সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা/সমাস

সমাস।

 বিভক্তিহীন শব্দকে নাম কহে। ঐ নাম বিভক্তিযুক্ত হইলে তাহাকে পদ বলা যায়। বৃক্ষ, গিরি, পশু, ভ্রাতৃ এই সকল শব্দে বিভক্তি যোগ হয় নাই; ইহাদিগকে এই অবস্থায় নাম বলে। বৃক্ষঃ, বৃক্ষৌ, বৃক্ষাঃ; গিরিঃ, গিরী, গিরয়ঃ; পশুঃ, পশূ, পশবঃ; ভ্রাতা, ভ্রাতরৌ, ভ্রাতরঃ; এই সকল শব্দ বিভক্তিযুক্ত হইয়াছে, অতএব ইহাদিগকে এক্ষণে নাম না বলিয়া পদ বলে।

 প্রত্যেক পদের অন্তেই এক এক বিভক্তি আছে। কিন্তু কখন কখন দুই তিন পদ একত্র করা যায়; তখন কেবল শেষের পদটিতেই বিভক্তি থাকে, পূর্ব্ব পূর্ব্ব পদে বিভক্তি থাকে না। যথা; সুশীলবালকঃ। পূর্ব্বে সুশীলঃ বালকঃ এই রূপ ছিল; কিন্তু দুই পদ একত্র যোগ করাতে সুশীলবালকঃ হইল। যোগ হইল বলিয়া, সুশীল পদে বিভক্তি নাই; বালক পদ শেষে আছে বলিয়া কেবল তাহাতেই বিভক্তি রহিল। এই রূপ দুই অথবা অনেক পদ একত্র যোগ করাকে সমাস কহে। সমাস ছয় প্রকার; কর্ম্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব।


কর্ম্মধারয়।

 বিশেষণ ও বিশেষ্য পদের যে সমাস তাহার নাম কর্ম্মধারয়। যথা; উন্নতঃ তরুঃ, উন্নততরুঃ। নীলম্‌ উৎপলম্‌, নীলোৎপলম্‌। গভীরঃ কূপঃ, গভীরকূপঃ। সুন্দরঃ পুরুষঃ, সুন্দরপুরুষঃ।

 যদি বিশেষণ ও বিশেষ্য স্ত্রীলিঙ্গ হয়, তাহা হইলে বিশেষণ শব্দ পুংলিঙ্গের মত হইয়া যায়; অর্থাৎ আকার ঈকার প্রভৃতি স্ত্রীলিঙ্গের যে চিহ্ন তাহা থাকে না। যথা; দীর্ঘা যষ্টিঃ দীর্ঘ যষ্টিঃ। জীর্ণা তরিঃ, জীর্ণতরিঃ। সতী প্রবৃত্তিঃ, সৎপ্রবৃত্তিঃ।


তৎপুরুষ।

যেখানে পূর্ব্বপদ দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী ইহার মধ্যে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়, আর পর পদ প্রথমা বিভক্তিযুক্ত; তাহাকে তৎপুরুষ সমাস কহে। যথা; গৃহং গতঃ গৃহগতঃ। লোভেন জিতঃ, লোভজিতঃ। ধনায় লোভঃ, ধনলোভঃ। সর্পাৎ ভয়ম্‌, সর্পভয়ম্‌। বৃক্ষস্য শাখা, বৃক্ষশাখা। পুরুষেষু উত্তমঃ, পুরুষোত্তমঃ।


দ্বন্দ্ব।

পরস্পর বিশেষ্য বিশেষণ নয় এরূপ প্রথমা বিভক্তি যুক্ত দুই অথবা বহু পদের যে সমাস তাহার নাম দ্বন্দ্ব। যদি দুই পদে দ্বন্দ্ব সমাস হয়, তাহা হইলে শেষের পদ দ্বিবচনান্ত হয়। আর বহু পদে দ্বন্দ্ব হইলে শেষের পদ বহুবচনান্ত হয়। শেষের শব্দের যে লিঙ্গ দ্বন্দ্ব সমাস করিলে সেই লিঙ্গ থাকে। যথা; রামঃ লক্ষ্মণঃ, রামলক্ষ্মণৌ। ভীমঃ অর্জ্জুনঃ, ভীমার্জ্জুনৌ। নদী পর্ব্বতঃ, নদীপর্ব্বতৌ। ফলং পুষ্পং, ফলপুষ্পে। কন্দঃ মূলং ফলং, কন্দমূলফলানি। রূপং রসঃ গন্ধঃ স্পর্শঃ শব্দঃ, রূপরসগন্ধস্পর্শশব্দাঃ। ইহার নাম ইতরেতর দ্বন্দ্ব।

