভা সৌন্দর্য্য উপভোগই এক্ষণে আমার একমাত্র সুখ। প্রকৃত সখ্যতা, প্রকৃত প্রেম সংসারে দুর্লভ, এবং সেই জন্যই দার্শনিক পণ্ডিতগণ কহিয়াছেন, ‘পৃথিবীতে বাস করা আর অপর এক জগতের সৃষ্টি করা একই কথা’’। আমি আমার সুখনিকেতন নির্ম্মাণ করিয়াছি, এবং এক দিন আমিও সেইখানে আমার সেই স্নেহময়ী জননীকে দর্শন করিব। আপনারা সকলে হয়ত মনে করেন যে, আমি নির্ম্মম ভবঘুরে। কিন্তু হে পিতৃব্য মহাশয়, এই ভবঘুরের নিকট সহস্র সহস্র ব্যক্তি পদানত। অধিক কি, ভয়াকুল বন্য শ্বাপদ জন্তুগণও এই ভবঘুরের সম্মুখে ভয়বিকম্পিত কলেবরে দাঁড়াইয়া থাকে। বিতাড়িত অর্থহীন ভিক্ষুকগণ বিনা সম্বলে বারম্বার আসিয়াছে, এবং আমি আপনার বিতাড়িত ও পরিত্যক্ত ‘সুরী’’ও তাহাই। পিতৃব্য মহাশয়। ভবঘুরে কথা আমি বড় ভালবাসি, এ শব্দটী আমার বড় ভাল লাগে; কারণ, আপনি যাহাকে ভবঘুরে বলেন, তাহা আমার কাছে অতি পবিত্রসত্য। ভবঘুরে কাহাকে বলে, না যাহার কোথাও থাকিবার স্থান নাই, এবং যাহারা তাহার জন্য একবারও চিন্তা করে না। তাহারই সমধিক জ্ঞানী, কেননা অপেক্ষাকৃত অধিকতর সুখকর স্থান অন্বেষণ করিয়া থাকে,—এবং পৃথিবীতে যত সুখ লাভ হইতে পারে, তাহাপেক্ষাও অধিকতর সুখী। এই সকল ভবঘুরেদিগের বিশ্বাস যে, অখিল ব্রহ্মাণ্ডপতি পরমেশ্বরের এই বিশাল বিচিত্র বিচিত্র বিশ্বের তাহারাই উত্তরাধিকারী, এবং এই বিশ্বাস,—এই ধ্রুব বিশ্বাসে তাহারা কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করিয়া আনন্দে নৃত্যগীতাদী করিয়া দিনযাপন করে।

 এযাবৎ কোন্‌ মনস্বী ব্যক্তি কবে এই মাধুর্য্যময় সংসারের মায়ায় মুগ্ধ হইয়াছেন? বীরগণের মধ্যে প্লেটোয়া-বিজেতা পসিমিয়স্‌ হইতে জর্ম্মাণ সম্রাট্‌ উইল্‌হেম্‌ অবধি, কবি ও দার্শনিকগণের মধ্যে জেরোয়াষ্টায়্‌ প্লেটো, হোয়েস্‌ হইতে সেক্সপিয়ার্‌, সিলার, গেটী, গোল্ড্‌স্মিথ্‌ পর্য্যন্ত দেখুন, * * ইহাঁদের সকলেই মহাধীশক্তিসম্পন্ন ও সাতিশয় অতিমানী বিশুদ্ধচেতা ও সুতীক্ষ্ন কল্পনাশালী পুরুষ। * * * যাহা বলিতেছিলাম,—এই সকল ভবঘুরে পৈত্রিক সম্পত্তির লালসা রাখে না। অপর সকলে যাহা জানিতে ব্যস্ত, তজ্জন্য উৎসুকও নহে; স্ব স্ব মনোবৃত্তি অনুসরণেই সর্ব্বদা ব্যস্ত। ঊর্ব্বরা কল্পনা প্রভাবে তাহারা যেন শূন্যমার্গে উড্ডয়ন প্রয়াসী; সকল বিষয়েই, যাবতীয় রহস্য ভেদকল্পে তাহাদিগের চিন্তা, কল্পনা, কার্য্য নিয়ত নিযুক্ত। সাধারণ সামাজিক বা বৈষয়িক ব্যাপারে তাহাদিগের অণুমাত্রও আসক্তি নাই। তাহাদিগের চিত্তবৃত্তি সর্ব্বদাই ঊর্দ্ধতন রাজ্যে পরিধাবমান,—হইবারই কথা, কারণ আত্মা যে ঈশ্বরের অংশ দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন। * * * যাহা হউক, এ সকল ঊর্দ্ধতন প্রদেশের প্রসঙ্গ যাউক।—বাবা যে আমায় কলকাতায় গিয়া তাঁহার ও আপনাদিগের সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার কথা বলিয়াছেন, সে সম্বন্ধে আমি একান্তই অক্ষম;—তথায় আমার বিশেষ আকর্ষণী নাই। আমি যাঁহাকে ভালবাসিতাম ও বাসি এবং যিনি আমাকে ভালবাসিতেন ও এখনও বাসেন, তিনিত আর এ মর্ত্ত্যধামে নাই! আমি এক্ষণে ধৈর্য্য ধরিয়া তাঁহারই অপেক্ষায় এখানে রহিয়াছি, এবং থাকিব যতদিন না তাঁহার সহিত গিয়া মিলিত হইতে পারি। সেই অনন্ত পথের যাত্রী,—চক্ষুর অগোচর মেঘমালার জন্য মণিময় মন্দিরদ্বারে তিনি যে আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছেন।

