শেষ সপ্তক/ঊনত্রিশ
উনত্রিশ
অনেক কালের একটিমাত্র দিন
কেমন করে বাঁধা পড়েছিল
একটা কোনাে ছন্দে, কোনাে গানে,
কোনাে ছবিতে।
কালের দূত তাকে সরিয়ে রেখেছিল
চলাচলের পথের বাইরে।
যুগের ভাসান-খেলায়
অনেক কিছু চলে গেল ঘাট পেরিয়ে,
সে কখন ঠেকে গিয়েছিল বাঁকের মুখে
কেউ জানতে পারে নি।
মাঘের বনে
আমের কত বােল ধরল,
কত পড়ল ঝরে;
ফাল্গুনে ফুটল পলাশ,
গাছতলার মাটি দিল ছেয়ে;
চৈত্রের রৌদ্রে আর সর্ষের খেতে
কবির লড়াই লাগল যেন
মাঠে আর আকাশে।
আমার সেই আটকে-পড়া দিনটির গায়ে
কোনাে ঋতুর কোনাে তুলির
চিহ্ন লাগে নি।
একদা ছিলেম ওই দিনের মাঝখানেই।
দিনটা ছিল গা ছড়িয়ে
নানা-কিছুর মধ্যে;
তারা সমস্তই ঘেঁষে ছিল আশে পাশে সামনে
তাদের দেখে গেছি সবটাই,
কিন্তু চোখে পড়ে নি সমস্তটা।
ভালাে বেসেছি,
ভালাে করে জানি নি
কতখানি বেসেছি।
অনেক গেছে ফেলাছড়া;
আনমনার রসের পেয়ালায়
বাকি ছিল কত।
সেদিনের যে পরিচয় ছিল আমার মনে
আজ দেখি তার চেহারা অন্য ছাঁদের।
কত এলােমেলাে, কত যেমন-তেমন
সব গেছে মিলিয়ে।
তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়েছে যে
তাকে আজ দূরের পটে দেখছি যেন
সেদিনকার সে নববধু।
তনু তার দেহলতা,
ধূপছায়া রঙের আঁচলটি
মাথায় উঠেছে খোঁপাটুকু ছাড়িয়ে।
ঠিকমতাে সময়টি পাই নি
তাকে সব কথা বলবার,
অনেক কথা বলা হয়েছে যখন-তখন,
সে-সব বৃথা কথা।
হতে হতে বেলা গেছে চলে।
আজ দেখা দিয়েছে তার মূর্তি-
স্তব্ধ সে দাঁড়িয়ে আছে
ছায়া-আলাের বেড়ার মধ্যে;
মনে হচ্ছে কী একটা কথা বলবে,
বলা হল না;
ইচ্ছে করছে ফিরে যাই পাশে,
ফেরার পথ নেই।