 কখন কখন দ্বন্দ্ব সমাস করিলে শেষের শব্দ, যে লিঙ্গের হউক না কেন, ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত হইয়া যায়। ইহাকে সমাহার দ্বন্দ্ব কহে। যথা, হংসঃ কোকিলঃ, হংসকোকিলম্‌। পাণী পাদৌ, পাণিপাদম্‌।


বহুব্রীহি।

 যে কয়েক পদে সমাস করা যায় সেই কয়েক পদের যে অর্থ, তাহা না বুঝাইয়া অন্য বস্তু বা ব্যক্তি যেখানে বুঝায়, তাহাকে বহুব্রীহি সমাস কহে। সমাস কালে বহুব্রীহিতে যদ্‌ শব্দের এক পদ থাকে। যথা; দীর্ঘৌ বাহূ যস্য, দীর্ঘবাহুঃ। এই স্থলে দীর্ঘ দুই বাহু না বুঝাইয়া দীর্ঘবাহু বিশিষ্ট ব্যক্তি বুঝাইল। নির্ম্মলং জলং যস্যাঃ, নির্ম্মলজলা নদী। নির্ম্মল জল না বুঝাইয়া নির্ম্মল জল বিশিষ্ট নদী বুঝাইল।


 যদি দুই স্ত্রীলিঙ্গ পদে বহুব্রীহি সমাস হয় তাহা হইলে প্রায় পূর্ব্বপদ পুংলিঙ্গ হইয়া যায়; অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গের চিহ্ন আকার ঈকারাদি থাকে না। যথা; নির্ম্মলা মতির্যস্য; নির্ম্মলমতিঃ। মৃদ্বী গতি র্যস্য, মৃদুগতিঃ।


দ্বিগু।

 যাহাতে পূর্ব্বপদ এক দ্বি ত্রি ইত্যাদি সংখ্যা বাচক শব্দ ও যাহাতে সমাহার থাকে অর্থাৎ এক কালে অনেক বস্তু বোধ হয় উহাকে সমাহার দ্বিগু বলে। সমাহার ভিন্ন অন্য অর্থেও দ্বিগু হয়। সমাহার দ্বিগু করিলে কোন কোন স্থলে স্ত্রীলিঙ্গ ও ঈ হয়; কোন কোন স্থলে ক্লীবলিঙ্গ হয়। যথা; ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ, ত্রিলোকী। এস্থলে স্ত্রীলিঙ্গ ও ঈ হইল। ত্রিলোকী কহিলে এক কালে তিন লোকের বোধ হয়। ত্রয়াণাং ভুবানানাং সমাহারঃ, ত্রিভুবনম্‌।


অব্যয়ীভাব।

 সামীপ্য, বীপ্সা, অনতিক্রম, অভাব, পর্য্যন্ত ইত্যাদি অর্থে যে সমাস হয় তাহার নাম অব্যয়ী ভাব। যে কয়েক পদে সমাস হয় তন্মধ্যে প্রথম পদ অব্যয়শব্দ। সমাস করিলে, শেষের শব্দ যদি অকারান্ত হয়, তাহার রূপ পঞ্চমী ভিন্ন সকল বিভক্তিতেই অকারান্ত ক্লীবলিঙ্গ শব্দের প্রথমার এক বচনের ন্যায় হয়; আর তদ্ভিন্ন সর্ব্বত্র অব্যয় শব্দের ন্যায় হয়, অর্থাৎ কোন বিভক্তির চিহ্ন থাকে না। যথা; কূলস্য সমীপে, উপকূলম্‌। গৃহে গৃহে, প্রতিগৃহম্‌। শক্তিমনতিক্রম্য, যথাশক্তি। বিঘ্নস্য অভাবঃ নির্ব্বিঘ্নম্‌। সমুদ্রপর্য্যন্তম্‌, আসমুদ্রম্‌।