দ্বিতীয় পত্র।

রায়োডি-জেনিরো ৫—১—৮৯।

 পিতৃব্য মহাশয়। এই পত্র প্রাপ্ত হইবার পূর্ব্বে বোধ হয়, আমায় আর একখানি পত্র পাইয়া থাকিবেন। এক্ষণে অতীব দুঃখিত অন্তরে ও বিরক্তির সহিত লিখিতেছি। আমাদিগের হাঁসপাতালে তাহারা পীতজ্বরে ঘন ঘন মরিয়া যাইতেছে, অগত্যা আমরা সে বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া অন্য বাড়ী লইয়াছি। একবার অনুধাবন করুন যে, এই ভীষণ গ্রীষ্মের দিনে আমাদিগকে কি কষ্টকর কার্য্য করিতে হইতেছে। আজকাল এখানে তাপমান যন্ত্রের ৯৩ হইতে ৯৫ ডিগ্রী পর্য্যন্ত গরম হইয়া থাকে, তা’ছাড়া বিদ্রোহ ত আছেই এবং তাহাতে আমাদিগের কতকগুলি সৈন্য গুলিতে আহত হইয়া পড়িয়াছে। লিখিবার সময় আমি তাহাদিগের কাতর ধ্বনি শুনিতেছি। কাকা মহাশয়, আমাদিগের পুরাতন হাসপাতালের সে ভীষণ দৃশ্য আপনি কল্পনাও করিতে সক্ষম হইবেন না। পুরাতন হাঁসপাতাল নূতন স্থান হইতে অধিক দূর নহে। জেসুট সম্প্রদায়ের যে পুরাতন মন্দির বা চর্চ্চ ছিল, তাহাতেই পুরাতন হাঁসপাতাল অবস্থিত। এখনও সেখানে আমার একটী ঘর আছে, কারণ আমার সকল জিনিষপত্র এখনও সেখান হইতে আনিতে পারি নাই, তাহা ব্যতীত আমাকে সেখানে গিয়া ঔষধ তৈয়ার করিতে হয়, (বলা বাহুল্য আমি ডাক্তারী শিখিয়াছি) এবং অন্ত্র চিকিৎসা যন্ত্রাদিও সেখানে আছে। আর কিছুদিন যদি এখানে থাকি, তাহা হইলে আমি একজন ভাল অন্ত্র চিকিৎসক হইতে পারি। আমি প্রায় সকল প্রকার অস্ত্রোপচারে সক্ষম এবং ডাক্তারেরা তৎসমূদয় ঠিক হইয়াছে বলিয়া অনুমোদন করেন। আমি যে হাঁসপাতালের কথা বলিতেছিলাম, তাহা একটী খিলানবিশিষ্ট সুবৃহৎ গৃহ বা হল, উহার উপরে স্কাই-লাইট বা আলোক আসিবার পথ আছে। ঘরটী যখন শূন্য থাকে, তখন উহাকে সমাধি মন্দির বলিয়া বোধ হয়। সকলেই সেই গৃহে প্রবেশ করিতে ভীত হইয়া থাকে এবং বস্তুতঃ সহজে কেহ তথায় প্রবেশ করে না। আমাকে কার্য্যক্রমে বাধ্য হইয়া সেইখান দিয়া সচরাচর যাতায়াত করিতে হয়, কিন্তু আমার তাহাতে কিছুমাত্র ভয় হয় না, কারণ আমার বিশ্বাস যে, প্রেতাত্মাগণ কখনই আমাদিগকে আশঙ্কিত বা বিরক্ত করিতে আসে না। প্রেতাত্মা সম্বন্ধে অনেক গল্পাদি শুনিতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তৎসমূদায় মানুষের নিজের কল্পনাপ্রসূত। তবে আমি ইহা জানি যে, প্রেতাত্মা আছে কিন্তু তাহারা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পদার্থ, আর ভূতড়ে বাড়িতেও যথার্থই ভয় করে। কাকা মহাশয়, আমি মরণে কিছুমাত্র ভয় করি না। মৃত্যুর পূর্ব্বে অনেক রোগীকে আমি চিকিৎসা করিয়াছি; অনেকে রোগ হইয়া মরিয়াও গিয়াছে, তথাপি আমি এখানে অবস্থান করিতেছি আর যদি আমিও মরিয়া যাই, তাহা হইলে আরও ভাল। যদি ভগবান আমাকে রক্ষা করেন, তাহা হইলে আবার এক দিন না একদিন আপনাদিগকে যে দেখিতে পাইব, ইহাই আমার পরম আনন্দের বিষয়। যা’ক, এই অপ্রীতিকর কথায় আর কাজ নাই।

