ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা/২৬
২৬
ছয় মাস কারাবাসের পর নিঃশর্ত মুক্তি লাভ করে যতীন্দ্রমোহন এবং সঙ্গীরা জেল থেকে বেরোলে কংগ্রেসি কর্মীরা দলবদ্ধ ভাবে এলেন তাঁদের বরণ করতে। সবার সামনে মালা হাতে সভাপতি কামিনীকুমার চন্দ মশাই। তাছাড়াও অঘোরনাথ চক্রবর্তী, কামিনী নাথ, নসিব আলি মজুমদার, কাজি রহমান বক্স, মৌলবি আব্দুল মুছব্বি, ধীরেন্দ্র চক্রবর্তী, উপেন্দ্রশঙ্কর দত্ত, হরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, ধীরু দেব, হেমচন্দ্র দত্ত, নিশিকান্ত চৌধুরী প্রভৃতি বিশিষ্টজন ছাড়াও অগণিত জনতা কেন্দ্রীয় কারাগারের দরজা থেকে ফাটকবাজার পর্যন্ত মিছিলে সামিল হলেন। এখন আর বন্দেমাতরম বা মহাত্মা গান্ধির জয়ধ্বনি দিতে কারো মনে কোন ভীতি কাজ করছে না।
বিকেল বেলা নিজ গ্রামে পৌঁছলে সেখানেও আরেক ধুন্ধুমার কাণ্ড দুপুর থেকে প্রস্তুত নলিনীকান্ত চক্রবর্তী, বারীন্দ্র চক্রবর্তী, নৃপেন্দ্র চক্রবর্তী, সূর্যকুমার আর সরোজকুমার ভ্রাতৃদ্বয়, সারদা দেশমুখ্য, অবন্তী শর্মা, গিরিশ দাস, কামেশ্বর বর্মন, রামমোহন বর্মন, রাম নরেশ তেলি, রামনন্দন তেলি। হাজির হয়েছেন হবিবুর রহমান, মুজম্মিল মাস্টর, মুন্সি গোলাম রব্বানি, গুলেজার আলি, আকলু মিঞা, রাজিদ আলি, ওয়াজিদ আলি বড়ভূঁইয়া, আরব আলি মৌলবি, হাজি জায়ফর আলি, মজিদ আলি মজুমদার। বুড়িবাইল থেকে সাইকেল মেরে এসেছেন হুরমৎ আলি বড়লস্কর, সোনাপুর থেকে কালু মিঞা। ধুমকর, বিজয়পুর, ডলু ঝেঁটিয়ে এলেন সুরেশ বর্মন, প্রকাশ বর্মন, যজ্ঞ বর্মন, মনীন্দ্র বর্মন, কালীসদয় বর্মন, রুক্ষিণী বর্মন। জারৈলতলা, ভিতর গঙ্গাপুর, পাঞ্জিগ্রামের মণিপুরি সম্প্রদায় এসেছে তাঁদের চিরাচরিত সাদা পোশাক পরে। গ্রামের অভয় মালিরা পাড়া ঝেঁটিয়ে এসেছে, বিপিনবাবুর বসম্বদ ভূঁইয়াপট্টির কুলিরা একেবারে পরবের সাজে মাদল বাজিয়ে উপস্থিত। ভাগিনা জীতেন্দ্র, কনিষ্ঠ ভ্রাতা যামিনীমোহন, ভ্রাতুষ্পুত্র বিনয়চন্দ্র, সোনাপুরের নাতি হরেন্দ্র সেন, অবনী সেন — এই বালকদের ব্যস্ততার শেষ নেই।
জাটিঙ্গামুখে দুপুর থেকে উৎসাহীরা অপেক্ষমান। গান্ধীজির জয়, বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে মিছিল বাড়ির উঠানে এলে মেয়েদের উলুধ্বনি, ধামাইল গীতে একেবারে উৎসবের পরিবেশ। বৃদ্ধ পিতার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে ঝরছে আনন্দাশ্রু। দিদি ব্রহ্মময়ী আজ দশভূজা। হাতে বিরাট পানের বাটা, কণ্ঠে স্বদেশি গীত। এরই মাঝে সবাইকে আপ্যায়নও চলছে। একাদশীর চাঁদ সারাবাড়িতে বিছিয়ে দিল আবছা রূপালি আচ্ছাদন। ক্লান্ত যতীন্দ্রমোহনের জন্য ঘরে ঔৎসুক্যচিত্তে বসে আছেন একজন, ওদিকে যাবার কোন অবকাশই হচ্ছে না। কনিষ্ঠ ভ্রাতা দাদাকে কানে কানে কী যেন বলে গেলে তিনি হঠাৎ একটু চঞ্চল হয়ে উঠলেন।