সচিত্র রেল অবতার/উল্টা বুঝলি রাম
উল্টা বুঝলি রাম।
ট্রেন্স ক্লার্ক-যোগেশ বাবু একখানা টেলিগ্রাম নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া কচ্ছিলেন, কিন্তু তার মানেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আজ ৭৷৮ বৎসর ধরে রেলে কাজ করে আসছেন, কিন্তু এমন অদ্ভুত রকমের টেলিগ্রাম কখনও তাঁর হস্তগত হয় নাই। রেলের টেলিগ্রামগুলো একঘেয়ে রকমের, তা’ বুঝে নিতে, বড় বিদ্যে বুদ্ধির দরকার হয় না। যে টেলিগ্রামটি তার হাতে ছিল, তা’র কিছু বিশেষত্ব না থাক্লেও, ভিতরে একটু গোলমাল ছিল। টেলিগ্রামটি এই:—
“Shooting camp of 5 5 the Moharaja of Cooch behar in wagon 4035 look out”
যোগেশ টেলিগ্রামটির ভাব বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু দুটো 5 দেবার কারণ কি, ও কি অর্থেই বা তা’ দেওয়া হয়েছে, সেটি তাঁর বুদ্ধিতে কুলিয়ে উঠছিল না। যোগেশবাবু একটু গম্ভীর স্বভাবের লোক; টেলিগ্রামটি যে বুঝ্তে পারেন নাই এ কথা সহজে প্রকাশ করবার পাত্র তিনি নন। বেশী সময় যাচ্ছে দেখে, তিনি আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। আফিসের আর আর লোক যারা ছিল, তা’দিকে ডেকে বল্লেন—“ওহে তোমরা এই টেলিগ্রামটা দেখ’ত, যদি কিছু মানে কর্ত্তে পার।”
যোগেশবাবু মানে কর্ত্তে পারেন নাই—এমন কি টেলিগ্রাম? আফিসের লোকেরা ত টেলিগ্রামটির উপর ঝুঁকে পড়্লেন। তারপর পড়ে দেখে, সবাই সমস্বরে বল্লেন—“কি রকম?”
যোগেশ বাবু হেসে বল্লেন—“ঐ দুটো 5 থেকেইত বিপদ ঘটিয়েছে—তা নইলে কি আমি টেলিগ্রামটার মানে বুঝতে পারি নাই?”
অপরাপর অনেক জল্পনা কল্পনা করলেন, কিন্তু কিছুই মীমাংসা করতে পারলেন না। সবাই বল্লেন—“রাজা রাজড়ার কাণ্ড—এই দুটো 5 এর কোন গৃঢ় মানে আছে। যোগেশবাবু যখন এত দিনের লোক হয়ে নিজেই বুঝতে পারেন নাই, তখন আমরা মুখ্য সুখ্যু লোক হয়ে বুঝতে যে না পার্ব, তার আর আশ্চর্য্য কি?”
যোগেশবাবু একটূ গম্ভীর হয়ে, টেলিগ্রামখানি নিয়ে তার-আফিসের দিকে গেলেন।
একটি দিব্যি ফুটফুটে, টেরি কাটা বাবু তার-আফিসে কাজ করছিল। বয়স মোটে ১৮৷১৯ বৎসর। সাজ গোজ দস্তুরমত বাবু ধরণের।
যোগেশবাবু গিয়ে বল্লেন—“ওহে গিরিজা এই Message টা তুমি নিয়েছিলে নাকি?”
গিরিজা টেলিগ্রাম খানি নিয়ে বলে—“হাঁ এটাত আমিই নিয়েছিলুম। কেন, হয়েছে কি?”
যোগেশবাবু বল্লেন—“তুমি এটা যেমন করে নিয়েছ তা'তে মানে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এই দুটো ৫ এখানে হবার অর্থ কি?”