 পিতৃব্য মহাশয়, আমি শীঘ্রই এ স্থান হইতে চলিয়া যাইব এবং এমন কোন একটা উপায় আবিষ্কার করিব যে, আমি অনায়াসে পরিভ্রমণ করিতে পারিব; কারণ, ভ্রমণেই আমার অপার আনন্দ এবং তাহা হইতেই একটা নূতন মৎলব পাওয়া যাইবে ও কোন দিন বাটী ফিরিয়া যাইতে পারিব বলিয়া মনে হয়। আমি সর্ব্বদাই ভ্রমণ করিব, কারণ গতিই সৃষ্টির নিয়ম এবং জীবনের লক্ষণ। তা’ছাড়া ব্রেজিলে আসিয়া সামরিক বিভাগে পসার প্রতিপত্তি লাভের যে বাসনা ছিল তাহা আমার পূর্ণ হইয়াছে। আমার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল—ঘৃণার্হ রমণী জাতির সাধুতার বিষয় পরীক্ষা করা; দ্বিতীয়, আমার জনৈক বন্ধু যে কোন সামরিক কর্ম্মচারীর দ্বারা অবমানিত হইয়াছিলেন, তাহার প্রতিশোধ লওয়া। এ দুইই আমার হইয়াছে, আমি রমণী জাতিকে ঘৃণার সহিত পরিত্যাগ করিয়াছি,—আর সেই রত্নবৈরী আমার আগমনে ভয়ে পলায়ন করিয়াছে। অনেক কষ্টে এই সকল কার্য্য সমাধা হইয়াছে। আমি সুখজনক নাট্যময় জীবন পরিত্যাগ করিয়া দুঃখ ও কঠোরতাময় সৈনিক জীবন ইচ্ছাপূর্ব্বক তিন বৎসরের জন্য গ্রহণ করিয়াছিলাম। ‌এই বৎসরের ১০ই মে তারিখে আমায় সৈনিক জীবন শেষ হইবে—তখন ইহাকে নমস্কার করিয়া নূতন কার্য্যে ব্যাপত হইব। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, আমার যেখানে ইচ্ছা চলিয়া গিয়া এমন কোন উপায় অবলম্বন করিব, যদ্দারা পূর্ব্বের ন্যায় সুখে সচ্ছন্দে ভদ্রলোকের ন্যায় থাকিতে পারি। যদিও বাল্যকালে বাড়ীতে থাকিতে কোন কোন বিষয়ে আমি অতিশয় দুষ্ট ছিলাম তথাপি চিরদিন সরল ও সৎপথে থাকিয়া হৃদয় ও মনের উদারতা রক্ষা করিয়া আসিয়াছি। বিমানচারী বিহঙ্গদিগের ন্যায় পুনরায় যে আমি স্বাধীন হইয়া প্রফুল্লচিত্তে নানাদেশ পরিভ্রমণ করিব ইহা স্মরণ করিয়া আমার যে কি অপার আনন্দ হইতেছে তাহা আর কি বলিব। আবিস্কার বা অনুকরণ কার্য্যের জন্য আমি আবার বিজ্ঞানের চর্চ্চাই করিব। সিংহ, ব্যাঘ্র, ভল্লুক, হস্তী প্রভৃতি দুরন্ত পশুদিগকে শিক্ষা দেওয়া বা শাসন করা—সে বিজ্ঞানের অন্তর্গত নহে। আমি একটী বাক্যালাপী মুণ্ড, বৈদ্যুতিক বালিকা, টেবিলের ক্রীড়া এবং চিত্রবিশিষ্ট স্বচ্ছ বালিকা (যাহার শরীরের অভ্যন্তর দেখা যায়) সৃষ্টি করিব। এদেশে ও অন্যত্র এই চারিটী জিনিষ দ্বারা আমি অর্থোপার্জ্জন করিতে পারিব। কাকা মহাশয়, যাহার অর্থোপার্জ্জন করিবার মস্তিষ্ক আছে এবং সরলহৃদয় আছে, তাহার পক্ষে এ জগতে অর্থ অতি সুলভ সামগ্রী। প্রত্যেক ব্যক্তি আপনার, এবং ঈশ্বর সকলের। পৃথিবীতে আমি আছি ও পৃথিবী আমার জন্য আছে। ঈশ্বরের শক্তি মহান জানিয়া এবং পৃথিবী ঈশ্বরের বলিয়া যদি মনে করিয়া লই, তাহা হইলে আমার সঙ্গে সঙ্গে সকল সৃজিত পদার্থই চলিতে থাকিবে। সকল শাস্ত্র অপেক্ষা চিকিৎসা শাস্ত্রই উচ্চ। আমি উহা খুব দক্ষতার সহিত শিখিয়াছি এবং উহার গুহ্যতম বিষয় পর্য্যন্ত জানিয়াছি। এই শাস্ত্রকে আমি পূজা করি কিন্তু উহার পাণ্ডা বা প্রোফেসরদিগকে ঘৃণা করি কারণ তাহাদিগের হৃদয়ে উদারতার বড়ই অভাব। উদারতাবিহীন চিকিৎসক আর পক্ষহীন পরী একই পদার্থ। সকল শাস্ত্র অপেক্ষা মনোবিজ্ঞান অর্থাৎ যে শাস্ত্র সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বরকে অনুসন্ধান করে এবং যদ্দারা তাঁহাকে জানিতে পারা যায়, তাহাই মহান্ ও উচ্চ। এ সম্বন্ধে আমি কোন সমালোচনা করিব না, কারণ উহা স্মরণেও আমার হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার হয়। এ বিষয়ে আমি কিছু কিছু পরীক্ষা করিয়াছি এবং তাহাতে কেবল আমার প্রাণে ভয় সঞ্চিত হইয়াছে।

