শেষ সপ্তক/উনিশ
উনিশ
তখন বয়স ছিল কাঁচা;
কত দিন মনে মনে এঁকেছি নিজের ছবি-
বুনাে ঘােড়ার পিঠে সওয়ার,
জিন নেই, লাগাম নেই,
ছুটেছি ডাকাত-হানা মাঠের মাঝখান দিয়ে
ভর-সন্ধেবেলায়
ঘােড়ার খুরে উড়েছে ধুলাে,
ধরণী যেন পিছু ডাকছে আঁচল দুলিয়ে।
আকাশে সন্ধ্যার প্রথম তারা,
দূরে মাঠের সীমানায় দেখা যায়
একটিমাত্র ব্যগ্র বিরহী আলাে একটি কোন্ ঘরে
নিদ্রাহীন প্রতীক্ষায়।
যে ছিল ভাবীকালে
আগে হতে মনের মধ্যে
ফিরছিল তারই আবছায়া,
যেমন ভাবী আলাের আভাস আসে
ভােরের প্রথম কোকিল-ডাকা অন্ধকারে।
তখন অনেকখানি সংসার ছিল অজানা,
আধোজানা
তাই অপরূপের রাঙা রঙটা
মনের দিগন্ত রেখেছিল রাঙিয়ে;
আসন্ন ভালােবাসা
এনেছিল অঘটন-ঘটনার স্বপ্ন।
তখন ভালােবাসার যে কল্পরূপ ছিল মনে
তার সঙ্গে মহাকাব্যযুগের
দুঃসাহসের আনন্দ ছিল মিলিত।
এখন অনেক খবর পেয়েছি জগতের;
মনে ঠাওরেছি,
সংসারের অনেকটাই মার্কামারা খবরের
মালখানা।
মনের রসনা থেকে
অজানার স্বাদ গেছে মরে,
অনুভবে পাই নে—
ভালােবাসায় সম্ভবের মধ্যে
নিয়তই অসম্ভব,
জানার মধ্যে অজানা,
কথার মধ্যে রূপকথা।
ভুলেছি প্রিয়ার মধ্যে আছে সেই নারী
যে থাকে সাত সমুদ্রের পারে;
সেই নারী আছে বুঝি মায়ার ঘুমে,
যার জন্যে খুঁজতে হবে সােনার কাঠি।