সাত

অনেক হাজার বছরের
মরুযবনিকার আচ্ছাদন
যখন উৎক্ষিপ্ত হল,
দেখা দিল তারিখ-হারানাে লােকালয়ের
বিরাট কঙ্কাল-
ইতিহাসের অলক্ষ্য অন্তরালে
ছিল তার জীবনক্ষেত্র।
তার মুখরিত শতাব্দী
আপনার সমস্ত কবিগান
বাণীহীন অতলে দিয়েছে বিসর্জন।
আর, যে-সব গান তখনাে ছিল অঙ্কুরে, ছিল মুকুলে,
যে বিপুল সম্ভাব্য
সেদিন অনালােকে ছিল প্রচ্ছন্ন,
অপ্রকাশ থেকে অপ্রকাশেই গেল মগ্ন হয়ে-
যা ছিল অপ্রজ্বল ধোওয়ার গােপন আচ্ছাদনে
তাও নিবল।
যা বিকোলে, আর যা বিকোলাে না,
দুই সংসারের হাট থেকে গেল চলে
একই মূল্যের ছাপ নিয়ে।

কোথাও রইল না তার ক্ষত,
কোথাও বাজল না তার ক্ষতি।

ওই নির্মল নিঃশব্দ আকাশে
অসংখ্য কল্প-কল্লাস্তরের
হয়েছে আবর্তন।
নূতন নূতন বিশ্ব
অন্ধকারের নাড়ী ছিঁড়ে
জন্ম নিয়েছে আলােকে,
ভেসে চলেছে আলােড়িত নক্ষত্রের ফেনপুঞ্জে,
অবশেষে যুগান্তে তারা তেমনি করেই গেছে
যেমন গেছে বর্ষণশান্ত মেঘ,
যেমন গেছে ক্ষণজীবী পতঙ্গ।

মহাকাল, সন্ন্যাসী তুমি।
তােমার অতলস্পর্শ ধ্যানের তরঙ্গ-শিখরে
উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে সৃষ্টি,
আবার নেমে যাচ্ছে ধ্যানের তরঙ্গতলে।
প্রচণ্ড বেগে চলেছে ব্যক্ত-অব্যক্তের চক্রনৃত্য,
তারই নিস্তব্ধ কেন্দ্রস্থলে
তুমি আছ অবিচলিত আনন্দে।
হে নিমম, দাও আমাকে তােমার ওই সন্ন্যাসের দীক্ষা

জীবন আর মৃত্যু, পাওয়া আর হারানাের মাঝখানে
যেখানে আছে অক্ষুব্ধ শান্তি
সেই সৃষ্টি-হােমাগ্নিশিখার অন্তরতম
স্তিমিত নিভৃতে
দাও আমাকে আশ্রয়।

১৯ চৈত্র ১৩৪১