আপনার স্নেহাধীন
সুরেশ।


তৃতীয় পত্র

রায়ো-ডি-জেনিরো,
১২ই মে, ১৮৯৩।

 পিতৃব্য মহাশয়,—বস্তুতঃ অনেক দিন হইল, আপনার নিকট হইতে কোন পত্রাদি পাই নাই, গত বৎসর আপনাকে যে একখানি পত্র লিখি, তাহাতে এখানে যে একটা বিদ্রোহ ঘটিয়াছিল, তাহার বিষয় উল্লেখ করিয়াছিলাম কিন্তু এ পর্য্যন্ত তাহার কোন উত্তর পাই নাই। সামরিক বিভাগে আমার ভাল হইতেছে। প্রথম সার্জ্জেণ্ট পদ হইতে আমি ব্রিগেড পদে উন্নীত হইয়াছি। ইতিপূর্ব্বেই আমি একজন চিহ্নিত-কর্ম্মচারী অর্থাৎ অফিসার হইতে পারিতাম, কিন্তু আমি বিদেশী বলিয়া তৎপক্ষে কিছু ব্যাঘাত ঘটিয়াছিল। ছয় বৎসর কাল আমি এখানে আছি এবং বিশেষ সুপরিচিত হইয়াছি সুতরাং আমার পক্ষে ইহা অনেকটা সুবিধার কথা বলিয়া বিশ্বাস করি। তার পর আপনারা সকলে বোধ হয় জানেন যে, এখানে সকলে পর্তুগীজ ভাষায় কথাবার্ত্তা কয়, কাজেই আমি যখন প্রথম এখানে আসি, তখন কাহারও কথা বুঝিতে পারিতাম না কিম্বা কাহারও সহিত কথা কহিতে পারিতাম না। এক্ষণে সে ভাষা আমি শিখিয়াছি এবং যে পদে অধিষ্ঠিত আছি, তাহা অতি অল্প লোকই পাইবার উপযোগী। সাধারণতন্ত্রের প্রেসিডেণ্ট কর্ত্তৃক আমার পদোন্নতির কথা প্রচারিত হইলে আপনাকে যথাক্রমে জানাই। বিগত ছয় বৎসর যে আমি সুখ্যাতির সহিত কাজ করিয়াছি, তাহা সরকারে লিখিত আছে, এবং বিনা কারাবাসে সামরিক যশলাভ করিয়াছি। এক্ষণে রায়ো গ্রাণ্ডি ডি শিউলে যুদ্ধ বিগ্রহ উপস্থিত হইয়াছে। আমি তথায় যাইতে ইচ্ছা করিয়াছিলাম কিন্তু তথায় আমাদিগের যাইবার কোন হুকুম এখনও হয় নাই। পিতা মহাশয় আজ কাল কেমন আছেন? তিনি কি আমাকে মনে করেন। বাবাকে বলবেন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমি ভালই আছি। আমি এক্ষণে মানুষ হইয়া উঠিয়াছি এবং সমাজে আমার মান সম্ভ্রম হইয়াছে। বদমায়েসের কাছে আমি যম, ডাকাতের কাছে ডাকা, ভদ্রলোকের নিকট ভদ্রলোক, এবং পণ্ডিতের কাছে পণ্ডিত। আমি আপনা হইতেই সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক হইয়াছি, কেননা চতুর্দ্দশ বৎসর বয়ঃক্রম হইতেই কেহই আমার কোন চেষ্টা চরিত্র করেন নাই। আজ বোধ করি, আমার বত্রিশ কি চৌত্রিশ বৎসর বয়ঃক্রম হইয়াছে কিন্তু ঠিক বলিতে পারি না কত! যাহা হউক আমি বিস্মিত হইয়াছি যে, ইহার মধ্যেই আমার মস্তকের কেশ এবং মুখের গোঁপ দাড়ি পাকিয়া গিয়াছে, তা’ছাড়া মস্তকে টাকও পড়িয়াছে। সকলকে আমার কথা বলিবেন—আর আমাকে যাহারা জানে তাহাদের খবরাখবর সমেত শীঘ্রই পত্র শিখিবেন।

