শেষ সপ্তক/একচল্লিশ

একচল্লিশ

হালকা আমার স্বভাব,
মেঘের মতাে না হোক
গিরিনদীর মতাে।
আমার মধ্যে হাসির কলরব
আজও থামল না।
বেদীর থেকে নেমে আসি,
রঙ্গমঞ্চে বসে বাঁধি নাচের গান,
তার বায়না নিয়েছি প্রভুর কাছে।
কবিতা লিখি,
তার পদে পদে ছন্দের ভঙ্গিমায়
তারুণ্য ওঠে মুখর হয়ে,
ঝিঁঝিট খাম্বাজের ঝংকার দিতে
আজও সে সংকোচ করে না।

আমি সৃষ্টিকর্তা পিতামহের
রহস্যসখা।
তিনি অর্বাচীন নবীনদের কাছে
প্রবীণ বয়সের প্রমাণ দিতে
ভুলেই গেছেন।

তরুণের উচ্ছূঙ্খল হাসিতে
উতরােল তাঁর কৌতুক,
তাদের উদ্দাম নৃত্যে
বাজান তিনি দ্রুত তালের মৃদঙ্গ।
তাঁর বজ্রমন্দ্রিত গাম্ভীর্য মেঘমেদুর অম্বরে,
অজস্র তাঁর পরিহাস
বিকশিত কাশবনে,
শরতের অকারণ হাস্যহিল্লোলে।
তাঁর কোনাে লােভ নেই
প্রধানদের কাছে মর্যাদা পাবার;
তাড়াতাড়ি কালাে পাথর চাপা দেন না
চাপল্যের ঝরনার মুখে।
তাঁর বেলাভূমিতে
ভঙ্গুর সৈকতের ছেলেমানুষি
প্রতিবাদ করে না সমুদ্রের।
আমাকে চান টেনে রাখতে তার বয়স্যদলে;
তাই আমার বার্ধক্যের শিরােপা
হঠাৎ নেন কেড়ে,
ফেলে দেন ধুলােয়-
তার উপর দিয়ে নেচে নেচে
চলে যায় বৈরাগী,
পাঁচ-রঙের-তালি-দেওয়া আলখাল্লা প'রে।

যারা আমার মূল্য বাড়াতে চায়,
পরায় আমাকে দামি সাজ,
তাদের দিকে চেয়ে
তিনি ওঠেন হেসে-
ও সাজ আর টিকতে পায় না
আনমনার অনবধানে।

আমাকে তিনি চেয়েছেন
নিজের অবারিত মজলিসে-
তাই ভেবেছি, যাবার বেলায় যাব
মান খুইয়ে,
কপালের তিলক মুছে,
কৌতুকে রসােল্লাসে।
এসাে আমার অমানী বন্ধুরা
মন্দিরা বাজিয়ে-
তােমাদের ধুলাে-মাখা পায়ে
যদি ঘুঙর বাঁধা থাকে
লজ্জা পাব না।