আটাশ

তুমি প্রভাতের শুকতারা
আপন পরিচয় পালটিয়ে দিয়ে
কখনাে বা তুমি দেখা দাও
গােধূলির দেহলিতে,
এই কথা বলে জ্যোতিষী।
সূর্যাস্তবেলায় মিলনের দিগন্তে
রক্ত অবগুণ্ঠনের নীচে
শুভদৃষ্টির প্রদীপ তােমার জ্বাল
সাহানার সুরে।
সকালবেলায় বিরহের আকাশে
শূন্য বাসরঘরের খােলা দ্বারে
ভৈরবীর তানে লাগাও
বৈরাগ্যের মূৰ্ছনা।
সুপ্তিসমুদ্রের এ পারে ও পারে
চিরজীবন
সুখদুঃখের আলােয় অন্ধকারে
মনের মধ্যে দিয়েছ
আলােকবিন্দুর স্বাক্ষর
যখন নিভৃত পুলকে রােমাঞ্চ লেগেছে মনে
গোপনে রেখেছ তার 'পরে

সুলােকের সম্মতি,
ইন্দ্রাণীর মালার একটি পাপড়ি-
তােমাকে এমনি করেই জেনেছি
আমাদের সকালসন্ধ্যার সােহাগিনী।

পণ্ডিত তােমাকে বলে শুক্রগ্রহ;
বলে, আপন সুদীর্ঘ কক্ষে
তুমি বৃহৎ, তুমি বেগবান
তুমি মহিমান্বিত;
সুর্যবন্দনার প্রদক্ষিণপথে
তুমি পৃথিবীর সহযাত্রী,
রবিরশ্মিগ্রথিত দিনরত্নের মালা
দুলছে তােমার কণ্ঠে।

যে মহাযুগের বিপুল ক্ষেত্রে
তােমার নিগূঢ় জগদব্যাপার
সেখানে তুমি স্বতন্ত্র, সেখানে সুদূর,
সেখানে লক্ষকোটি বৎসর
আপনার জনহীন রহস্যে তুমি অবগুষ্ঠিত।
আজ আসন্ন রজনীর প্রান্তে
কবিচিত্তে যখন জাগিয়ে তুলেছ
নিঃশব্দ শান্তিবাণী

সেই মুহুর্তেই
আমাদের অজ্ঞাত ঋতুপর্যায়ের আবর্তন
তােমার জলে স্থলে বাষ্পমণ্ডলীতে
রচনা করছে সৃষ্টিবৈচিত্র্য।
তােমার সেই একেশ্বর যজ্ঞে
আমাদের নিমন্ত্রণ নেই,
আমাদের প্রবেশদ্বার রুদ্ধ।

হে পণ্ডিতের গ্রহ,
তুমি জ্যোতিষের সত্য
সে কথা মানবই,
সে সত্যের প্রমাণ আছে গণিতে।
কিন্তু এও সত্য, তার চেয়েও সত্য,
যেখানে তুমি আমাদেরই
আপন শুকতারা, সন্ধ্যাতারা-
যেখানে তুমি ছােটো, তুমি সুন্দর-
যেখানে আমাদের
হেমন্তের শিশিরবিন্দুর সঙ্গে তােমার তুলনা,
যেখানে শরতের শিউলি ফুলের উপমা তুমি-
যেখানে কালে কালে
প্রভাতে মানবপথিককে.
নিঃশব্দে সংকেত করেছ

জীবনযাত্রার পথের মুখে,
সন্ধ্যায় ফিরে ডেকেছ
চরম বিশ্রামে।