 আপনার স্নেহাধীন
 সুরেশ।


চতুর্থ পত্র


 রায়ো ডি-জেনিরো ১০-১ ৯৪।

 কাকা মহাশয়,—আবার আপনাকে চিঠি লিখিতে বিলম্ব হইয়া গিয়াছে, কারণ, সেই অবধি আমি রিউমাটিসম্‌ রোগে শয্যাগত হইয়া আছি। প্রায় এক বৎসর হইল আমি এই রোগে আক্রান্ত হইয়াছি। গত সপ্তাহে অধিক পরিমাণে মার্করি ও আয়োডাইড অব্‌ পটাশ সেবন করিয়া বেদনা থামিয়াছে, কিন্তু উক্ত ঔষধ সেবনে বিষ সেবনের লক্ষণ দেখা যাওয়ায় উহা বন্ধ করিয়াছি। ডাক্তারেরা বলে যে, উহা হইতে অব্যাহতি পাইতে অনেক সময় লাগিবে।

 পত্রমধ্যে আমার দুইখানি ফটোগ্রাফ পাঠাইতেছি—একখানি আপনার ও অপরখানি বাবার জন্য। কেমন আমার একটা ধারণা হইয়া গিয়াছে যে, তিনি বোধ হয় আর জীবিত নাই আর তাহাও আমি জানি না যে, আমার এই ধারণা সত্য কি মিথ্যা। আমি যে ব্রেজিলদেশীয় পদাতি সৈন্যদলের অধিনায়ক বা লেফ্‌টেনাণ্টের পরিচ্ছদ পরিয়াছি, তাহা দেখিলে নিশ্চয়ই তিনি সুখী হইবেন এবং সে সুখ বা আনন্দ, গৌরব বা স্পর্দ্ধা—তাঁহারই। আপনি শুনিয়া হয়ত একেবারে স্তম্ভিত হইবেন যে, এই পোষাকটী প্রস্তুত করাইতে আমার এক সহস্র ডলার খরচ হইয়াছে, কারণ সুন্দর কাপড়, পালক, রেশম ও সোণার জরিতে ইহা তৈয়ার হইয়াছে। আমার সহধর্ম্মিণীরও একখানি ফটোগ্রাফ পাঠাইলাম, উহা বিবাহের পূর্ব্বেকার। এখন আমার পুত্রের ফটোগ্রাফ তোলান হয় নাই, সুতরাং তাহা পাঠাইতে পারিলাম না। আমি যে অদৃশ্য হইয়াছিলাম, তৎসম্বন্ধে যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা নিম্নে বিবৃত করিতেছি। যুদ্ধ সংঘটনের স্বায়ংকালে দশজন নৌ-সেনাকে কয়েদীরূপে ধরিয়া লইয়া বাসায় ফিরিয়া গেলাম, পরে আবার একাকী ভ্রমণে বহির্গত হইলাম। পথিমধ্যে একটী ভদ্রবেশী রমণী আসিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিল যে, মৃত ব্যক্তিগণ কোথায় রক্ষিত বা স্থানান্তরিত হইয়াছে। আমি আগ্রহের সহিত গিয়া তাহাকে সেই স্থান দেখাইয়া দিলাম। সহসা দুই জন নৌ-সেনা ছোরা হস্তে আমাকে আক্রমণ করিল। আমিও তরবারি নিষ্কাষিত করিয়া আত্মরক্ষা করিলাম। আত্মরক্ষা ও আক্রমণে তাহারা আমাকে যথেষ্ট সমর্থ দেখিয়া দ্রুতপদে ঊর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। আমিও তৎক্ষণাৎ স্বস্থানে প্রত্যাগমন মানসে ফিরিবার কালে স্থানীয় দুর্গন্ধে কষ্টবোধ হইল এবং বিশ পঞ্চাশ হাত যাইতে না যাইতে আমার মস্তক এমন ঘুরিয়া গেল যে, উপায়ান্তর না দেখিয়া নিকটিস্থিত একখণ্ড প্রস্তরোপরি বসিয়া পড়িলাম এবং স্বতঃই নিজ অবস্থার বিষয় আলোচনা করিতে লাগিলাম। চারি দিক অন্ধকার দেখিলাম এবং পায়ে ঠাণ্ডা অনুভব করিলাম। সেই ঠাণ্ডা ক্রমে জানু ও ঊরু বহিয়া বুক পর্য্যন্ত উঠিল। অনন্তর ঠিক সেইরূপ শৈত্য কর্ণে অনুভূত হইয়া গণ্ডদেশ বাহিয়া বুকে আসিয়া থামিল আর আমি সংজ্ঞাহীন ইলাম। তিন দিবস পরে আমার জ্ঞান হইল। দুই জন অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক অর্দ্ধ উলাঙ্গাবস্থায় আমি হাসপাতালে নীত হই। অষ্টাহ পরে কথা কহিতে পারিলে স্বস্থানে আসিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলাম ও যথাস্থানে ফিরিয়া আসিলাম। সকলে মনে করিয়াছিল যে, আমি হারাইয়া গিয়াছিলাম।

