ত্রিশ

যখন দেখা হল
তার সঙ্গে চোখে চোখে
তখন আমার প্রথম বয়েস;
সে আমাকে শুধালাে-
‘তুমি খুঁজে বেড়াও কাকে?'

আমি বললেম,
‘বিশ্বকবি তাঁর অসীম ছড়াটা থেকে
একটা পদ ছিঁড়ে নিলেন কোন্ কৌতুকে,
ভাসিয়ে দিলেন
পৃথিবীর হাওয়ার স্রোতে—
যেখানে ভেসে বেড়ায়
ফুলের থেকে গন্ধ,
বাঁশির থেকে ধ্বনি।
ফিরছে সে মিলের পদটি পাবে ব'লে;
তার মৌমাছির পাখায় বাজে
খুঁজে বেড়াবার নীরব গুঞ্জরণ।'

শুনে সে রইল চুপ করে
অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে।

আমার মনে লাগল ব্যথা;
বললেম, 'কী ভাবছ তুমি?'

ফুলের পাপড়ি ছিঁড়তে ছিঁড়তে সে বললে,
‘কেমন করে জানবে তাকে পেলে কি না,
তােমার সেই অসংখ্যের মধ্যে
একটিমাত্রকে?'

আমি বললেম,
‘আমি যে খুঁজে বেড়াই
সে তাে আমার ছিন্ন জীবনের
সব চেয়ে গােপন কথা;
ও কথা হঠাৎ আপনি ধরা পড়ে
যার আপন বেদনায়,
আমি জানি
আমার গােপন মিল আছে তারই ভিতর।'

কোনাে কথা সে বলল না।
কচি শ্যামল তার রঙটি;
গলায় সরু সােনার হারগাছি,
শরতের মেঘে লেগেছে
ক্ষীণ রােদের রেখা।

চোখে ছিল
একটা দিশাহারা ভয়ের চমক,
পাছে কেউ পালায় তাকে না বলে।
তার দুটি পায়ে ছিল দ্বিধা,
ঠাহর পায় নি
কোন্‌খানে
সীমা তার আঙিনাতে।

দেখা হল।
সংসারে আনাগােনার পথের পাশে
আমার প্রতীক্ষা ছিল
শুধু ওইটুকু নিয়ে।

তার পরে সে চলে গেছে।