শিশু ভোলানাথ/মর্তবাসী
মর্তবাসী
কাক বলেন, সময় হলে
সবাই চ’লে
যায় কোথা সেই স্বৰ্গপারে
বল্ তো, কাকী,
সত্যি তা কি
একেবারে?
তিনি বলেন যাবার আগে
তন্দ্রা লাগে,
ঘণ্টা কখন ওঠে বাজি—
দ্বারের পাশে
তখন আসে
ঘাটের মাঝি।
বাবা গেছেন এম্নি করে
কখন ভোরে,
তখন আমি বিছানাতে।
তেম্নি মাখন
গেল কখন
অনেক রাতে।
কিন্তু আমি বলছি তোমায়,
সকল সময়
তোমার কাছেই করব খেলা;
রইব জোরে
গলা ধ’রে
রাতের বেলা।
সময় হলে মানব না তো,
জানব না তো
ঘণ্টা মাঝির বাজল কবে।
তাই কি রাজা
দেবেন সাজা
আমায় তবে?
তোমরা বলো স্বৰ্গ ভালো—
সেথায় আলো
রঙে রঙে আকাশ রাঙায়,
সারা বেলা
ফুলের খেলা
পারুলডাঙায়!
হোক-না ভালো যত ইচ্ছে—
কেড়ে নিচ্ছে
কেই-বা তাকে বলো কাকী?
যেমন আছি
তোমার কাছেই
তেম্নি থাকি!
ওই আমাদের গোলাবাড়ি,
গোরুর গাড়ি
পড়ে আছে চাকা-ভাঙা,
গাবের ডালে
পাতার লালে
আকাশ রাঙা।
সেথা বেড়ায় যক্ষীবুড়ি
গুড়িগুড়ি
আস্শেওড়ার ঝোপে-ঝাপে—
ফুলের গাছে
দোয়েল নাচে,
ছায়া কাঁপে।
নুকিয়ে আমি সেথা পলাই,
কানাই বলাই
দু ভাই আসে পাড়ার থেকে।
ভাঙা গাড়ি
দোলাই নাড়ি
ঝেঁকে ঝেঁকে।
সন্ধ্যেবেলায় গল্প ব’লে
রাখ কোলে,
মিট্মিটিয়ে জ্বলে বাতি।
চালতা-শাখে
পেঁচা ডাকে,
বাড়ে রাতি।
স্বর্গে যাওয়া দেব ফাঁকি
বলছি কাকী—
দেখব আমায় কে কী করে।
চিরকালই
রইব খালি
তোমার ঘরে।