 আপনার স্নেহাষ্পদ
 সুরেশ।


পঞ্চম পত্র।

 প্রিয় পিতৃব্য মহাশয়—আজ কয়েক দিন হইল আমি আপনার পত্র পাইয়াছি এবং তাহাতে অবগত হইলাম যে, আমি সামরিক জয়লাভ করায় দেশের লোক বড় সন্তুষ্ট হইয়াছে। এ সকল আমার কাছে এখন এত সহজ হইয়া গিয়াছে যে, তাহাতে আমি কিছুই নূতনত্ব বা আশ্চর্য্যভাব দেখিতে পাই না। তবে অন্যান্য অনেক অফিসার বিশেষ কার্য্য-কুশলতা দেখাইয়াছিলেন, কিন্তু সন্তাপের বিষয় যে, আর তাঁহাদিগকে ইহজন্মে দেখিতে পাইব না। আমার সামরিক শিক্ষার কথা তবে বলি,—প্রথম অশ্বারোহী দলে সৈনিকরূপে তিন বৎসর কার্য্য করি, পর পদাতিক দলে পাঁচ বৎসর। বিগত ৬ই সেপ্টেম্বর তারিখে যখন বিদ্রোহাগ্নি প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠে এবং আমাদের সেই সুন্দর রায়ো-ডি-জেনিরো উপসাগরে তাবৎ রণপোত সম্মিলিত হইয়া ঘেরিয়া ফেলিয়া, “সান্তাক্রুজ,’’ ‘‘ফেজ, স’’ ও ‘‘জোয়াও’’ নামক সুন্দর সুন্দর দুর্গ সকলের প্রতি গোলা বর্ষণ করিতে থাকে, তখন আমরা বু’ঝতে পারিলাম যে, আমাদিগের কার্য্য আছে। সেই সকল দুর্গ হইতে ভীমনাদে রণপোত প্রতি গোলা ছুটিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে দেশ ব্যাপিয়া চারি দিকে সৈন্য সংগ্রহ হইতে লাগিল। উপসাগর কুলের তাবৎ উচ্চ স্থান মাত্রই সুদৃঢ় রূপে রক্ষিত হইল। যেখানে সেখানে ও সর্ব্বত্রই কাটাকাটি ও প্রতিনিয়ত গোলাবর্ষণ চলিতে লাগিল। সহস্র সহস্র বিদেশী লোক রায়ো-ডি-জেনিরো সহরে বাস করিতেছিল বলিয়া উহাকে বিধংস করিতে না পারিয়া, বিদ্রোহী নৌসেনাগণ বিশখানি রণপোত সমেত নাথিরয় সহরকে আক্রমণ করিল। শেষোক্ত নগর ভূমিসাৎ করতঃ আমরা অতি অল্প সংখ্যক ও পরিশ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি মনে করিয়া তাহারা নগরে অবতরণ করিল। অতঃপর ৯ই ফেব্রুয়ারি তারিখে যুদ্ধ হইল এবং তিনঘণ্টা কাল ভীষণ যুদ্ধের পর নৌসেনাগণ পরাভূত হইয়া কতক পলায়নপূর্ব্বক স্বস্ব জাহাজে গিয়া আশ্রয় লইল, অবশিষ্ট আমাদিগের হস্ত বন্দী হইল। পিতৃব্য মহাশয়, আপনি মনে করিবেন না যে, আমি যে পদে অধিষ্ঠিত, তাহা সহজে লাভ করিয়াছি। আমি যে কখনও বিশিষ্ট কর্ম্মচারি বা অফিসার হইতে পারি, তাহা একবারও ভাবি নাই। প্রায় সর্ব্বদাই আমার পদোন্নতির কথা উঠিত কিন্তু আমি বিদেশী বলিয়া খাতা হইতে আমার নাম কাটা গিয়াছে। সম্প্রতি বিদ্রোহাগ্নি জ্বলিয়া উঠিলে আমি ও আমার অন্যান্য সহচর কোন জেনারেলের অধীনে কাজ পাই। উক্ত জেনারেল যদিও আমাকে চিনিতেন না কিন্তু যুদ্ধকালে আমরা কিরূপ দক্ষতার সহিত কার্য্য করিয়াছি তাহা লক্ষ্য করিয়াছিলেন এবং তৎকালে আমার বীরত্ব ও শত্রুপক্ষের গোলাবর্ষণ মধ্যে কি রূপ সাহসের সহিত প্রবেশ করি তাহাও দেখিয়াছিলেন।