গিরিজা। তা’ আমি কেমন করে ব’লব? আমাকে যেমন দিয়েছে তেমনি আমি লিখেছি—মানে টানে হয় কিনা, সে খোঁজে আমার দরকার কি? আপনি ত কখন তারে কাজ করেন নি— তা হলে বুঝতেন—টেলিগ্রামগুলো নেওয়া কত কষ্টের। এই মাত্র একটা টেলিগ্রাম দিচ্ছিল, তারমধ্যে একটা কথা আছে “ডাউঘ্যাটার”। আমি কতবার Repeat নিলুম, সে খালি বলে “ডাউঘ্যাটার,, আমি বিরক্ত হয়ে কল ছেড়ে দিয়ে চলে এলুম। দেখুন দেখি আমাদের কাজ করা কত হাঙ্গামের।
যোগেশবাবু নিজের টেলিগ্রামটির কথা ভুলে গেলেন। বিস্ময়ের সহিত বল্লেন—“ডাউঘ্যাটার”?
গিরিজা। হাঁ, মশায়। Spelling দিচ্ছিল—“Daughter"
যোগেশ বাবু বল্লেন—“গিরিজা নিশ্চয়ই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তা না হলে সামান্য একটা ইংরাজী কথা “ডটার” না বুঝতে পেরে—“ডাউঘ্যাটার”—“ডাউঘ্যাটার” ক’রচ?
গিরিজার তখন চৈতন্য হ’ল। সে মাথা চুলকে বল্লে—“আজ মাথাটা বাস্তবিকই বড় খারাপ হ’য়ে গেছে যোগেশ বাবু। আজ এসে অবধি একবারও হাঁফ জিরুতে পারি নাই। দেন আপনার টেলিগ্রাম খানা, একবার ভাল করে Repeat নিয়ে দেখি।”
যোগেশ। থাক্—থাক্, তোমাকে আর কষ্ট কর্তে হবে না। আসুন ইন্চার্জ বাবু—তিনি এলেই দেখা যাবে।
এই বলে যোগেশবাবু চলে গেলেন।”
ঘণ্টাখানেক পরেই, ইন্চার্জ বাবু ডিউটিতে এলেন। যোগেশ বাবু তাঁকে টেলিগ্রাম খানা দেখালে, তিনি বল্লেন— “আপনার গোলমাল বুঝি দুটো 5 নিয়ে?—
যোগেশ বাবু ঘাড় নেড়ে তাই জানালেন। ইন্চার্জ্জ বাবু হেসে বল্লেন—“ব্যাপারটা একটু গুরুতর রকমেরই হ’য়েছে। আপনারা তারের সঙ্কেত জানেন না কাজেই বুঝে উঠ্তে পারেন নাই—কিন্তু বলিহারী বুদ্ধি আমার গিরিজা ভায়ার!”
সেই সময়ে তার-অফিসে অনেক লোক জমে ছিল। ব্যাপারটা কি হ’য়েছে তা জানবার জন্য, সকলেই উৎসুক হয়ে ইনচার্জ্জ বাবুর মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
ইনচার্জ্জ বাবু বল্তে লাগ্লেন—“গিরিজা ভায়া আমাদের অফিসের বড় বাবুর সম্বন্ধী না হলে, যে কি কর্তেন, তা উনিই জানেন। এই দুটো 5 না হয়ে হবে—“H” অর্থাৎ—“H.H. the Moharaja of Cooch behar সঙ্কেতে “H” আর 5 মধ্যে বড় কিছু তফাৎ নাই। গিরিজা ভায়া 5 লিখেই সেরে দিয়েছেন—মানে হ’লো তার না হলো।”
অফিস শুদ্ধ লোক হো হো করে হাস্তে লাগল। “ডাউঘ্যাটার” কথাটাও জানতে ইনচার্জ্জ বাবুর বাকী থাক্ল না।
স্টেশনের নিকটেই একটা এণ্ট্রান্স স্কুল ও বোডিং ছিল। কি জানি কেমন করে তার-বাবুর ইংরাজী বিদ্যাটা ছেলেদের কাণে গিয়ে পৌঁছুল। তখনহতে পথে ঘাটে গিরিজাকে দেখ্তে পেলেই, একজন ছেলে চেঁচিয়ে ব’লত “ফাইভ্, ফাইভ্ দি মহারাজা অভ্ কুচবেহার! আর সবাই বলে উঠ্ত “হিপ, হিপ হুররে”।
গিরিজা টিক্তে না পেরে, বোনাই বড়বাবুকে বলে অন্য ষ্টেশনে বদলি হয়ে গেল।