 আমি দেশী কি বিদেশী, তিনি তাহা জানিবার জন্য ভ্রূক্ষেপ করেন নাই। আমার দক্ষতাই আমার পক্ষে যথেষ্ট হইয়াছিল এবং তদনুসারে তিনি সাধারণ তন্ত্রের সামরিক সহকারী প্রেসিডেটের নিকট রিপোর্ট করলে আমি লেফ্‌নেণ্টের পদে উন্নীত হই এবং এই পদে থাকিয়া নাথিরয়ের অদৃষ্ট-মীমাংসায় শেষ পর্য্যন্ত আমি সাহায্য করিয়াছি।

 এই সঙ্গে আমি আপনাকে একখানি নাথিরয় যুদ্ধের ছবি পাঠাইতেছি। এইখানে আমার সহকারীগণ আমাকে বিশেষ ভীতিপ্রদর্শন করিয়াছিল আমি কিন্তু কখনই তাহাদিগের প্রতি অসদ্ব্যবহার করি নাই। আপনারা সকলেই বলেন যে, আমি আপনাদিগকে সবিশেষ বিবরণ লিখিয়া পাঠাই কিন্তু পিতৃব্য মহশায়, যুদ্ধের বিভীষিকার বিষয় আর কি বর্ণনা করিব। আমরা এমন যে মহামূল্য জীবন যুদ্ধক্ষেত্রে তাহা আমরা সহজে বিসর্জ্জন করিতে পারি। তবে যে যতটা ইহার জন্য প্রস্তুত হইতে পারে সে ততটা আপনাকে রক্ষা করিতে পারে। কিন্তু বলুন দেখি প্রকৃত সাহস কি? কোন অভিপ্সিত বস্তু লাভের জন্য অবিচলিত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞভাবে জীবন উৎসর্গ করাকেই সাহস কহে। শত্রুগণ যখন দূরে অবস্থান করে তখন বিবিধ বিচার, বিতর্ক, অনুমান, পরিমাণ প্রভৃতি সকলই সম্ভব, কিন্তু শত্রু নিকটস্থ হইয়া আক্রমণোদ্‌যোগী হইলে একমাত্র উপায়—সমগ্র সেনা একত্র করিয়া অগ্রসর হওয়া,—এবং যত দ্রুতগতিতে ধাবমান হইতে পারিবে, তত অধিক পরিমাণে শত্রুদিগকে আতঙ্কিত করিতে পারিবে। আপনি আমার জীবনের আরও বিশেষ বিবরণ জানিতে চাহেন। পৃথিবীর যে যে দেশে আমি গিয়াছি, সেইখান হইতেই ত আপনাকে পত্র লিখিয়াছি। আমি কি আপনাকে বলি নাই যে, সার্কাসের সহিত সিংহ পোষক বা শাবক হইয়া সমগ্র ইয়ুরোপ পরিভ্রমণ করিয়াছি এবং পিঞ্জরাবদ্ধ বন্য পশুদিগকে খেলা শিখাইয়াছি? এই সঙ্গে আমি এই পত্রের সহিত আপনার জন্য বেনস্‌ এরেস (Buenos Ayres) হইতে প্রকাশিত একখানি সংবাদপত্র পাঠাইতেছি; উহাতে আমার জীবনচরিত প্রকাশিত হইয়াছে।

আপনার স্নেহের,
সুরেশ।

ষষ্ঠ পত্র।

রিও; ১২ই এপ্রেল, ১৮৯৭।

 প্রিয় পিতৃব্য মহাশয়,—আমি ১৫ই নবেম্বর তারিখে যে পত্র লিখিয়াছি, তাহার কোনও প্রত্যুত্তর না পাইয়া সাতিশয় দুঃখিত আছি। সেই পত্রসহ আপনাকে কতকগুলি সংবাদ পত্র ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাগজ পত্র পাঠাইয়াছিলাম, সেগুলি পাইলেন কি না তাহাও জানিতে পারিলাম না। আমি অনেকটা শারীরিক ভাল আছি। আজ সাতিশয় আহ্লাদের সহিত আপনাকে জানাইতেছি যে, আমার আত্মচরিত অনেকটা লেখা হইয়াছে, তবে সেটী সম্পূর্ণ করিতে অবশ্যই বিলম্ব হইবে। সম্প্রতি আমার কাজের এতই ভিড় পড়িয়াছে যে, উহা লিখিবার প্রায়ই সময় নাই না, তবে আশা করি, সময়ে শেষ করিয়া তুলিতে পারিব। কাকা, জ্যোতিষ পড়িতে আমি বড়ই আনন্দ অনুভব করি—এবং বহু দিবস হইতেই সাগ্রহে পড়িতেও আরম্ভ করিয়াছি। আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি একটু কষ্ট স্বীকার করিয়া আমার জন্ম তারিখ যথাযথ লিখিয়া পাঠান। আমি স্বহস্তে নিজের একটী ভাগ্যচক্র প্রস্তুত করিব মনস্থ করিয়াছি—তাহাতে আমার জন্মতিথি, নক্ষত্র ও গ্রহ উপগ্রহের যথাযথ স্থান নির্দ্দেশ করিয়া রাখিব। সেই চক্রখানি থাকিলে ভারী বিপদ, পীড়া প্রভৃতির কথা পূর্ব্ব হইতে জ্ঞাত হইয়া সে গুলি সহজেই দূর করিতে পারিব। আমি অন্যান্য অনেক শাস্ত্র শিক্ষা করিয়াছি, এবং ঐ সকল শাস্ত্রের প্রকৃত তথ্যও জানিতে পারিয়াছি; কিন্তু আমি মিলাইয়া দেখিতে চাই যে, জ্যোতিষ ফলের সহিত সে গুলির ঐক্য হয় কি না। সামুদ্রিক ও অন্যান্য লাক্ষণিক বিদ্যাবলে আমি জানিতে পারিয়াছি যে, বৃহস্পতি, মঙ্গল, শুক্র ও চন্দ্র আমার সাতিশয় বলবান। চন্দ্রের বলে আমাকে এত কাল্পনিক করিয়াছে এবং আমায় জলাযাত্রার হেতুভুত হইয়াছে। শুক্রের বলে আমি মনোমত কার্য্যসিদ্ধি করিতে পারিতেছি—কল্পিত বিষয়গুলিকে কার্য্যে পরিণত করিবার উপযোগী ক্ষমতা ও বিদ্যালাভ করিয়াছি। মঙ্গল আমাকে সৈনিকের সাহস ও হঠকারিতা প্রদান করিয়াছে এবং বৃহস্পতির প্রভাবে অনেকগুলি স্ত্রীলোকের সহিত আমার পরিচয় হইয়াছে। আমি ইহাও জানি যে, বুধ, শনি, সূর্য্য প্রভৃতি অন্যান্য গ্রহগণেরও অল্পাধিক আমার উপর দৃষ্টি আছে; তবে তাহাদের ফলাফল জানিবার জন্য আমি সাতিশয় উৎসুক এবং তজ্জন্য তাহাদের স্থান নির্ণয় আবশ্যক। কাকা, আপনি ত জানেন যে, ইউরোপ পর্য্যটনের সময় ইউরোপের সর্ব্বাগ্রগণ্য অধ্যাপকদিগের নিকট আমি এই সকল শাস্ত্রের অনুশীলন করি, ভবিষ্যতে তাঁহাদের নাম ধাম আপনাকে জানাইব। কিন্তু ভগবৎ প্রসাদে যদি বাঁচিয়া থাকি, তাহা হইলে সম্মোহন তত্ত্ব এবং অন্যান্য গূঢ় বিজ্ঞানগুলি আমি সম্যকরূপে অধ্যয়ন করিব—সেই সকল বিষয়ে অধিকতর ব্যুৎপত্তি লাভ করিব। এই সকল বিদ্যাবলেই ত আমাদের ভারতবর্ষীয় প্রাচীন মনস্বীগণ সর্ব্বলোক-আরাধ্য নির্ব্বাণ লাভ করিতেন এবং অদ্যাপি সন্ন্যাসীরা নানাবিধ অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ সাধিত করিয়া থাকেন;—ভূগর্ভে ইচ্ছামত বাস, মুহূর্ত্ত মধ্যে বীজ হইতে বৃক্ষোদ্গম ও তাহা হইতে ফলোৎপাদন প্রভৃতি অলৌকিক কার্য্য ইহারই ফলে। জানি না, এই সকল বিষয়ে আপনার মনোভাব কিরূপ, ২১৮ লেফটেন্যান্ট সুরেশ বিশ্বাস -sa avu fuqu u tifacts Vertenti vèvvy Vittu friv at LLLLg DDD DDD LDDDDD DD DBDDD DBD DBBBi vko utsko ots, vstoj tcu, tav not at tvu sko frrsic fict vfan vit'Ricv StTri fr | vs að pকলে আপনার বিশ্বাস না থাকে তাহা হইলে আবাদিগের हुक्म जूतकृत्रिक बन e गवान शicड १थ थगनन कविर। LLiiSS DDB D DBBD DDS DBDB BD ਇਸ चांश्न-ांौवििक ना इऐगs बांनगिक्ष्ड् ኔዶ हैं. वैश्वि चित्र बनिदृढ श्रांत्रिण चांत्रिं ऍारांव्र cकांनVyf vyfts off || Vf rifà a ffà. ፲፱፻፷ማkሚሻ কি না; তজনাই আমি উহাকে পত্র লিখি š As |ांब जानक९ण बूक चांबांप्रु नंबप्रांप्नं बिखांगा ঠুইয়াছেন যে, ব্ৰেজিলে আসিবার কোনও উপায় আছে မြို့ဧet LLLLLDDD DBDBDBD LTBDBLBDD DD DDDS गन बानरेटरन। ५ ማዘማቫu daxማ, 'Gr